মধুর উপকারীতা সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষ পর্যন্ত মধু খেয়ে উপকার লাভ করে থাকেন। তাই আমরা অনেকেই নিয়মিত মধু খেতে চাই। কিছু মধু পাওয়া কষ্টসাধ্য হওয়ায় এবং বাজারের প্রচলিত মধু খাটি মধু কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকায় আমরা অনেক সময় সঠিক মধু কিনতে পারি না।
মজার ব্যপার হলো যে, এই মধু প্রাকৃতিক হলেও বর্তমানে মধু বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে অনেকেই বানিজ্যিকভাবে মধুচাষ করে উপার্জন করতে পারছে। শুধু ভারতেই নয় সারা বিশ্বব্যাপিই মধুর চাহিদা রয়েছে। ২০১৪ সালে সারা বিশ্বে ২.৩ মিলিয়ন ডলারের মধু রপ্তানি হয়েছে। মধুর বাজারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলি। তাই আমাদের দেশের চাষিদেরও মধু রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিতভাবে আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা জমি, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানলাভ করে থাকেন। জীবনের নানা প্রয়োজনের সময়ে এসকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে ফসলের সাথে মধু চাষ পদ্ধতি ও উপকারীতা নিয়ে আলোচনা করবো। এতে করে আপনারা সহজেই মধু চাষ সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং নিজের বাড়িতে মধু চাষ করে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে পারবেন।
আসুন জেনে নিই ফসলের সাথে মধু চাষের বিস্তারিত
আমরা সবাই জানি ফসলের পরাগায়নের জন্য মৌমাছি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখে থাকে। মধু পরাগায়ন করলে ফসল ভালো হয়। তাই বর্তমানে ফসলের মাঠে মৌমাছি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তি।
ফসলের মাঠে মৌমাছি চাষ করলে মৌমাছি ফসলের মাঠ ঘুরে ঘুরে শরীরে পরাগরেনু বয়ে বেড়ায়। পরাগরেনুর বিচরণের ফলে সহজেই পরাগায়ন ঘটে। এতে করে ফসল উৎপাদন প্রায় ১০-১৫ ভাগ বেড়ে যায়। সেই সাথে মৌমাছি হতে মধু ও মোম সংগ্রহ করা যায়। তাই ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও মধু, মোম বিক্রি হতে কৃষক ভালো আয় করতে পারে। এজন্য এই প্রক্রিয়াটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মধুর মাধ্যমে পুষ্টি অর্জন
মধু অনেক পুষ্টিকর হওয়ায় এটি মানুষের শরীরের নানা পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি পূরন করে থাকে। মধু মূলত শর্করা জাতীয় খাদ্য হলেও এতে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, এনজাইম ও খনিজ পদার্থ থাকে।
আমাদের শরীরের অনেক রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে মধু একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। মধুকে সব রোগের মহাঔষধ বলা হয়ে থাকে। তাই আমাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা পুরনে মধুর ভূমিকা অপরিসীম।
ফসলের মাঠে চাষের মাধ্যমে মানসম্পন্ন মধু পাওয়া যায়
সাধারণত মধু সংগ্রহের সময় চেপে চেপে সংগ্রহ করা হয়। এতে করে যেমন সম্পুর্ন মধু সংগ্রহ করা যায় না সেই সাথে মধুর সাথে মৌমাছির ডিম, মৌমাছি, বাচ্ছা আবর্জনাসহ মিশে যায়। অন্যদিকে পালন করা মৌমাছির বাক্স থেকে সহজেই যান্ত্রিক উপায়ে বিশুদ্ধ মধু সংগ্রহ করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হয়ে থাকে।
খাঁটি মধু চেনার উপায় কি?
খাঁটি মধু চেনার উপায় নিয়ে আমরা প্রায়ই বিভ্রান্তিতে পড়ে থাকি। খাঁটি মধু কয়েকটি প্রক্রিয়ায় চেনা যায়। মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। খাঁটি মধু জলের গ্লাসে ড্রপ কয়েক ফোঁটা ড্রপ আকারে ছাড়লে তা সরাসরি ড্রপ অবস্থায়ই গ্লাসের নিচে চলে যায়।
আবার, কয়েক ফোঁটা মধু একটি ব্লটিং পেপারে নিলে ব্লটিং পেপারে মধু শোষিত হবে না। ভেজাল মধু ব্লটিং পেপারকে আর্দ্র করে তোলে। এভাবে খুব সহজেই আমরা খাঁটি মধু চিনতে পারি।
মধুর উপকারীতা
আসুন দেখে নিই মধুর উপকারীতা কি কি
নিয়মিত বিশুদ্ধ মধু সেবনের মাধ্যমে নানা প্রকার রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
মধু চাষের মাধ্যমে বাড়তি আয় করা সম্ভব।
মধু আমাদের খাদ্যে পুষ্টিমান বৃদ্ধি ও উন্নয়ন ঘটাতে সাহায্য করে থাকে।
স্বাদ ও রুচির দিক থেকে খাদ্যের মান উন্নয়ন।
কৃষিভিত্তিক কুটির শিল্পের উন্নয়ন।
দেশজ সম্পদের ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান।
বনজ সম্পদের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ এবং পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষা।
ফল ও ফসলের সফল পরাগায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি।
আজ আমরা আপনাদের সাথে ফসলের মাঠে মধু চাষের সুবিধাগুলি আলোচনা করলাম। আগামীতে আপনাদের সাথে মৌমাছি চাষ নিয়ে আরো কিছু আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন।
এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকে এই লেখা থেকে শিক্ষা নিয়ে ফসলের মাঠে মধু চাষ করে আয় করার ব্যবস্থা করতে পারে।