অমরনাথ শক্তিপীঠ: যেখানে সতীর কন্ঠ পড়েছিল, পৌরাণিক কাহিনী জানুন

(Amarnath Shakti Peeth in Bengali) অমরনাথ শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান কোন স্থানে? দেবী সতীর কোন অঙ্গ এখানে পতিত হয়েছে? অমরনাথ শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী কি? কিভাবে আরাধনা করা হয়? এই মন্দিরের তাৎপর্য কি? জানুন সবকিছু বিস্তারিত।

লোকোমুখি শোনা কথা অনুসারে জানা যায় যে মেয়েরা সবকিছু সহ্য করতে পারলেও স্বামীর নিন্দা কখনোই সহ্য করতে পারেন না। আর এই কথাটি প্রচলন শুরু হয়েছে অনেক যুগ আগে থেকে, বলতে গেলে যখন সতী পার্বতী বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে মহাদেবকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। তারপর সতী দেবীর বাবা দক্ষ রাজা সতীর স্বামীকে অনেক অপমান করেন, স্বামীর এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী নিজের বাড়িতে দেহ ত্যাগ করেন।

এই খবর মহাদেবের কাছে পৌঁছানো মাত্রই তিনি সেখানে উপস্থিত হন। আর সতীর মৃতদেহ দেখে তিনি একেবারে উন্মাদ পাগলে পরিণত হন। তারপর সতীর সেই দেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেছিলেন, এমন পরিস্থিতিতে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কা দেখা যায়।

Amarnath Shakti Peeth in Bengali - অমরনাথ শক্তিপীঠ
Amarnath Shakti Peeth in Bengali – অমরনাথ শক্তিপীঠ

আর শ্রী বিষ্ণু তখন কোন রকম উপায় না পেয়ে, তার হাতের সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর সেই দেহটি ৫১ টি খন্ডে খন্ডিত করেছিলেন। সেই দেহ খণ্ড গুলি যে যে জায়গায় পড়েছিল সেখানে সেখানে তৈরি হয়েছে এক একটি করে সতীপীঠ।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে অমরনাথের যেখানে সতীপীঠ গড়ে উঠেছে সেখানে সতীর কন্ঠ অথবা গলা পড়েছিল। তাই ৫১ টি শক্তিপীঠের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম শক্তিপীঠ হল এই অমরনাথ সতীপীঠ।

অমরনাথ শক্তিপীঠের ভৌগোলিক গুরুত্ব:

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেব দেবী দের সংখ্যা নেহাত কম নয়, তেত্রিশ কোটি দেবতা। তবে তীর্থস্থান, তীর্থযাত্রা সবকিছু মিলিয়ে হিন্দুদের জীবনযাত্রা অনেক বেশি প্রভাবশীল। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য তীর্থস্থান এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অমরনাথ সতী পীঠ তীর্থস্থান।

যেখানে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ গিয়ে ভিড় জমান, তীর্থযাত্রা শুরু করেন অনেকেই। অমরনাথের গুহায় শিবলিঙ্গ ছাড়াও রয়েছে সতী পীঠ, দেবী এখানে মহামায়া (শক্তি) রূপে পূজিত হন, আর ভৈরব এখানে ত্রিসন্ধ্যেশ্বর রূপে পূজিত হন।

শ্রীনগর থেকে প্রায় ১৪১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই অমরনাথ সতী পীঠ। পহেলগাঁও শহরটি কে অতিক্রম করলেই পৌঁছানো যায় অমরনাথ সতী পীঠে। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১২,৭২৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই অমরনাথের গুহা।

অমরনাথ সতী পীঠ এর পৌরাণিক কাহিনী: 

প্রতিটি তীর্থস্থান এর পেছনে রয়েছে অনেক খানি পৌরাণিক ঘটনা, সেইমত চলে আসছে বর্তমান সময় পর্যন্ত। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, অমরত্ব ও সৃষ্টির রহস্য শোনানোর জন্য দেবী পার্বতীকে একটি নির্জন গুহায় নিয়ে গিয়েছিলেন দেবাদিদেব মহাদেব। সেই গুহাটি হল এই অমরনাথ গুহা।

এই গুহায় আসার আগে মহাদেব তার সঙ্গে নন্দীকে রেখে এসে ছিলেন পহেলগাঁও তে, তার জটায় অবস্থিত চন্দ্রকে রেখে এসেছিলেন চন্দন ওয়াড়িতে, এর পাশাপাশি তার গলায় যে সাপ থাকে সেই সাপ কেও রেখে এসেছিলেন শেষনাগে এবং পার্বতীর সবচেয়ে প্রিয় পুত্র গণেশ কে রেখে এসেছিলেন মহা গনেশ পর্বতে।

এই গুহাতে কোনোরকম অন্য কারো অনুপস্থিতি তে মহাদেব দেবী পার্বতী কে অমরত্ব ও সৃষ্টির রহস্য শোনানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে তারা ছাড়া আর অন্য কেউ থাকবে না।

অমরনাথ শক্তিপীঠের মাহাত্ম্য:

এই শক্তিপীঠের মাহাত্ম্য বলতে গেলে বলা যায় যে, কথিত আছে মহাদেব তার সঙ্গী সাথী সবাই কে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে অমরনাথে বসে পার্বতীকে অমরত্বের জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। অমরনাথ গুহার প্রায় ১৩০ ফুট ভিতরে গিয়ে তবেই কিন্তু শিবলিঙ্গের দর্শন পাওয়া যায়।

গুহার ছাদ থেকে জল চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে মেঝেতে, তারপর সেটি শিবলিঙ্গের আকার ধারণ করে, দেখতে বলতে গেলে সাক্ষাৎ স্বর্গ দর্শন। এই ভাবেই প্রতিবছর সৃষ্টি হয় অমরনাথ লিঙ্গের যা দেখার জন্য পূর্ণর্থীদের এবং ভক্তদের ভিড় চোখ জুড়িয়ে দেয়।

এছাড়া আরো জানা যায় যে, লিঙ্গের উচ্চতা প্রতিবছর চন্দ্র কলার উপরেই নির্ভর করে। কখনো বা ৬ ফুট হয় আবার কখনো ৭ ফুট, তা আবার কখনো ৮ ফুটেরও বেশি হয়ে যায় এই শিবলিঙ্গের উচ্চতা। এই শিবলিঙ্গের দর্শন পাওয়া খুবই ভাগ্যের বিষয় বলে মনে করেন অনেকেই।

প্রচলিত কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, একজন মুসলমান মেষপালক অমরনাথ গুহাটি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনিই প্রথম অমরনাথ শিবলিঙ্গের দর্শন পেয়েছিলেন। এমনটা লোকোমুখে শোনা যায় ইতিহাস অনুসারে।

অমরনাথ শক্তিপীঠের ইতিহাস:

ইতিহাস অনুসারে জানা যায় যে, এইভাবেই এই ধামের প্রচার হয়, আবার অনেকের মতে এক সময় গোটা কাশ্মীর জলে ভেসে গিয়েছিল, সেই জল কাশ্যপ মুনি নদীর দ্বারা বের করেছিলেন বাইরে। আর এর পরেই ভৃগু মুনি অমরনাথ পাহাড়ে শিবের দেখা পেয়েছিলেন।

সেই থেকেই চারিদিকে এই অমরনাথ গুহা ও এই শক্তি পিঠের প্রচার শুরু হয়। প্রতিবছর শ্রাবণ পূর্ণিমা পর্যন্ত অমরনাথ যাত্রা চলতে থাকে। তারপর চাঁদ যত ছোট হতে থাকে, ততই ছোট হয় বরফের শিবলিঙ্গ।

অমরনাথের গুহা শিবলিঙ্গ ছাড়াও মহামায়া সতীপীঠের জন্য অনেকখানি প্রসিদ্ধও বটে, সেটা তো আমরা সকলেই জানলাম। কেননা এখানে দেবীর কন্ঠ পড়েছিল, আর সেই অনুসারে এখানে গড়ে উঠেছে অমরনাথ শক্তিপীঠ।

প্রতিনিয়ত কোন না কোন তীর্থস্থানে তীর্থযাত্রীদের ভিড় লেগেই রয়েছে। অনেকেই মনে মনে স্থির করে নেন যে, কোন এক তীর্থস্থানে সময় কাটাবেন পুণ্য অর্জন করবেন। তেমনি এই অমরনাথ শক্তিপীঠ এমন একটি জায়গা যেখানে শিবলিঙ্গ  দর্শন করার পাশাপাশি এখানে সতী দেবীর সতী পীঠ ও দর্শন হয়ে যায়। তাহলে আপনি কি ভাবছেন ! যদি এমন কোন পরিকল্পনা থেকে থাকে, তাহলে এই অমরনাথ শক্তিপীঠ থেকে ঘুরে আসতে পারেন, আশা করি চোখ জুড়িয়ে যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top