(Manibandh Shakti Peeth in Bengali) মণিবন্ধ শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান কোন স্থানে? দেবী সতীর কোন অঙ্গ এখানে পতিত হয়েছে? মণিবন্ধ শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী কি? কিভাবে আরাধনা করা হয়? এই মন্দিরের তাৎপর্য কি? জানুন সবকিছু বিস্তারিত।
প্রতিটি দেব-দেবীদের মন্দির কোন না কোন ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার পেছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস ও পৌরাণিক কাহিনী। তবে দেবী সতীর ৫১ পীঠের কথা আমরা সকলেই কম বেশি জানি। দেবীর দেহ অংশ গুলি যে যে জায়গায় পড়েছিল সেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে এক একটি সতী পীঠ অথবা শক্তি পীঠ।
তেমনি একটি শক্তি পীঠ হল রাজস্থানের পুষ্করের কাছে গায়ত্রী পাহাড়ে অবস্থিত এই মনিবন্ধ শক্তি পীঠ। এই শক্তি পীঠ আজমির থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর- পূর্বে একটি জায়গায় অবস্থিত। যেখানে দেবীর দুই হাতের বালা পতিত হয়েছিল।
স্থানীয় মানুষ জন এই মন্দিরকে চামুণ্ডা মাতার মন্দির হিসাবেও চিহ্নিত করেন এবং ডেকে থাকেন। এখানে দেবীর নাম গায়ত্রী, মহাদেব হলেন সর্বানন্দ ভৈরব রূপে পূজিত হন। এছাড়া এখানে একটা কথা বলে রাখা জরুরী যে, নবরাত্রির সময় বিশাল বড় মেলা বসে এই শক্তি পীঠে।
মণিবন্ধ শক্তিপীঠ:
শক্তিপীঠের নাম | মণিবন্ধ শক্তিপীঠ |
স্থান | মণিবন্ধ, অজমের এর ১১ কি.মি. উত্তর-পশ্চিমে, পুষ্করের নিকট গায়ত্রী পর্বতে, রাজস্থান (লোকেরা এই মন্দিরটিকে চামুন্ডা মাতার মন্দির এবং শ্রী রাজ রাজেশ্বরী পুরুষহুত মানিবেদিক শক্তিপীঠ নামে পরিচিত।) |
দেশ | ভারত |
দেবীর অংশ | দুই হাতের বালা |
শক্তির নাম | গায়ত্রী |
মনিবন্ধ শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী:
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, সত্য যুগে প্রজাপতি ব্রহ্মার পুত্র মহারাজ দক্ষের কন্যা দেবী সতী তিনি মনে মনে স্থির করেন যে, দেবাদিদেব মহাদেব কে স্বামী রূপে বরণ করবেন। সেই সংকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে গভীর অরণ্যে তপস্যা শুরু করেন। তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব তার প্রার্থনা পূর্ণ করেন ও তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
কিন্তু মহারাজ দক্ষ মহাদেব কে কোনভাবেই নিজের জামাতা হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি। মহারাজ দক্ষ মহাদেব কে অপমান করার জন্য এক শিবহীন বৃহস্পতি যজ্ঞ এর আয়োজন করেন। সেই অনুষ্ঠানে শিব ও দেবী সতী ছাড়া সকল দেবতা ও তার অন্যান্য কন্যা জামাতা দের আমন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু মহর্ষি নারদ কোনো ভাবেই এই সংবাদ কৈলাসে গিয়ে দেবী পার্বতী ও মহাদেব কে জানিয়ে আসেন।
দেবী সতী পিতৃ গৃহে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে মহাদেব আপত্তি করেন যে, বিনা নিমন্ত্রনে সতীর যাওয়া সেখানে ঠিক হবে না। কিন্তু দেবী সতী তা কিছুতেই মানতে পারলেন না। তিনি অনুচর নন্দীকেশকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষ রাজার গৃহে অর্থাৎ সতীর পিতৃ গৃহে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
এদিকে পিতা মহারাজা দক্ষ সতীকে সামনে পেয়ে শিব নিন্দা শুরু করলে, দেবী সহ্য করতে না পেরে সেই যজ্ঞের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়ে আত্ম বিসর্জন দিয়ে দিলেন। এদিকে কৈলাসে স্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে খুবই ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন শিব, তৎক্ষণাৎ সেখানে উপস্থিত হয়ে একগাছি জটা ছিন্ন করে নিজের অংশ রূপে কালভৈরব বীর ভদ্রকে সৃষ্টি করলেন এবং দক্ষ মহারাজকে হত্যা করলেন।
এরপর শোকাচ্ছন্ন শিব কালভৈরব রূপে দেবী সতীর দগ্ধ মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে তান্ডব নৃত্য করতে করতে ভূমন্ডলে ভ্রমণ শুরু করেন। কিন্তু এই তান্ডব নৃত্য তে পৃথিবী তে শুরু হয় মহাপ্রলয়। মহাদেবকে শান্ত করতে না পারলে এই বিশ্বসংসার ধ্বংস হয়ে যাবে। আর সেই জন্য মহাদেবকে শান্ত করার জন্য বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহটি ৫১ টি খন্ডে বিভক্ত করে দেন।
দেবীর সেই দেহ খণ্ড গুলি যেখানে যেখানে পড়েছিল সেই সব স্থান সতী পীঠ হিসেবে সবার কাছে খুবই পবিত্র স্থান হয়ে উঠেছে। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস অনুসারে জানা যায় যে, শক্তি পীঠ গুলিতে দেবীর পরাশক্তি বিরাজ করে। দেবী তার ভৈরব সহ কালি, তারা, মহামায়া প্রভৃতি দশমহাবিদ্যার নামে ওই সমস্ত স্থানে অবস্থান করেন।
আজও ওই স্থান গুলিকে আদি শক্তি পীঠ, মহা শক্তি পীঠ, ও উপ শক্তি পীঠ রূপে বিবেচনা করা হয়। আর দেবীকেও তার ভৈরবকে বিভিন্ন রূপে পূজা অর্চনা করা হয়ে থাকে। তবে এই শক্তি পীঠ একটি উপশক্তি পীঠ, কেননা এখানে দেবীর কোন দেহের অংশ পতিত হয়নি। দেবীর গহনা অথবা অলংকার পতিত হয়েছিল। যা কিনা ছিল দেবীর দুই হাতের বালা। আবার অনেকের মত অনুসারে পুরুহুতা মনিবেদিক রাজরাজেশ্বরী শক্তি পীঠ নামেও অভিহিত করে থাকেন এই শক্তি পীঠকে।
সারা বছর ধরে চলে এখানে ভক্তদের সমাগম। এছাড়াও দুর্গাপূজা, কালীপূজা ও আরো অন্যান্য পূজা উপলক্ষে দেবীর আরাধনা হয় আরো বেশি জমকপূর্ণ ভাবে। তখন পুন্যার্থী ও ভক্তদের সমাগম চোখে পড়ার মতো। অনেক পর্যটকও আসেন এই স্থান ঘুরে দেখার জন্য। দেশ-বিদেশ থেকে ভক্তদের সমাগম ঘটে এই মন্দিরে।
যারা রাজস্থানের কাছাকাছি রয়েছেন, তাদের কাছে এই শক্তি পীঠ অনেকটাই কাছে হবে। আজমির থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর – পূর্বে পুষ্কর হ্রদের খুবই কাছে গায়ত্রী পর্বতে মনিবন্ধ তে এই মনিবন্ধ শক্তি পীঠ অবস্থিত। সেখানকার স্থানীয় জনগণ এই মন্দিরকে চামুন্ডা মাতার মন্দির বলে চিহ্নিত করেন, আর সেখানে নিত্য পূজা অর্চনা করতে যান।
পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই শক্তি পীঠ তে পৌঁছাতে আপনাকে কিছুটা কষ্ট করতে হলেও সেখানকার আশেপাশের পরিবেশ আর এই শক্তি পীঠের মাহাত্ম্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। দেবী সতী এখানে দেবাদিদেব মহাদেবের সাথে বিরাজ করছেন, আর সকলকে সুরক্ষিত রেখেছেন। বহু মানুষের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করার এই শক্তি পীঠ হল একটি অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান।