বকরি ঈদ 2024 (Eid al-Adha 2024 Date Time and Significance) 2024 বকরি ঈদের ইতিহাস এবং জানুন বকরি ঈদ কেন পালন করা হয়? বকরি ঈদের তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য বকরি ঈদের গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে দুটি উৎসব খুবই বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয়। একটি হল ঈদ উল ফিতর অর্থাৎ খুশির ঈদ, আরেকটি হলো ঈদুল আযহা অর্থাৎ বকরি ঈদ। এই ঈদের আরেকটি নাম হল কুরবানি ঈদ আর এই ঈদ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম নাম দিয়ে চেনা হয়।
মুসলিমরা সাধারণত দুই ধরনের ঈদ পালন করেন। তার মধ্যে এটি হলো দ্বিতীয় ঈদ। মুসলিম সম্প্রদায়ের দুটি সর্ববৃহৎ উৎসবের মধ্যে এটি অন্যতম একটি উৎসব, শুরু হয় আকাশে নতুন চাঁদ দেখার পরে।
বিভিন্ন দেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা এই উৎসবে মেতে ওঠেন। সবাই নতুন জামা কাপড় পরে খোলা জায়গায় একসঙ্গে নামাজ পড়ে থাকেন। তারপর সবাই সবাইকে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা জানায়। বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয় এই বকরি ঈদের উৎসব।
এই ঈদ কুরবানির ঈদ বলে এই উৎসবে আল্লাহকে কিছু না কিছু উৎসর্গ বা কুরবান করতে হয়। ভারতের স্বাধীনতার পূর্বে অবিভক্ত বাংলায় বকরি অথবা ছাগল ছাড়াও কুরবানির জন্য অন্য কোন পশু পাওয়া যেত না।
তাই সেই সময় কুরবানির জন্য বকরি বা ছাগল ব্যবহারের কারণে এই ঈদের আরেকটি নাম করা হয়েছে বকরি ঈদ। অন্যদিকে আরবি ভাষায় বকরা শব্দের অর্থ হলো গাভী অথবা গরু আর সেই কারণে গরুকে বলি দেওয়ার মধ্য দিয়েও পালন করা হয় এই বকরি ঈদ।
ঈদুল আযহা / বকরি ঈদের ইতিহাস 2024:
হিজরি ক্যালেন্ডারের বারো তম এবং শেষ মাস হল হিজারি দশম দিনে পালিত হয় ঈদ উল আধা। কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, হযরত ইব্রাহিম আল্লাহর স্বপ্নের আদেশ অনুযায়ী নিজের ছেলেকে আল্লাহর কাছে কুরবানি বা উৎসর্গ করতে গিয়েছিলেন।
2024 শুভ ঈদ-উল-আজহা শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস
কেননা তাকে সব থেকে প্রিয় জিনিস টাকে কুরবানী দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আর নিজের ছেলেটি ছিল সবথেকে বেশি প্রিয়। তখন স্বয়ং আল্লাহ তাকে দেখা দিয়ে একটি ভেড়া তার হাতে তুলে দেন এবং বলেন যে ছেলের বদলে এই ভেড়াটাকে কুরবানি হিসেবে উৎসর্গ করতে।
তারপর থেকে এই উৎসবের আগে থেকে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা ভেড়া, উট, ছাগল, কিনে তাকে যত্ন সহকারে পালন করে থাকেন কিছুদিন। তারপর বকরি ঈদের দিনে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা হয় অর্থাৎ কুরবানি দেওয়া হয়।
এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলমানরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতিবছর এই দিনটি উদযাপন করে থাকেন, হিজরী বর্ষপঞ্জি হিসেবে হিজরির চান্দ্র বছরের গণনা অনুযায়ী ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার মাঝখানে দুই মাস দশ দিন এর ব্যবধান থাকে দিনের হিসেবে যা সর্বোচ্চ ৭০ দিন ও হতে পারে।
ইসলাম মতে ত্যাগের অন্যতম প্রতীক এই কুরবানির ঈদ, সবাই এই দিনে নতুন জামা কাপড় পরে থাকেন। যে যার সাধ্যমত খাবার দাবারের আয়োজন করেন। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই একই সাথে এই উৎসবে মেতে ওঠেন।
কোনরকম ভেদাভেদ থাকে না, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রত্যেকে এই ঈদের আনন্দে মেতে ওঠেন। এছাড়া এই উৎসবের রীতি অনুযায়ী এলাকার দরিদ্র এবং দুস্থদের মধ্যে জামা কাপড় বিতরণ করা, খাবার বিতরণ করা এবং কুরবানির মাংস বিতরণ করা হয়ে থাকে।
ইসলামিক চন্দ্রপঞ্জিকায় ঈদুল আযহা জিলহজের ১০ তারিখে পড়ে। আন্তর্জাতিক পঞ্জিকায় তারিখ প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন হয়। সাধারণত এক বছর থেকে আরেক বছর এ ১০ বা ১১ দিন করে কমতে থাকে। স্থানীয় ভাবে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার উপরে নির্ভর করে এই ঈদ।
ঈদ-উল-আজহা এর নামাজ অথবা বকরি ঈদের নামাজ:
বিশ্বের সমস্ত মুসলমান ব্যক্তিগণ ঈদ-উল-আযহার নামাজ মসজিদে অথবা খোলা মাঠে অথবা ঈদগাহ নামক স্থানে আদায় করে থাকেন, ঈদ এর নামাজ জিলহজ ১০ তারিখের সূর্য উদয়ের পর থেকে জোহর নামাজের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত এই যে মধ্যবর্তী সময়টা রয়েছে, এই সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় আদায় করা হয়ে থাকে।
কোন কারণবশত যদি এই নামাজ আদায় করা না হয়, তাহলে ঈদুল আযহার নামাজ পরের দিন জোহরের নামাজ এর আগে পর্যন্ত ওই সময়ের মধ্যে আদায় করা যেতে পারে। ঈদের নামাজের আগে মুসল্লিরা জোরে জোরে তাকবীর উচ্চারণ করে থাকেন।
ঈদের নামাজ দুই রাকাত, এটি ওয়াজিব নামাজ। তা জামায়াতের সঙ্গে ছয়টি অতিরিক্ত তাকবীরের সঙ্গে পড়তে হয়। ঈদের নামাজ শেষ হওয়ার পর ইমামের জন্য খুতবা পড়া সুন্নত ও মুসল্লিদের জন্য খুতবা শোনাও ওয়াজিব।
বকরি ঈদ উপলক্ষে পশু কুরবানি:
ঈদ-উল-আযহার দিনে কুরবানী করা পশুর মাংস গরীব-দুঃখীদের মাঝখানে বিতরণ করা হয় এবং সেই উদ্দেশ্যে টুকরো টুকরো করে কাটা হয় সেই মাংস গুলি।
এছাড়া ইসলাম মতে ঈদুল আযহার দিনে যার যাকাত দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে অর্থাৎ যার কাছে ঈদের দিন সাড়ে সাত ভরি সোনা, সাড়ে ৫২ ভরি রুপো বা সমপরিমাণ সম্পদ যেমন জমানো টাকা আছে, তার উপরে ঈদুল আযহা উপলক্ষে যাকাত বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুইদিন পর্যন্ত পশু কুরবানির জন্য নির্ধারিত করা হয়।
এছাড়া এই কুরবানি মুসাফির অথবা ভ্রমণকারীর উপরে ওয়াজিব /বাধ্যতামূলক নয়। ঈদুল আযহার নামাজ শেষে কুরবানী করতে হবে, এটাই কিন্তু নিয়ম। ঈদুল আযহার নামাজের আগে কুরবানী করা একেবারেই সঠিক নয়।
ঈদ-উল-আযহা অথবা বকরি ঈদ উদযাপন:
এই ঈদের দিন শুরু হয় ঈদের নামাজের জন্য, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নতুন কাপড় পরিধান করা এবং সমস্ত মুসলমান ছেলেদের জন্য এই ঈদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব অথবা বাধ্যতামূলক এবং মহিলাদের জন্য এই নামাজ সুন্নত বলে মনে করা হয়।
বাঙালি মুসলমানরা নামাজের পরে পুরো পরিবার একত্রিত হয়ে সকালবেলা মিষ্টি জাতীয় খাবার দিয়ে সকলের সাথে আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। যেটাকে তারা সকালের নাস্তা হিসেবে মনে করেন। এরপরে কুরবানির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
কুরবানি শেষে কুরবানির প্রথা অনুযায়ী কুরবানির মাংস গরীব এবং আত্মীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। এই দিনে প্রত্যেক মুসলমান অন্যদের বাড়িতে বেড়াতে যায়, আনন্দ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়।
এই ঈদের দিনে মানুষ হযরত ইব্রাহিমের ত্যাগের কথা স্মরণ করেন। যিনি সত্যের জন্য নিজের সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। এমনকি নিজের সবথেকে প্রিয় পুত্রকেও আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী দিতে তিনি পিছুপা হননি। ত্যাগের অন্যতম প্রতীক এই কুরবানির ঈদ।