করোনা ভাইরাস ইন্স্যুরেন্স – জানা দরকার এই ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে

সমগ্র পৃথিবীর কাছে করোনা ভাইরাস বা Covid-19 ভাইরাস এক ভয়ঙ্কর নাম। এই নামটা শুনলেই প্রত্যেকেই যেন আতঙ্কিত হয়ে উঠেন। 2019 সালের ডিসেম্বরে চীনে দেখা দেয়ার পর থেকে গোটা দুনিয়া যেন থমকে গেছে একটা নতুন সৃষ্ট ভাইরাসের জন্য।

দুনিয়ার মানুষ চিন্তায় আছে কিভাবে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এরই মাঝে ভারতের বীমা নিয়ন্ত্রক ও উন্নয়ন কর্তপক্ষ সংস্থা IRDAI (Insurance Regulatory and Development Association India) এগিয়ে এসেছে করোনা রোগীদের আর্থিক সুরক্ষা দিতে নতুন করোনা ইন্স্যুরেন্স পলিসি তৈরি করার ঘোষনা দিয়ে।

তারা ইতিমধ্যে ঘোষনা দিয়েছে যে, ভারতের সকল সাধারন বীমা ও স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানীকে 15ই জুনের মধ্যে করোনা ভাইরাস চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার কথা মাথায় রেখে নতুন হেলথ পলিসি চালু করতে হবে। বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী ইতিমধ্যে এই করোনা ভাইরাস কভার করার জন্য নানা নামে তাদের নতুন হেলথ পলিসির ঘোষনা দিয়েছে, আর এই বিশেষ ইন্স্যুরেন্স পলিসিগুলোকেই করোনা ভাইরাস ইন্স্যুরেন্স (Corona Insurance) বলে আক্ষ্যায়িত করা হচ্ছে। (Coronavirus Insurance: Know Everything About Coronavairus Insurance in Bengali)

বীমা নিয়ন্ত্রক ও উন্নয়ন কতৃপক্ষ IRDAI (Insurance Regulatory and Development Association India)  বীমা কোম্পানীগুলোকে কিছু শর্ত বেধে দিয়েছে। পাঠকদের সুবিধার্থে নিচে শর্তগুলি দেয়া হলোঃ
১) বয়সঃ 18 বছর থেকে 65 বছর। (তবে নির্ভরশীল 3 বছরের শিশুরা এর আওতায় আসবে)।
২) বীমা অংকঃ নূন্যতম 50,000 টাকা থেকে সর্বোচ্চ 5 লক্ষ টাকা।
৩) মেয়াদঃ প্রাথমিকভাবে পলিসির মেয়াদ হবে 1 বছর।
৪) কি কি খরচ পাবেঃ হাসপাতালের বিল সাথে সার্জন, অ্যানাস্থেসিস্ট, কনসালট্যান্ট এবং স্পেশালিস্টের জন্য হাসপাতালকে ফি দিতে হলে এবং রক্ত, অক্সিজেন, অপারেশন থিয়েটার চার্জ, ডায়াগনস্টিক এবং অন্যান্য সমস্ত ব্যয়।
৫) চিকিৎসা খরচঃ হাসপাতালে খরচ বাবদ প্রতিদিন মোট বীমা অংকে 2% অথবা 5000 টাকা।
৬) সময়কালঃ হাসপাতালে ভর্তি হবার 30 দিন আগের ও 30 দিন পরের সকল চিকিৎসা
 সংক্রান্ত বিল।
৭) প্রিমিয়ামঃ প্রিমিয়ামের হার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীগুলো নির্ধারন করবে। তবে প্রিমিয়ামের হার পুরো ভারতেই একই হতে হবে। অঞ্চলভেদে আলাদা প্রিমিয়াম নির্ধারন করা যাবে না।

এই পলিসি অনুযায়ী ভারতের অনেক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী তাদের বীমা প্যাকেজের তালিকায় করোনা ভাইরাস পলিসি ঘোষনা দিয়েছে।


আসুন দেখে নেই ভারতের কিছু কোম্পানীর করোনা ভাইরাস ইন্স্যুরেন্সের তথ্যঃ
১) আদিতা বিড়লা (Aditya Birla Corona Insurance)
নূন্যতম প্রিমিয়ামঃ 380 টাকা (প্রতিমাসে)

২) বাজাজ এলিয়েন্স (Bajaj Allianz Corona Insurance)
নূন্যতম প্রিমিয়ামঃ 939 টাকা (প্রতিমাসে)

৩) ডিজিট (Digit Corona Insurance)
নূন্যতম প্রিমিয়ামঃ 448 টাকা (প্রতিমাসে)

৪) ফিউচার জেনারেলি (Future Generali Corona Insurance)
নূন্যতম প্রিমিয়ামঃ 610 টাকা (প্রতিমাসে)

৫) HDFC এরগো (HDFC Ergo Corona Insurance)
নূন্যতম প্রিমিয়ামঃ 898 টাকা (প্রতিমাসে)

এখানে আমরা আপনাদের সুবিধার জন্য কিছু পরিচিত কোম্পানির এই বীমা পলিসির ব্যাপারে তথ্য দিয়েছি, যা আপনাদের এই কোরোনাভাইরাসের ইন্সুরেন্স পলিসি কে আরো ভালো করে বুঝিয়ে দেবে।

স্টার করোনা ইন্স্যুরেন্স (Star Coronavirus Insurence)

স্টার করোনা ভাইরাস ইন্স্যুরেন্স পলিসি গ্রাহককে করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় যাবতীয় ঔষধ, হাসপাতাল বিল, নার্সিং হোমের বিল পরিশোধে খরচ যোগাবে।

বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা:
১) এটি পেতে হলে 16 দিন অপেক্ষা করতে হবে।
২) এই পলিসি ক্রয়ের পূর্বে কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।
৩) যদি গ্রাহক করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তবে পলিসির গ্রাহক বীমা কোম্পানী হতে আর্থিক সুবিধা পাবেন, যা সর্বনিম্ন 21,000 টাকা এবং সর্বোচ্চ 42,000 টাকা।
৪) একবার সুবিধা ভোগের পর এই পলিসিটি বাতিল হয়ে যাবে।
৫) যদি হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন না হয় তবে বীমা কোম্পানী কোনরুপ খরচ বহন করবে না সেটা কোয়ারেন্টাইনে থাকুক আর নাই থাকুক।

ডিজিট করোনা ইন্স্যুরেন্স (Digit Coronavirus Insurance):

ডিজিট করোনা হেলথ ইন্সুরেন্স দ্বারা করোনা আক্রান্তদের কাভার দেওয়া হয়ে থাকে। যেখানে সর্বোচ্চ 75 বছর বয়স পর্যন্ত কাভার করার কথা বলা হয়েছে। 15 দিনের অপেক্ষার সময় রাখা হয়েছে এই কোম্পানির পলিসির জন্য। এই পলিসি অন্তর্গত সর্বনিম্ন 25,000 টাকা এবং সর্বোচ্চ 2 লক্ষ টাকা পর্যন্ত টাকা পর্যন্ত খরচ বহন কোম্পানির দ্বারা করা হবে।

ICICI লোম্বার্ড করোনা ইন্স্যুরেন্স – (Icici Lombard Coronavirus Insurance)

এই ICICI করোনা ইন্সুরেন্স পলিসির দ্বারা করোনা আক্রান্ত পলিসি ধারককে কাভারেজ দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে পলিসি ধারককের অপেক্ষার সময় 14 দিন রাখা হয়েছে। বয়সের সীমা 18 থেকে 75 বৎসর পর্যন্ত রাখা হয়েছে। এই পলিসি অন্তর্গত 25,000 টাকা পর্যন্ত টাকা পর্যন্ত খরচের কাভার কোম্পানির দ্বারা দেওয়া হবে। 

পলিসি ক্লেমের জন্য কি কাগজ লাগবে (Documents for Claim Corona Policy)

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে ইন্স্যুরেন্স সুবিধা দাবী করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
১) করোনা ভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট
২) ডাক্তারের দেয়া কাগজপত্র
৩) সকল পরীক্ষার কাগজপত্র
৪) ব্যাংকের কাগজপত্র
৫) পরিচয়পত্র (ভোটার আইডি, আধার কার্ড ইত্যাদি)
৬) সকল বিলের কাগজপত্র

আজকের আলোচনা থেকে আমরা করোনা ভাইরাস ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ভবিষ্যতে চেষ্টা করবো নতুন কোন বীমা পলিসি নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হতে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top