স্বাস্থ্য বীমা কি? স্বাস্থ্য বীমা আপনার জন্য ঠিক কি ভুল

বর্তমান সময়ে যা কিছু চলছে তার থেকে লড়ার জন্য অবশ্যই হেলথ ইন্সুরেন্স (Health Insurance) প্রয়োজনের কথা এখন সবাই বলে থাকে। আপনারা সকলেই হেলথ ইন্সুরেন্স অর্থাৎ স্বাস্থ্য বীমা সম্পর্কে শুনেছেন কিন্তু হয়তো এই ইন্সুরেন্স সম্পর্কে সঠিকভাবে ধারণা নেই। আজ আমরা আপনাদের এই হেলথ ইন্সুরেন্স সম্পর্কে সকল খুটিঁনাটি তথ্য আপনাদের জানাতে চলেছি। তাহলে আসুন এই হেলথ ইন্সুরেন্স সম্পর্কে সবকিছু জেনে নিন।

হেলথ ইন্সুরেন্স কি?

হেলথ ইন্সুরেন্স এমন একটি ইন্সুরেন্স যা একজন ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয় জনিত ঝুঁকি বহন করে ঐ ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয় পরিশোধ করে। চিকিৎসা ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে ডাক্তারের বিল, ঔষধ খরচ, হাসপাতালের বিল, অপারেশনের বিল ইত্যাদি।


ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ঝুঁকি এবং সম্ভব্য চিকিৎসা ব্যয়ের উপর নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ইন্সুরেন্স প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য আলাদা মাসিক/ত্রৈমাসিক অথবা বার্ষিক প্রিমিয়াম/কিস্তির হার নির্ধারন করে থাকে। হেলথ ইন্সুরেন্স প্রতিষ্ঠান সরকারী, আধা সরকারী বা বেসরকারী যে কোন প্রকারের প্রতিষ্ঠান হতে পারে।

হেলথ ইন্সুরেন্স পলিসি কিভাবে হয়? 

হেলথ ইন্সুরেন্স হলো বীমা কোম্পানীর সাথে ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের একটি চুক্তি। এই চুক্তি এককালীন হতে পারে অথবা নবীকরণ যোগ্য (Renewable) হতে পারে। ইন্সুরেন্সর মেয়াদ ৩ মাস, ১ বছর অথবা জাতীয় পলিসিতে সারাজীবনের জন্য বাধ্যতামূলক হতে পারে।

আপনার কি ধরনের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির খরচ ইন্সুরেন্স কোম্পানী বহন করবে তার একটি তালিকায় ইন্সুরেন্স কোম্পানী ও ইন্সুরেন্স গ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চুক্তি সাক্ষরিত হয়ে থাকে। চলুন দেখি একটি হেলথ ইন্সুরেন্স-এ কি থাকে।

প্রিমিয়াম

ইন্সুরেন্স গ্রহিতা হেলথ ইন্সুরেন্স প্রদানকারী কোম্পানীকে ইন্সুরেন্স বাবত যে টাকা প্রদান করে তাকে প্রিমিয়াম বলে। প্রিমিয়াম ইন্সুরেন্স চুক্তির শুরুতেই দুইপক্ষের ঐক্যমতে নির্ধারিত হয়ে থাকে। প্রিমিয়াম পরিশোধ পূর্ব নির্ধারিত চুক্তি অনুসারে মাসিক, ত্রৈমাসিক, বার্ষিক হয়ে থাকে। প্রিমিয়ামের পরিমান সাধারনত বয়স, স্থান, মেডিক্যাল রিপোর্ট, ধুমপানের অভ্যাস এবং ইন্সুরেন্স গ্রহীতা যে প্যাকেজ নিতে চান তার উপর নির্ভর করে থাকে।

মূল্যছাড়

ইন্সুরেন্স গ্রহীতা অসুস্থ্যতাজনিত কারনে তার চিকিৎসা ব্যয়ের একটা অংশ চুক্তি অনুযায়ী ইন্সুরেন্স কোম্পানি বহন করবে, এই ইন্সুরেন্স কোম্পানীর বহনকৃত অংশ মূল্যছাড় হিসেবে বিবেচিত হয়। ডাক্তারের বিল, হাসপাতালের বিল, ঔষধ খরচ, অপারেশন খরচ ইত্যাদি খরচ হেলথ ইন্সুরেন্সর আওতাধীন থাকে।

ক্ষতিপূরন সীমা

অনেক ক্ষেত্রে হেলথ ইন্সুরেন্স চুক্তিতে উভ্য়পক্ষের ঐক্যমতে একটি ক্ষতিপূরন সীমা উল্যেখ করা থাকে। কোন স্বাস্থ্যের সমস্যায় ঐ সীমা অতিক্রম করলেও ক্ষতিপূরন সীমা পর্যন্তই ইন্সুরেন্স কোম্পানী বহন করে থাকে। অনেক সময় ইন্সুরেন্স চুক্তিতে সকল প্রকার রোগের কথা লেখা থাকে না, চুক্তি অনুযায়ী লিখিত রোগ ব্যতীত ক্ষতিপুরন পাওয়া যায় না।

হেলথ ইন্সুরেন্স আপনার জন্য সঠিক নাকি ভুল? 

পৃথিবীর সকল উন্নত দেশেই হেলথ ইন্সুরেন্স এক জনপ্রিয় ব্যবস্থা। অনেক উন্নত দেশেই হেলথ ইন্সুরেন্স করা বাধ্যতামূলক। আমাদের দেশে ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা অনেক দিন থেকে গড়ে উঠলেও আমাদের সমাজে এখনো অনেকেরই হেলথ ইন্সুরেন্স নিয়ে স্বচ্ছ ধারনা নেই। তাই আমরা  অনেক সময়ে বুঝতে পারিনা হেলথ ইন্সুরেন্স আমাদের জন্য সঠিক নাকি ভুল। আসুন দেখে নেই হেলথ ইন্সুরেন্সর কিছুদিক।

স্বাস্থ্যের ঝুঁকির ক্ষেত্রে আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া যায়

আমাদের জীবনে সুহেলথের মূল্য সবচেয়ে বেশী। আমরা কখন অসুস্থ্য হবো তা কেউ বলতে পারিনা। আর অসুস্থ্য থাকাকালীন সময়ে চিকিৎসা ব্যয় আমাদের একটা বড় আর্থিক বোঝা তৈরি করে থাকে । অনেক সময় দেখা যায় অর্থের অভাবে অনেকের চিকিৎসাঠিক মত হচ্ছে না। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হেলথ ইন্সুরেন্স আমাদের কাছে দুঃসময়ে আলোর কিরণ হয়ে আসে।

হেলথ ইন্সুরেন্স আমাদের স্বাস্থ্য জনিত ব্যয়ভার বহন করে আমাদের আর্থিক বোঝা কমিয়ে দেয় । তাই এই বিবেচনায় হেলথ ইন্সুরেন্স আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের খারাপ সময়ে অনেক উপকারী ভুমিকা পালন করে থাকে। এই ইন্সুরেন্স আপনার আর্থিক নিরাপত্তা দান করে থাকে। সবচেয়ে বড়কথা, আমাদের অসুস্থতাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য বীমা আমাদের আর্থিক দুঃচিন্তা থেকে মুক্তি প্রদান করে।

হেলথ ইন্সুরেন্স চুক্তিগুলো সহনশীল থাকে

অনেক সময় আমরা হেলথ ইন্সুরেন্সর চুক্তি নিয়ে টেনশন করি। আমি ঠিকভাবে প্রিমিয়াম দিতে পারবো কিনা, এত বছর প্রিমিয়াম চালিয়ে যেতে পারবো কিনা, প্রিমিয়াম না দিতে পারলে কি হবে, আমি অসুস্থ্য হলে কিভাবে টাকা পাবো।

সেক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স কোম্পানীগুলি খুব সহজেই আপনার চাহিদা ও সামর্থের উপর ভিত্তি করে ইন্সুরেন্স চুক্তি সাজিয়ে থাকে । এখানে আপনার চাহিদা ও সামর্থের পরিমান গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়।

হেলথ ইন্সুরেন্সর বিনিয়োগে ট্যাক্স থেকে ছাড় পাওয়া যেতে পারে

হেলথ ইন্সুরেন্সর প্রিমিয়াম দিয়ে আপনি বার্ষিক কর রেয়াত পেতে পারেন। নির্দিষ্ট অর্থবছরে আপনি যতটাকা জমা দেবেন তার অনুসারে আপনি ট্যাক্স থেকে ছাড় পাবেন। হেলথ ইন্সুরেন্স থেকে প্রাপ্ত আয়ের জন্য কোন ট্যাক্স দিতে হয় না। এভাবে আপনি হেলথ ইন্সুরেন্স থেকে কর সুবিধা নিয়ে পারেন।

নিম্ন হারের প্রিমিয়াম

সাধারনত বয়স, মেডিক্যাল রিপোর্ট ও জীবনযাত্রার মান অনুসারে হেলথ ইন্সুরেন্সর প্রিমিয়াম মাসিক কিস্তিতে খুবই কম দিতে হয়, যা আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় কোন প্রভাব বিস্তার করে না। গ্রাহক খুব সহজেই তার নির্ধারিত হেলথ ইন্সুরেন্সর প্রিমিয়াম দিয়ে যেতে পারে।

ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সুবিধা

হেলথ ইন্সুরেন্সয় বিনিয়োগ করা থাকলে আপনি জমাকৃত বিনিয়োগ দেখিয়ে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া যায়। আমরা কখন বিপদে পড়বো বলতে পারি না। তাই আর্থিক বিপদে পড়লে হেলথ ইন্সুরেন্সয় বিনিয়োগ আপনাকে লোন নিতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে লোনের পরিমান ইন্সুরেন্স পলিসি অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।

সঞ্চয়ের মানষিকতা

আমরা অনেক সময়েই যা উপার্জন করি তা বর্তমানের কাজে ব্যয় করে ফেলি। কোন সঞ্চয় করি না। যা পরবর্তিতে আমাদের বিপদের দিনে বড় আকারের দুঃচিন্তা নিয়ে আসে।

তাই হেলথ ইন্সুরেন্সর মাধ্যমে আপনি মাসে মাসে বা বছরে উপার্জনের কিছু কিছু অংশ জমা রাখতে পারেন। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় কোন একদিন অসুস্থ্য হলে আপনার জীবনের ঢাল হয়ে দাঁড়াবে। এর মাধ্যমে আমাদের মাঝে সঞ্চয়ের মানষিকতা গড়ে উঠে।

মানসিক শান্তি

আপনার হেলথ ইন্সুরেন্স শুধু আপনার অসুস্থ্যতার সময় কাজে দিবে না, আপনার সুস্থ্য অবস্থায়ও ভবিষ্যৎ আর্থিক নিশ্চয়তা দেখে নিশ্চিন্ত করবে। যা আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃচিন্তা কমাবে এবং মানষিক প্রশান্তি দান করবে।

এভাবে আমরা দেখতে পাই যে, হেলথ ইন্সুরেন্স আমাদের ব্যাক্তি জীবনে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিমাসের জমানো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টাকা আপনার স্বাস্থ্য পরিচর্যায় মূখ্য ভূমিকা রাখে। তাই আজকের এই আধুনিক যুগে আমরা বলতে পারি, হেলথ ইন্সুরেন্সর মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যতের ভাবনা অনেকটাই কমে আসে এবং আমাদের মনে প্রশান্তি এনে দেয়। আমাদের উচিত সমাজে স্বাস্থ্য বীমার উপকারীতা নিয়ে আলোচনা করা এবং সমাজের নানা শ্রেনীর মানুষের জীবনের চরম বিপদের মূহুর্তে ইন্সুরেন্স থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে আর্থিক ঝুঁকি কমিয়ে আনা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top