সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, গুজরাট – Somnath Jyotirlinga Temple

সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির (Somnath Jyotirlinga Temple): কোন মন্দিরে গিয়ে পূজা করলে মন শান্ত হয়, অনেকখানি স্বস্তি পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। সেই কারণে আমাদের দেশে ভারতবর্ষে মন্দিরে রয়েছে প্রচুর। তার মধ্যে শিব মন্দির বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেশে শিব মন্দির রয়েছে প্রচুর। তবে তাদের মধ্যে সোমনাথ মন্দির ভারতের একটি প্রসিদ্ধ শিব মন্দির। গুজরাট রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের বেরাবলের কাছাকাছি এই মন্দির অবস্থিত।

সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, গুজরাট - Somnath Jyotirlinga Temple
সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, গুজরাট – Somnath Jyotirlinga Temple

সোমনাথ শব্দটির অর্থ হলো চন্দ্র দেবতার রক্ষাকর্তা।সোমনাথ মন্দিরটি আবার “চিরন্তন পীঠ” নামে পরিচিত। কারণ অনেকদিন আগে ৬ বার ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও মন্দিরটি খুব তাড়াতাড়ি পুনরনির্মিত করা হয়।

এই সোমনাথ মন্দিরের ইতিহাস রয়েছে, যা হয়তো অনেকেরই অজানা। তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই সোমনাথ মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে।

সোমনাথ মন্দিরের ইতিহাস:

কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, সোমনাথের প্রথম মন্দিরটি খ্রিস্টের জন্মের আগে থেকেই ছিল। গুজরাটের যাদব রাজারা ৬৪৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় মন্দির নির্মাণ করেন। ৭২৫ খ্রিস্টাব্দে সিংহের আরব শাসনকর্তা জুনায়েদ তার সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে এই মন্দিরটি ধ্বংস করে দেন। তারপর ৮১৫ খ্রিস্টাব্দে গুজ্জার প্রতিহার রাজা দ্বিতীয় সোমনাথের তৃতীয় মন্দির টি নির্মাণ করেন। এই মন্দিরটি ছিল লাল বেল পাথরে নির্মিত খুবই বিশাল আকৃতির একটি মন্দির।

এরপর ১০২৪ খ্রিস্টাব্দে মাহমুদ গজনী আরও একবার মন্দিরটি ধ্বংস করেন, ১০২৬ থেকে ১০৪২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে যেকোনো একটা সময়ে রাজা মালোয়ার ভোজ ও সোলাঙ্কি রাজা অন হিল ওয়ারার প্রথম ভীমদেব আবার মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এই সময় মন্দিরটি ছিল কাঠ দিয়ে তৈরি তবে কুমার পাল ১১৪৩ থেকে ৭২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কাঠের বদলে এটি পাথরের মন্দির এ রূপান্তরিত করে দেন।

বহুবার ধ্বংস হওয়ার মধ্যে ঔরঙ্গজেব সোমনাথ মন্দিরের জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। সেই মসজিদে হিন্দু শাস্ত্র ভিত্তিক মোটিভ গুলি সম্পূর্ণ রূপে ঢাকা দিতে পারেনি, কিন্তু পরবর্তীতে নাগপুরের রাজা ভোসলে, কোলহাপুরের ছত্রপতি ভোসলে, ইন্দরের রানী অহল্যাবাই গোলকার ও গোয়ালিয়রের সীমন্ত পাতিল বুয়া সিন্ধের যৌথ প্রচেষ্টায় মন্দিরটি আবার পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। তবে মূল মন্দিরটিতে যেখানে মসজিদ করা হয়েছিল সেই জায়গার মন্দির প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। মন্দিরটি পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সেই ধ্বংসাবশেষের একটু পাশে।

“সোমনাথ: ভারতের বিখ্যাত শহর সমুদ্রের উপকূলে অবস্থিত এবং সমুদ্রের তরঙ্গের কাছাকাছি অবস্থিত। এই স্থানের বিস্ময়কর স্থানগুলির মধ্যে একটি হলো এই সোমনাথ মন্দির যা কিনা যেখানে সোমনাথ নামে একটি বিদ্রোহ রয়েছে। বিগ্রহ টি মন্দিরের মাঝখানে নিচের কোনরকম অবলম্বন ছাড়াই উপর থেকে ঝুলে রয়েছে। হিন্দুরা এই বিদ্রোহকে খুবই শ্রদ্ধা করেন। চন্দ্রগ্রহণের দিন হিন্দুরা এই মন্দিরে তীর্থ করতে আসেন আর সেই সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই মন্দিরে ভিড় জড়িয়ে থাকেন।”

হিন্দু পুরাণ অনুসারে দক্ষ প্রজাপতি অভিশাপ দিয়েছিলেন চন্দ্রপ্রভাষ কে, তিনি তীর্থে শিবের আরাধনা করলে  তার অভিশাপ কিছুটা অংশ নির্মূল করেন। এই কারণে চন্দ্র সোমনাথ এর শিবের একটি স্বর্ণমন্দির নির্মাণ করেন দিয়ে মন্দিরটি পুনঃ নির্মাণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। অন্যদিকে মুসলিম আক্রমণকারী এবং শাসকদের দ্বারা বারবার ধ্বংসের পরেও মন্দিরটি অতীতে বেশ অনেকবার পুনঃনির্মাণ করা হয়েছিল।

সোমনাথ মন্দিরের পৌরাণিক কাহিনী: 

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে সোমনাথ মন্দিরের আরাধ্য দেবতা সোমেশ্বর মহাদেব নামে পরিচিত। সত্য যুগে সোমেশ্বর মহাদেব ভৈরবেশ্বর, ত্রেতা যুগে শ্রাবনিকেশ্বর, এবং দ্বাপর যুগে শ্রী গলেশ্বর নামে পরিচিত। চন্দ্র তার স্ত্রী রোহিনের প্রতি অত্যধিক আসক্তি থাকার কারণে তার জন্য ২৬ স্ত্রীকে উপেক্ষা করেছিলেন। আর এই ২৬ জন স্ত্রী ছিলেন দক্ষ প্রজাপতির কন্যা।

এই কারণে দক্ষ তাকে ক্ষয় হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দিয়েছিলেন। আর শিবের আরাধনা করলে সে তার এই অভিশাপ কিছুটা হলেও নির্মূল করেন। এরপর ব্রহ্মার উপদেশে কৃতজ্ঞতা বসত চন্দ্র সোমনাথ এ একটি স্বর্ণ শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

সোমনাথ মন্দিরের পৌরাণিক তাৎপর্য: 

ভারতের বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে সোমনাথ হলো প্রথম। স্কন্ধ পুরাণ, শ্রীমৎ ভাগবত, শিব পুরাণ, প্রভৃতি প্রাচীন গ্রন্থে এই জ্যোতির্লিঙ্গের উল্লেখ রয়েছে।

শিব পুরাণ এবং নন্দী উপ পুরাণে শিব বলেছেন যে, তিনি সর্বত্রই বিরাজ করছেন। বিশেষ করে জ্যোতির্লিঙ্গের বারোটি রূপ ও স্থানে। এই পবিত্র স্থান গুলির মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

বর্তমান সোমনাথ মন্দির কে নির্মাণ করেছেন?

তবে যাই হোক না কেন, যে মন্দিরটি বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল ১৯৪৭ সালের অনেক পরে তৈরি করেছিলেন এবং ডিসেম্বরের এক তারিখে ১৯৯৫ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি শংকর দয়াল শর্মা এটিকে জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন।

সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল সোমনাথ মন্দির পুনঃ নির্মাণ করার জন্য সেই প্রস্তাব নিয়ে মহাত্মা গান্ধীর কাছে গিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধী এই প্রস্তাবকে প্রশংসা করেছিলেন এবং জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের মৃত্যুর পর কে এম মুন্সির নির্দেশে মন্দিরের পুনঃনির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হয়। তখনকার সময়ে কে এম মুন্সি ভারত সরকারের খাদ্য ও নাগরিক সরবরাহ মন্ত্রী ছিলেন। মন্দিরটি কৈলাস মহামেরু প্রসাদ স্টাইল অনুসারে নির্মাণ করা হয়েছিল।

যারা বিশেষভাবে শিবের ভক্ত, শিবের উপাসক, তাদের কাছে এই সোমনাথ মন্দির অনেকখানি শ্রদ্ধার জায়গা। অনেকেই তীর্থ ভ্রমণে গিয়ে শিবের মন্দিরে পূজা উপাসনা করে থাকেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল এতবার ধ্বংস হওয়ার পরেও আবার পুনঃ নির্মিত হতে হতে আজকের বর্তমানের সোমনাথ মন্দির সকল মানুষের মনে অনেকখানি জায়গা করে নিয়েছে।

তার সাথে রয়েছে শিবের উপাসনা করার পবিত্র জায়গা যেখানে যাওয়ার জন্য একটা মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন সারা জীবন। যতবারই ধ্বংস হয়েছে, তারপর পুনঃ নির্মাণ হওয়ার মধ্যে দিয়ে মানুষের মনে আরও বেশি দৃঢ় ভক্তি, শ্রদ্ধা, বেড়ে গিয়েছে। তাই তো আজকে বর্তমানে সোমনাথ মন্দির শিব মন্দির হিসেবে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top