কষ্ট হলে আমাদের চোখ দিয়ে জল পড়ে অথবা আমরা কাঁদি, আপনারা কি জানেন কান্না কতটা জরুরি আর চোখে জল থাকা কেন প্রয়োজন? তাহলে চলুন জেনে নিন এই বিষয়ে
ভিজে ও আর্দ্র চোখ যেমন জ্বলজ্বল করে, তেমনি বিভিন্ন রকমের চোখের সমস্যা থেকে চোখকে রক্ষা ও করে। সেইজন্যই তো অনেক সময় দেখা যায় কান্নার মাধ্যমে চোখের জলে চোখ যখন ভিজে যায় চোখের বিভিন্ন রকমের জীবাণু এবং বাইরের ধুলবালি পরিষ্কার হয়ে বেরিয়ে যায় চোখের জলের সাথে।
তবে চোখের যে প্রাকৃতিক জল সেটাও কিন্তু শুকিয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে, ডাক্তারি ভাষায় যেটাকে ‘ড্রাই আই’ বলা হয়। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি কোনো অসুখ নয়, তবে একটি সিমটম কমপ্লেক্স যা টিয়ার ফ্লিমের নানান সমস্যায় দেখা দেয়।
কারন ১)
অনেকে হয়তো মনে করছেন যে ‘টিয়ার ফ্লিম’ সেটা আবার কি? আসলে আমাদের চোখের কর্নিয়া কে ভেজা রাখতে হয়, তা না হলে সেটা আর কাজ করার ক্ষমতায় থাকে না। আর সেই কারণেই তো কর্নিয়ার উপরে একটি জলের স্তর থাকে।
আর এই জলের স্তর কে বলা হয় টিয়ার ফ্লিম। তিনটি স্তর থাকে এটির।
১. মিউসিন লেয়ার,
২. অয়াকোয়াস লেয়ার,
৩. লিপিড অথবা তৈলাক্ত লেয়ার।
এই তিনটি লেয়ার এর মধ্যে যেকোনো একটি লেয়ার যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা কাজ করতে অক্ষম হয় তখন কিন্তু ড্রাই আই এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কারন ২)
টিয়ার ফ্লিম কর্নিয়া কে ভেজা রাখতে সাহায্য করে। তার সাথে সাথে কর্নিয়া কে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এবং পরিবেশ দূষণ এবং বাইরের ধুলোময়লা থেকে কর্ণিয়া কে রক্ষা করে।
তার সাথে সাথে চোখের পাতা যাতে চোখের উপরে সঠিকভাবে নাড়াচাড়া করে কাজ করতে পারে সেই দিকটাও বিশেষভাবে খেয়াল রাখে টিয়ার ফ্লিম।
কারন ৩)
তাছাড়া অন্যান্য নানা কারণে ড্রাই আই হতে পারে। যেমন, অয়াকোয়াস টিয়ার ডেফিশিয়েন্সি। যাকে কেরাটো কনজাংটিভাইটিস সিক্কা বলা হয়। ভিটামিনের অভাবে গলবেট সেল যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন কিন্তু দেখা দিতে পারে এই ড্রাই আই এর সমস্যা।
সেই কারণে কিন্তু রাতকানার মত রোগ হতে পারে। চোখে বাইরে থেকে ক্ষারীয় কোন পদার্থ বা এসিড ঢুকে গেলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
কারন ৪)
তাছাড়া রয়েছে কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম। এই রোগের উপসর্গ হলো চোখে সর্বদা ক্লান্তি ভাব এবং চোখে ঝাপসা দেখা। বিশেষ করে বইপড়া, গাড়ি চালানো, টিভি দেখা, এসব ক্ষেত্রে চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা হতে পারে।
এই সময় মনে হতে পারে যে চোখ শুকিয়ে যাচ্ছে অথবা খচখচ করা, ভিতরে কিছু পড়েছে এমন অনুভব হওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, চোখ চুলকাতে থাকা, এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চোখে সর্বদা অস্বস্তিভাব বজায় থাকবে। আপনি হয়তো সারা দিন একটানা কম্পিউটারে কাজ করলেন তারপর বিকেল থেকে হঠাৎ করেই আপনার কোনো কারণ ছাড়াই মেজাজ হারানোর সমস্যাটাও কিন্তু ড্রাই আই এর কারণেেই হতে পারে।
কারন ৫)
সর্বদা চোখ দুটোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখার ফলে যে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অপরিষ্কার হাতে সর্বদা চোখে হাত দেওয়ার জন্য চোখের মধ্যে জীবাণু ধুলোবালি চলে যেতে পারে, তার ফলে এলার্জি এবং চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কারন ৬)
সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ চোখ না ধোয়ার ফলে বাতাসে মিশে থাকা ছোট ছোট ধূলিকণা এবং জীবাণু চোখে গিয়ে জমা হতে থাকে। তার ফলে চোখের কর্নিয়ার ভীষণভাবে ক্ষতি হয়।
সে ক্ষেত্রে কিন্তু দিনে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় বার পরিষ্কার জল দিয়ে চোখ ধোয়ার ফলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন আপনি।
কারন ৭)
একটানা অনেকক্ষণ টিভি দেখা অথবা কোন কম্পিউটার মোবাইলের স্ক্রীনে চোখ আটকে থাকার ফলে চোখের কর্নিয়া ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেক্ষেত্রে কিন্তু চোখের আলাদা করে যত্ন নেওয়াটা জরুরি।
তবে এখন হয়তো অনেকেই মনে করতে পারেন যে এই সমস্যা এখন দৈনন্দিন জীবনে দেখা দিতেই পারে।
কারণ যেসব কারণে ড্রাই আই এর সমস্যা দেখা দেবে তা কিন্তু প্রতিনিয়ত চলছেই। তবে হ্যাঁ, এর চিকিৎসা অবশ্যই আছে, তবে সেক্ষেত্রে কিন্তু প্রথমেই দিনে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচবার পরিষ্কার ঠান্ডা জলে চোখ পরিষ্কার করা দরকার।
প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে জল। যার ফলে চোখেও সেই জল পর্যাপ্ত পরিমাণ পৌঁছাতে পারে। অতিরিক্ত ধুলো ধোঁয়া জায়গা থেকে নিজেকে দূরে রাখাটা জরুরি।
দূষণ এবং আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে চোখ দুটো কেও সুরক্ষিত রাখার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা কিন্তু আপনাকে নিতেই হবে। চোখের উপযুক্ত সানগ্লাস ব্যবহার করুন বাইরে এবং ধুলো-বালি জায়গায় যাওয়ার আগে। প্রথমত এই উপায় পালন করলে চোখের এই সমস্যাগুলি অনেকাংশ কমতে শুরু করবে এবং সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
তবে একটা কথা না বললেই নয় যে, এই সমস্যা যখন অতিরিক্ত হয়ে যাবে তখন আর নিজে থেকে চিকিৎসা করার কোন দরকার নেই। কেননা এটা আর তখন আপনার হাতে থাকবে না, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
চোখ আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এর মধ্যে একটি অন্যতম অঙ্গ। যার মাধ্যমে আমরা সুন্দর পৃথিবী কে সুন্দর ভাবে দেখতে পারি। তাই চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম এবং সুরক্ষা বজায় রাখাটা আপনার কর্তব্য।
চোখ খুবই সূক্ষ্ম একটি অঙ্গ। যা যত্নে রাখার ফলে ভালো থাকে এবং ধুলোবালি পর্যাপ্ত পরিমাণ দেখভাল না করার জন্য এই সব ধরনের সমস্যা এবং তার সাথে ড্রাই আই এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চোখে সব সময় আদ্রতা বজায় রাখার জন্য যা যা করণীয় তা করতে ভুলবেন না কিন্তু।