করাচিওয়ালি শক্তিপীঠ: এখানে সতীর চক্ষু পতিত হয়েছিল, জানুন সবকিছু

(Karachi Wali Shakti Peeth in Bengali) করাচিওয়ালি শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান কোন স্থানে? দেবী সতীর কোন অঙ্গ এখানে পতিত হয়েছে? করাচিওয়ালি শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী কি? কিভাবে আরাধনা করা হয়? এই মন্দিরের তাৎপর্য কি? জানুন সবকিছু বিস্তারিত।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবী দুর্গা সতী নামে পরিচিত, এই সতী নিজের বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের পছন্দের দেবাদিদেব মহাদেবকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু পিতার দ্বারা স্বামীর অপমান সতী সহ্য করতে পারেন নি। সেই কারণে বাবার বাড়িতে নিজের দেহ ত্যাগ করেন কিন্তু দেবীর প্রাণ ত্যাগ মহাদেবকে উন্মাদ পাগলে পরিণত করেছিল।

Karachi Wali Shakti Peeth in Bengali - করাচিওয়ালি শক্তিপীঠ
Karachi Wali Shakti Peeth in Bengali – করাচিওয়ালি শক্তিপীঠ

কেননা দেবাদিদেব মহাদেব পাগলের মত সতীকে ভালবাসতে কিন্তু সতী পার্বতীর এমন মৃত্যুতে তিনি দেবীর কাছে পৌঁছে গিয়ে দেবীর প্রাণহীন দেহ কাঁধে করে তুলে নিয়ে পাগলের মত নাচতে শুরু করেন, এমন ক্ষেত্রে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো উপক্রম হয়।

কোন রকম উপায় না দেখে বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবীর সেই দেহকে খন্ড খন্ড করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর সেই খন্ড গুলি একান্নটি (৫১ টি শক্তিপীঠ) ভাগে বিভক্ত হয়েছিল। সতীর দেহ খন্ড গুলি যেখানে যেখানে পড়েছে সেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে এক একটি তীর্থস্থান, বলতে গেলে এক একটি শক্তিপীঠ অথবা সতীপীঠ।

করাচিওয়ালি শক্তিপীঠ:

শক্তিপীঠের নাম করাচিওয়ালি শক্তিপীঠ
স্থান  সুক্কর স্টেশনের নিকট, করাচী
দেশ পাকিস্তান
দেবীর অংশ চক্ষু
শক্তির নাম মহিষমর্দিনী

করাচিওয়ালি শক্তিপীঠ / করবীর শক্তিপীঠ এর পৌরাণিক কাহিনী:

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, দক্ষ রাজার কন্যা সতী পার্বতী স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মত্যাগ দিয়েছিলেন, তখন মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নিত্য শুরু করেছিলেন, দেবতাদের অনুরোধে সেই প্রলয় থামাতে বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্রের সাহায্যে সতী দেবীর মৃতদেহ খন্ড খন্ড করে বিভক্ত করেন।

বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া দেবীর সেই দেহাংশ গুলি যে যে জায়গায় পড়েছিল সেই জায়গা গুলি পরবর্তীতে এক একটি শক্তিপীঠ (৫১ টি শক্তিপীঠ) হিসেবে পরিচিত হয়। তবে একটা কথা উল্লেখযোগ্য যে, ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশেও রয়েছে সতী দেবীর সতী পীঠ।

করবীর শক্তি পীঠ এর ঐতিহাসিক কাহিনী:

দেবীর দেহের বিভিন্ন অঙ্গ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল, আর সেই জায়গায় যে তীর্থস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে মানুষের ভক্তি ও পূজার মধ্যে দিয়ে সতী অর্থাৎ পার্বতী পূজিতা হয়ে আসছেন বহুকাল আগে থেকে। তেমনই একটি জায়গা রয়েছে পাকিস্তানে, পাকিস্তানেও কিন্তু পূজিত হয়ে থাকেন মা কালী

সতীর ৫১ টি পীঠের মধ্যে দুটি শক্তিপীঠ রয়েছে পাকিস্তানে। এর মধ্যে একটি রয়েছে পাকিস্তানের করাচিতে আর আরেকটি কথা তো উল্লেখ না করলেও চলবে। কেননা সেটি হল বালোচিস্থান এর হিংলাজ মন্দির, কি নিশ্চয়ই চেনা লাগছে, তাই তো !

রাজধানী করাচীর করবি পুরের সিন্ধ প্রদেশে রয়েছে দেবীর এই সতীপীঠ। কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, এই জায়গায় সতীর তিনটি নয়ন পড়েছিল অর্থাৎ দেবীর তিনটি চক্ষু পড়েছিল। দেবী এখানে মহিষমর্দিনী রূপে পুজিতা হয়ে থাকেন। আর এখানে শিব আছেন ক্রোধীশ নামে।

আমরা সকলেই জানি যে, পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে সংখ্যা লঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস বেশি। সিন্ধের প্রাদেশিক রাজধানী হল করাচি। পাক বন্দর নগর তথা বাণিজ্যিক রাজধানী কড়াচির পারকাইসুক্কুর স্টেশন এর কাছে অবস্থিত এই করবিপুর। আর এই জায়গাতেই রয়েছে দেবীর এই করবীর সতীপীঠ।

তবে পাকিস্তানের যে দুটি জায়গাতে সতীর দেহাংশ পড়েছিল, এর মধ্যে একটি হলো বালুচিস্তানের হিংলাজ মন্দির আর অন্যটি হলো করাচীর করবীপুর। করাচিতে অবস্থিত বলেই অনেকেই এই কালিকে “করাচিওয়ালি” বলেও ডেকে থাকেন। তবে এই মন্দিরের পূজোর সময় পাকিস্তানের বসবাসকারী সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ভক্তির সাথে সতীপীঠে প্রবেশ করার সময় “জয় করাচিওয়ালি” বলে থাকেন, স্থানীয় সূত্রে এসব এমনটাই জানা যায় গিয়েছে।

সতী দেবীর দেহাংশ যে স্থানে পড়ে সেই স্থান কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। সেই জন্য অনেকেই ভারতে বসবাস করা সত্ত্বেও ভারত ছাড়াও যে প্রতিবেশী দেশ গুলোতে দেবীর দেহাংশ পড়েছিলো সেখানেও পূজা দেওয়ার জন্য, দেবীর কাছে মনের বাসনা জানানোর জন্য, এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দিয়ে থাকেন অনেক পুন্যার্থী।

এই সতীপীঠ গুলির সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক পৌরাণিক কাহিনী, তার পাশাপাশি অনেক প্রাচীন কাল থেকে এখানে পূজা-অর্চনা চলে আসছে। স্থানীয় মানুষজন দের কাছে এই তীর্থস্থান গুলি অনেক খানি গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্রতিনিয়ত এখানে দেবীর পূজা অর্চনা করে থাকেন।

সারা বছর ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তদের সমাগম ঘটে এখানে। তার সাথে সাথে অনেকেরই ইচ্ছা থাকে যে ৫১ টি শক্তি পিঠে ঘুরে আসার, তবে সবার ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে একটা কথা বলা যেতে পারে যে, এই ৫১ টি শক্তি পীঠের মধ্যে বেশিরভাগ টাই ভারতে অবস্থিত।

তাই আপনি চাইলে দেশের মধ্যেই সতীর শক্তি পীঠে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। সতী পার্বতীর এই শক্তি পিঠ গুলি এতটাই জাগ্রত যে, সেখানে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। সতি পার্বতী দেহত্যাগ করলেও এই ৫১ টি শক্তিপীঠ থেকে সকলের কাছ থেকে পূজা পেয়ে আসছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top