মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, অন্ধ্রপ্রদেশ – Mallikarjuna Jyotirlinga Temple

মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির (Mallikarjuna Jyotirlinga Temple): আমাদের দেশে শিব ভক্তদের সংখ্যা নিহাত কম নয়। তাই তাদের জন্য সবথেকে পবিত্রতম বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের মধ্যে এই মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হবে মনে করা হয়।

মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, অন্ধ্রপ্রদেশ - Mallikarjuna Jyotirlinga Temple
মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, অন্ধ্রপ্রদেশ – Mallikarjuna Jyotirlinga Temple

মল্লিকার্জুন জ্যোতিরলিঙ্গ মন্দির দক্ষিণ ভারতের অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীশৈলম এ অবস্থিত একটি শিব মন্দির। তাছাড়া মল্লিকার্জুন জ্যোতিরলিঙ্গ মন্দির ২৭৫ টি পাদল পেত্রা স্তলমের অন্যতম মন্দিরও বটে। তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এই মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির এর পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে-

মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির

শিব ও পার্বতীর দুই ছেলে গণেশকার্তিক, এটা তো আমরা সবাই জানি তাই না ! তাদের জন্য উপযুক্ত পাত্রী খোঁজা হচ্ছিল বিবাহের জন্য। মহাদেব যখন বিয়ের জন্য তাদেরকে বলে ছিলেন যে কে আগে বিয়ে করবেন, সেই নিয়ে তখন শিব বলেছিলেন, যে আগে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করে আসতে পারবে, তারই আগে বিয়ে দেওয়া হবে। কার্তিক তার বাহন ময়ূরকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করতে বেরিয়ে পড়েন।

গণেশ শিব ও পার্বতীকে সাতবার প্রদক্ষিণ করেন কারণ শাস্ত্রমতে নিজের পিতা-মাতাকে প্রদক্ষিণ করলে নাকি ভূ-প্রদক্ষিণ করা হয়ে যায়। সে বুদ্ধি দিয়ে খুবই কম সময়ের মধ্যে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করার সাথে সাথে পিতা-মাতার মন জয় করে নিয়েছিলেন। তখন সে শর্ত অনুযায়ী বুদ্ধি, সিদ্ধি ও ঋদ্ধির সঙ্গে গণেশের বিয়ে দেন।

কার্তিক ঘুরে এসে এই সমস্ত কিছু দেখে রেগে গিয়ে ক্রউঞ্চ পর্বতে কুমার ব্রহ্মচারী নামে বাস করতে চলে যান। শিব কার্তিককে শান্ত করতে আসলে তা দেখে তিনি অন্যত্র চলে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু দেবতাদের অনুরোধে তিনি কাছাকাছি থেকে যান এবং পার্বতী যেখানে ছিলেন সেই জায়গাটি শ্রীশৈলম নামে পরিচিত।

তাছাড়া শিব অমাবস্যায়  ও পার্বতী পূর্ণিমায় কার্তিককে দেখতে আসতেন। এছাড়া এই মল্লিকার্জুন মন্দিরটি পূর্বমুখী। কেন্দ্রীয় মন্ডপে অনেকগুলি স্তম্ভ এবং  নন্দীকেশর এর একটি বিরাট মূর্তি রয়েছে। তাছাড়া এই মন্দিরের প্রধান উৎসব হল শিবরাত্রি

এর কিছুকাল পরে দেবী পার্বতী নিজের পুত্র গণেশকে বলেন কার্তিক তাকে ত্যাগ করার জন্য তিনি খুব কষ্টে আছেন। আড়াল থেকে সব কথা শুনে কার্তিক তার মায়ের কাছে ফিরে যান এবং কৈলাসে ফিরে যান ও দেবীর ষষ্ঠীকে বিবাহ করেন। তবে অনেক জায়গায় কার্তিককে কুমার হিসেবে মনে করা হয়। সেই কারণে কার্তিক পূজা করে অনেক মেয়েরা এমন স্বামী প্রার্থনা করে থাকেন।

মল্লিকার্জুন মন্দির এর শক্তিপীঠ: 

কাহিনী অনুসারে শ্রী শৈলম মল্লিকার্জুন মন্দির আঠেরো টি মহা শক্তি পিঠের মধ্যে একটি। পুরানে দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহত্যাগের গল্প আমরা সবাই কম বেশি জানি। মন্দিরের ওই স্থলে সতীর উপরোষ্ঠ পড়েছিল।

মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ: 

শিব মহাপুরান অনুসারে একবার সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ও রক্ষাকর্তা-বিষ্ণুর মধ্যে জগতে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে তর্ক বেধে গিয়েছিল। তাদের পরীক্ষা করার জন্য শিব ভূবনকে একটি অনন্ত আলোর লিঙ্গ বা জ্যোতির লিঙ্গ দ্বারা বিভক্ত করেছিলেন। বিষ্ণু ও ব্রহ্মা দুই দিকে সেই লিঙ্গের উৎস খুঁজতে বের হয়ে পড়েন। ব্রহ্মা মিথ্যা কথা বলেছেন যে তিনি সেই জ্যোতিলিঙ্গের উৎস খুঁজে পেয়েছেন, কিন্তু বিষ্ণু পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছিলেন।

তাই রাগান্বিত অবস্থায় শিব দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়ে ব্রহ্মাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, ব্রহ্মা কোন অনুষ্ঠানে স্থান পাবেন না। অন্যদিকে তিনি বিষ্ণুকে আশীর্বাদ করেন যে, বিষ্ণু প্রলয় কাল পর্যন্ত পূজিত হয়ে আসবেন। আর জ্যোতির্লিঙ্গ হল সর্বোচ্চ অখন্ড সত্য যাতে শিব আংশিকভাবে আবির্ভূত হয়েছেন।

অনেকদিন আগে প্রথমত মনে করা হতো জ্যোতির্লিঙ্গের সংজ্ঞা ৬৪ টি। এর মধ্যে বারোটিকে পবিত্রতম বলে মনে করা হয়। আর এই গুলিকে শিবের বিভিন্ন রূপ ভেদ হিসাবে মনে করা হয়। প্রত্যেক মন্দিরে শিবলিঙ্গ শিবের অনন্ত প্রকৃতির প্রতীক, আদি এবং অন্তহীন স্তম্ভের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।

“সত্যম শুভম সুন্দরম” কথাটির মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে, সত্যের জয় সর্বত্রই। সেটা যে কোন জায়গায় হতে পারে। যেমন ব্রহ্মা মিথ্যে কথা বলেছিলেন বলে অভিশাপবশত তার কোন অনুষ্ঠানে স্থান থাকে না।

আবার অন্যদিকে বিষ্ণু সত্য কথা বলে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছিলেন বলে শিব বিষ্ণু কে আশীর্বাদ করেন এবং প্রলয় কাল পর্যন্ত পূজিত হওয়ার কথা বলেন। যারা শিবের উপাসক তারা এ সমস্ত ঘটনা অনেকেই হয়তো জানবেন আবার অনেকেরই হয়তো অজানা।

যাই হোক না কেন, প্রতিটি উৎসব প্রতিটি পৌরাণিক কাহিনী, ইতিহাস মানুষকে অসত্যের পথ থেকে সরিয়ে এনে সত্যের পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। তার সাথে সাথে বুদ্ধি, সিদ্ধি, সমৃদ্ধি সবকিছু নির্ভর করে ভক্তি শ্রদ্ধা এগুলি উপরে।

সেই কারণেই তো গণেশ পিতা-মাতাকে এতটাই ভক্তি শ্রদ্ধা করেছিলেন যার ফলে উপস্থিত বুদ্ধির বলে পিতা-মাতাকে প্রদক্ষিণ করেই আগেই বিবাহ করার তোড়জোড় করে ফেলেছিলেন, তাই না ! যেখানে কার্তিক সত্যি সত্যি বিশ্ব ভ্রমণ করতে বেরিয়ে পড়েন। আর তাইতো মহাদেব গণেশের সাথে বুদ্ধি, সিদ্ধি ও ঋদ্ধির সঙ্গে বিয়ে দেন।

সতী পার্বতীর দেহত্যাগের পর তার খন্ডকৃত দেহের এক একটি অংশ এক একটি জায়গায় পড়েছিল যেখানে এক একটি তীর্থস্থান তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে এই মল্লিকার্জুন মন্দির এর স্থলটি হল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তবে যাই হোক না কেন, এই মন্দিরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো মহা শিবরাত্রি এই দিন ভক্তদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। শিব রাত্রির উপবাস করে সারা রাত্রি ব্যাপি জাগ্রত অবস্থায় থেকে শিবের উপাসনা করা ভক্তদের সংখ্যা অগণিত হয়ে পড়ে এই দিন। শিবের পছন্দের ফুল, ফল, মিষ্টি নিবেদন করেন ভক্তরা, শিবের পূজা করে থাকেন এই মন্দিরে।

তাছাড়া প্রতিনিয়ত এই মন্দিরে ভক্তদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এই মন্দিরটির ঐতিহ্য দক্ষিণ ভারতের অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীশৈলম এর মানুষদের সাথে সাথে প্রতিটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের কাছে অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top