পবিত্র আশুরা 2024: ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়? | Ashura 2024: History and Significance

আশুরা 2024 (Ashura 2024 Date Time and Significance) 2024 আশুরা ইতিহাস এবং জানুন আশুরা কেন পালন করা হয়? আশুরা তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য আশুরা গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

বিভিন্ন রকমের ধর্মের সমন্বয়ে গঠিত আমাদের এই ভারত বর্ষ। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষদের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে যে সমস্ত উৎসব গুলি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয়, তার মধ্যে রয়েছে আশুরা। আশুরা হলো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক দিবস যা ইসলামী চন্দ্র বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররমের দশম দিনে অনুষ্ঠিত হয়। কারবালার যুদ্ধে আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের শাহাদাতকে চিহ্নিত করে।

আশুরা ইতিহাস ও তাৎপর্য - Ashura History and Significance
আশুরা 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Ashura 2024 History and Significance

তাছাড়া বলা যায় শিয়া মুসলমানরা এই দিনের নবী মুহাম্মদের নাতি এবং তার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার স্মরণ করিয়ে থাকে। আশুরা সেই তারিখের সাথে মিলে যায়, যে তারিখে কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

যার ফলে ইসলামী নবী মুহাম্মদের নাতি ও মোহাম্মদের পরিবারের সদস্য হোসাইন এবং আলী অর্থাৎ হোসেন শাহাদাত হয়। যাকে আমরা শহীদ বলে জানি, সুন্নি মুসলমানদের জন্য এটি প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে এবং এর বাইরে রোজা রাখার একটি উপলক্ষ্য রয়েছে।

মহরম ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

আশুরা সম্পর্কে চলুন তাহলে কিছু জানা যাক: 

  • আনুষ্ঠানিক নাম: আশুরা
  • অন্যান্য নাম: হোসাইন তাবুইক, মোহররমের শোক, প্রায়শ্চিত্তের দিবস ইত্যাদি
  • পালনকারী: বিশ্বের সমস্ত মুসলিমগণ
  • ধরন: ইসলামিক ও জাতীয় (কিছু দেশে, যেমন:- আফগানিস্তান, আজারবাইজান, ইরান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও ইরাক ইত্যাদি)
  • তাৎপর্য: কারবালার যুদ্ধ স্মরণ করায়, যেখানে মোহাম্মদের নাতি হুসাইন ইবনে আলীকে হত্যা করা হয়।
  • পালন: উপবাস অথবা রোজা রাখা এবং শোক পালন করা।
  • তারিখ: মহররমের ১০ তারিখ
  • সংগঠন: প্রত্যেক ইসলামী বছরে একদিন।

ঈদে মিলাদুন্নবী ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

আশুরা পালনের ইতিহাস 2024:

হুসাইনের শাহাদাত:

কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, সংকটময় পরিবেশের মধ্যে ইয়াজিদের উত্তরাধিকার সূত্রে কারবালার যুদ্ধ হয়েছিল। উত্তরাধিকারের পরেই ইয়াজিদ মদিনার গভর্নর কে হোসাইন ও আরো কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে তাদের আনুগত্যের অঙ্গীকার করতে বাধ্য করার নির্দেশ দিয়ে ছিলেন।

তবে হোসেন অবশ্য এ ধরনের অঙ্গীকার করা থেকে বিরত ছিলেন। যিনি বিশ্বাস করতেন যে, ইয়াজিদ প্রকাশ্যে ইসলামের শিক্ষার বিরুদ্ধে যাচ্ছে এবং মোহাম্মদের সুন্নাহ  পরিবর্তন করছে।

তাই তিনি তার পরিবার, পুত্র, ভাই এবং হাসানের পুত্রদের নিয়ে মক্কায় আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য প্রার্থনার ক্ষেত্রে মদিনা ত্যাগ করেন। মক্কায় হোসেন জানতে পারে যে, হজের মাঝখানে পবিত্র নগরীতে তাকে হত্যা করার জন্য ইয়াজিদ দ্বারা ঘাতকদের পাঠানো হয়েছে।

হুসাইন পরিস্থিতি অন্যরকম মোড় নিয়েছে এটা না জেনেই শহরের পবিত্রতা এবং বিশেষ করে কাবার পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য নিজে হজ পরিত্যাগ করে এবং তার আশেপাশের অন্যদের কেও নিয়ে কুফায় যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়।

কারবালার যুদ্ধ ১০ ই অক্টোবর ৬৮০ (১০ মোহররম ৬১ হিজরী সন) সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলেছিল। হোসেনের ছোট দল এবং পরিবারের সদস্যরা সব মিলিয়ে মোট প্রায় ৭২ জন পুরুষ এবং মহিলা তার পাশাপাশি শিশুও ছিল। উমর ইবনে সা’আদ এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল এবং নদীর কাছে নিহত হয়। যেখানে থেকে তাদের পানি (জল) পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি।

হুমাইয়া সৈন্যরা হুসাইন এবং তার পুরুষ অনুসারীদের হত্যা করার পর তারা তাদের তাবু লুট করে মহিলাদের গয়না লুট করে নেয়, এবং আলী ইবনে হোসাইন জয়নুল আবেদীন, যে চামড়ার উপরে সেজদা করেছিল সেটাও নিয়ে নেয়।

হোসাইনের বোন জয়নবকে ক্রীতদাস মহিলাদের সাথে দামিস্কে শাসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং এক বছর পরে অবশেষে মদিনায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

জুমাতুল বিদা ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

আশুরা পালনের ঐতিহ্য এবং গুরুত্ব:

১০ মহররম এর তাৎপর্য:

মোহাম্মদ বর্ণিত হাদিসের ভিত্তিতে জানা যায় যে, ইসলামের সুন্নি সম্প্রদায় আশুরার দিনে অর্থাৎ মোহররমের ১০ তারিখে যেদিন লোহিত সাগরে পথ তৈরি করে মুসা নবী (আঃ) ও তার অনুসারীরা ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, সেই দিনটিকে স্মরণ করার জন্য রোজা রাখার সুপারিশ করা হয়।

এর পাশাপাশি মুসলিম ঐতিহ্য অনুযায়ী মদিনার ইহুদিরা নিস্তার পর্ব পালনে মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখতো। সহীহ আল বুখারীর হাদিস বর্ণনা অনুসারে মুসলমানদের এই দিনে রোজা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এটাও নির্ধারিত করা হয় যে এর পালন ইহুদিদের দ্বারা উদযাপন করা নিস্তার পর্বের উৎসব থেকে আলাদা হওয়া উচিত এবং তিনি বলেছিলেন যে  মুসলমানদের একটির পরিবর্তে দুই দিন রোজা রাখা উচিত।

মহররমের ৯ তারিখ অথবা ১০ তারিখ আবার ১০ তারিখ অথবা ১১ তারিখ, এই দুই দিন রোজা রাখা যেতে পারে অর্থাৎ আশুরা, এর আগের দিন থেকে আশুরার দিন পর্যন্ত অথবা আশুরার দিন থেকে আশুরার পরের দিন পর্যন্ত।

ঈদুল ফিতর ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

আশুরার সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য:

  • আল্লাহ পাক এই তারিখে আসমান অর্থাৎ আকাশ, জমি, লঘুকে কলম সৃষ্টি করেছেন এবং এই ১০ ই মহররম মহাপ্রলয় বা কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।
  • আল্লাহ তা’আলা আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) কে ১০ ই মোহররম পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন।
  • এরপর মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ঈমানের মহা কঠিন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এই মহররমের ১০ তারিখে।
  • আবার বলা যায় যে ১০ ই মোহররম খোদাদ্রোহী অর্থাৎ বলা যায় যে আল্লাহর বিরোধী ফেরাউন বিপুল সেনাবাহিনী নিয়ে নীলদরীয়ার অতল তলে ডুবে মরে যায় আর হযরত মুসা (আঃ) বনী ইসরাইলদের নিয়ে পানির (জলের) উপর দিয়ে পার হয়ে যান।
  • হযরত ইউনুস (আঃ) ৪০ দিন মাছের পেটে থাকার পর ১০ ই মোহররম নাজাত পেয়েছিলেন।
  • হযরত নূহ (আঃ) ৪০ দিনের মহাপ্লাবণের পরে দশই মোহররম নৌকা থেকে বেলাভূমিতে অবতরণ করেছিলেন।
  • হযরত ইয়াকুব (আঃ) তার হারানো ছেলে হযরত ইউসুফকে ফিরে পান এবং দৃষ্টিশক্তি আবার ফিরে পান ১০ই মোহররম তে।
  • সহনশীলতা এবং ধৈর্যের প্রতীক হযরত আইয়ুব (আঃ) আঠারো বছর কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত থাকার পর আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় ১০ ই মহররম আকস্মিকভাবেই আরোগ্য  লাভ  করেছিলেন।
  • এই দিনেই হযরত ইদ্রিস (আঃ) সশরীরে জান্নাতে প্রবেশ করেছিলেন।

তো এইভাবে অনেক গুলি ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে ১০ ই মহররম অর্থাৎ আশুরার এই দিনটি। যার তাৎপর্য অনেকখানি ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে।

রমজান ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

আশুরা পালিত হয় কিভাবে:

এই দিনটি উদযাপন করার জন্য ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বেশ কিছু নিয়ম নীতি পালন করেন। আশুরার দিনে মানুষ কালো কাপড় পরতো। কিছু মানুষ এটিকে শোকের দিন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এটি একটি শোকের দিনও বটে, এবং সকলেই ছুরি, ধারালো শিকল অথবা তলোয়ার দিয়ে নিজেদের হুসাইনের মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করে থাকেন নিজের গায়ে আঘাত করে।

তবে সেটা শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা করে থাকেন। তাছাড়া সুন্নি মুসলমানরা এই দিনে রোজা অথবা উপবাস রেখে খুবই দুঃখের সাথে দিনটি পালন করে থাকেন।

হুসাইন এর স্মরণ করতে মুসলমানরা এই দিন শোক প্রকাশ করেন। মহরম শব্দের অর্থ হলো অনুমতি নেই বা নিষিদ্ধ। তাই এই দিনে মুসলমানদের যুদ্ধের মত ক্রিয়া-কলাপে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ এই দিনটি প্রার্থনা এবং আত্ম দর্শনের দিন হিসেবেও পালিত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top