কাঁঠাল খুব উপকারি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। এটি উপাদেয় খাদ্য। কাঁঠাল ফল ও সবজি দুই ভাবেই খাওয়া যায়।
কাচা কাঁঠাল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। পাকা কাঁঠাল ফল হিসেবে খাওয়া হয়। এটি ভিটামিন এ যুক্ত ফল।
কাঁঠালের বিচি ও সুস্বাদু খাদ্য। বিচি ভাজা, ভর্তা করে খাওয়া হয়।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি।
এর ফলে আপনারা কৃষিজমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে কাঁঠাল চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই কাঁঠাল চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
চলুন দেখে নেই কাঁঠাল চাষের বিস্তারিতঃ
জমি ও মাটিঃ
কাঁঠাল চাষের জন্য জমি উচু ও মাঝারি উচু হতে হবে। জমিতে জল জমে না ও জল সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
কাঁঠাল চাষের জন্য সাধারনত দোআঁশ, বেলে দোআঁশ, এটেল মাটি বেশি উপযোগী।
বংশ বিস্তারঃ
বীজ থেকে সাধারনত কাঁঠালের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। বীজ থেকে তৈরি চারার মধ্যে মাতৃগাছের গুনাগুন বজায় থাকে না।
তবু ও সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে ফলন ভালো হয়। ভালো জাতের পাকা কাঁঠাল থেকে বীজ বের করে তার সাথে ছাই মাখিয়ে ২-৩ মাসের চারা খুব সাবধানে জমিতে রোপন করতে হবে।
এছাড়া বিভিন্ন কলমের মাধ্যমে ও চারা তৈরি করা হয়ে থাকে। যেমন গুটি কলম, ডাল কলম, চোখ কলম, চারা কলম ইত্যাদি।
চারা উৎপাদনঃ
উন্নত জাতের কাঁঠালের চারা তৈরি করতে হলে বীজ থেকে চারা তৈরি করতে হবে। কাঁঠালের বীজ তৈরি করতে হলে বীজ শুকানো যাবে না এতে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হ্রাস পায়।
এ কারণে কাঠাuল খাবার পর পরই দ্রুত বীজতলা বা পলিথিনে বীজ স্থানান্তর করে দিতে হবে। যদি সম্ভব হয় তবে মাদা তৈরি করে দিতে হবে।
মাদা তৈরি করে বীজ সরাসরি মাদায় রোপন করা যায়। প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ রোপন করতে হবে। চারা গজানোর পর একটি সুস্থ সবল চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে।
পলিথিনে চারা রোপন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে চারার শিকড় যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
রোপন পদ্ধতিঃ
সাধারনত বর্গাকার বা আয়তাকার পদ্ধতিতে চারা রোপন করা উচিত।
চারা রোপণের সময়ঃ
কাঁঠাল চারা বা কলম রোপন করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
মাদা তৈরি বা গর্ত তৈরিঃ
চারা রোপন করার জন্য গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্ত তৈরির জন্য গাছ ও সারির দূরত্ব হবে ১২×১২ মিটার। প্রতি হেক্টরে গাছের সংখ্যা হবে ৭০ টি।
চারা রোপন করার ১০ দিন আগে ১×১×১ মিটার করে গর্ত তৈরি করতে হবে। তারপর গর্তে সার প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতি গর্তে গোবর সার ২৫-৩৫ কেজি, টিএসপি সার ১৯০-২১০ গ্রাম, এমওপি সার ১৯০-২১০ গ্রাম প্রয়োগ করে দিতে হবে।
সার প্রয়োগের পর সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাদা তৈরি করার ১৫ দিন পর মাদার মাঝখানে একটি সুস্থ চারা রোপন করতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে শিকড় যেন কোন ভাবেই ক্ষতি না হয়।
চারা লাগানোর পর গোড়ার মাটি ভালো করে চেপে দিতে হবে। চারার গোড়ায় যেন জল না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
বছরে দুই বার কাঁঠাল গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। ভালো ফলন পেতে হলে সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
৬-১২ মাস বয়সী গাছের জন্য গোবর ২০-৩০ কেজি, ইউরিয়া ১৯০-২১০ গ্রাম, টিএসপি ২৪০-২৬০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
১-২ বছর বয়সী গাছের জন্য গোবর ২৫-৩৫ কেজি, ইউরিয়া ২৯০-৩১০ গ্রাম, টিএসপি ৩৯০-৪১০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
গাছের বয়স অনুযায়ী সারের পরিমান বাড়বে।
জল সেচঃ
কাঁঠাল গাছের জন্য জল সেচ ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুকনা মৌসুমে সেচ দিতে হবে।
নভেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রতি ১৫ দিন পর পর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
কাঁঠাল গাছে সাধারনত রিং বেসিন পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া উত্তম। গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
তাই গাছের গোড়ায় যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ছাটাইঃ
অতিরিক্ত ডালপালা কেটে বাদ দিতে হবে। ডালপালা বেশি থাকলে গাছের আকার নষ্ট হয়ে যাবে।
তাই গাছের আকার ঠিক রাখতে হলে ডালপালা ছাটাই করে দিতে হবে। দুর্বল ও মরা ডাল পাতা কেটে ফেলে দিতে হবে।
আগাছা দমনঃ
গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। গাছের গোড়ায় যেন আগাছা জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ
কাঁঠালের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ হলো ফল পচা রোগ। এই রোগে কচি ফলের গায়ে বাদামি দাগ পড়ে এবং ফল পচা শুরু করে।
এ জন্য ডায়থেন ৪৫ এম প্রতি লিটার জলের সাথে ২.৫ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
এছাড়া কাঁঠালের মুচি ধরা রোগ হয় এক ধরনের ছত্রাকের কারণে। এ রোগে কাঁঠাল ছোট থাকা অবস্থাতেই মাটিতে ঝরে পড়ে।
এ রোগ দমনের জন্য ডাইথেন এম ৪৫ প্রতি প্রতি লিটার জলের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
গ্রীষ্মকালীন ফল। তাই গ্রীষ্ম কালে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় মাসে কাঁঠাল সংগ্রহ করা হয়। পরিপক্ক ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে।