চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধের উপায়

চুলের সমস্যায় আমরা সকলেই ভুগে থাকি। চুল পড়া, চুল শুষ্ক হওয়া, চুলের আগা ফেটে যাওয়া ইত্যাদি নিয়ে আমরা সবসময়ই চিন্তিত থাকি। ছেলেদের সাধারণত চুলের আগা ফাটার সমস্যা হয়না, কারণ তারা ছোট চুল রাখে।

এই সমস্যায় বিশেষত মেয়েরাই পড়ে। যেসব মেয়েরা বড় চুল রাখতে পছন্দ করে, তারা এই সমস্যার কারণে চুল বড় রাখতে পারেনা৷ চুলের আগা ফেটে গেলে তা দেখতে মোটেই ভাল লাগেনা, আর কোনভাবেই সেটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়েও নেওয়া যায়না। এজন্য চুলের আগা ফাটা দূর করতে করণীয় উপায় নিয়ে আমরা অনেক চিন্তায় পড়ে যাই।

তবে চিন্তা দূর করতেই আমাদের আজকের পোস্ট। কিভাবে চুলের আগা ফাটা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন সেটা নিয়েই আজকের পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধে করণীয়

১. চুলের আগা কেটে ফেলা

চুলের যে অংশ ফেটে গেছে সেখান থেকে সমান করে চুল কেটে ফেলুন। অনেক সময় পুরা চুলেই ফাটা থাকে, সেক্ষেত্রে শুধু নিচের দিকের আগার অংশের চুল কেটে ফেলুন। এভাবে প্রতি মাসে অল্প অল্প করে চুল কেটে ফেলুন।

প্রতি মাসের কথা এজন্য বলা হয়েছে কারণ, তাহলে যেটুকু চুল কেটে ফেলেছেন সেটা আবার বেড়ে যাবে একমাসেই। যারা লম্বা চুল পছন্দ করেন তাদের জন্য এটা উপকারী হবে। প্রতি মাসেই ফাটা আগার চুল কেটে ফেললে চুল ফাটার প্রবণতা আস্তে আস্তে কমে আসবে।

২. অয়েল ম্যাসাজ করা

চুলের যত্নে ও পুষ্টির জন্য চুলে তেল দেওয়া প্রয়োজন। আমরা চুলে তেল দিতেই চাই না এখন, তেল দিলে চুলে ময়লা জড়ায়, চুল দেখতে স্টিকি লাগে এরকম আরও অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু চুলের স্বাভাবিক তেল বজায় রাখতে চুলে তেল দেওয়া খুবই প্রয়োজন।

মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে চুলে নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করতে হবে। সপ্তাহে তিনদিন চুলে হট অয়েল ম্যাসাজ করলে চুল ফাটার সমস্যা কমে আসবে। ঝলমলে স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল ফাটার সমস্যা কম হয়।

৩. চুলের যত্নে হেয়ারপ্যাক

চুলের পুষ্টি বজায় রাখতে কলা ও টকদই মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। এটা চুলের রুক্ষতা দুর করতে সাহায্য করবে। চুলের রুক্ষতা, শুষ্কতা থেকেই মূলত চুল ফেটে যাওয়ার সমস্যা শুরু হয়। এই ফাটার সমস্যা দূর করতে চুলে পুষ্টির দরকার।

চুলে শ্যাম্পু করার আগে তেলের সাথে লেবু মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। তারপর ৩০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। চুল শুকানোর আগে সিরাম ব্যবহার করুন। চুলের উজ্জ্বলতা বজায় থাকবে। ফাটার সমস্যাও কমে যাবে।

৪. চুল বেধে রাখুন

চুল সবসময় ছেড়ে রাখলে তাতে ধুলাবালি বেশী জমে, আর চুল পড়া এবং ফাটার সমস্যা দেখা দেয়। চুল ফাটার সমস্যা দূর করতে চাইলে চুল বেধে রাখুন।

রাতে ঘুমানোর আগেও চুল ছেড়ে ঘুমাবেন না, বালিশের সাথে ঘর্ষণে চুল ফেটে যায়। চুলে হালকা বেণী করুন অথবা খোপা করে ঘুমাতে যান। আগা ঢাকা থাকলে ফাটার সমস্যা কমে যাবে।

৫. চুল ঝাড়বেন না

অনেকেই স্নানের পর চুলে তোয়ালে দিয়ে বাড়ি দেন। যাতে চুলের জল ঝরে যায়। এতে করে চুলের আগা ফেটে যায়।

চুল ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। হালকা রোদ বা ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন। চুল ঝাড়লে চুলের আগা ফেটে নষ্ট হয়ে যাবে।

৬. অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার

অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহারে চুলের ক্ষতি হয়। অতিরিক্ত হেয়ার জেল, স্প্রে, সিরাম, তেল, কোনকিছুই চুলের জন্য ভাল নয়।

রিবন্ডিং করালেও চুলের আগা কেটে ঝরে যায়। এগুলো করা থেকে বিরত থাকুন। নিয়ম মেনে পরিমিত প্রসাধনী ব্যবহার করুন।

৭. সুষম খাদ্যাভ্যাস

চুলের যত্ন কেবল বাইরে থেকে নিলে হবেনা। চুল ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন।

ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। এগুলো চুলকে ভেতর থেকে সুন্দর করে তুলবে। চুল থাকবে ঝলমলে ও সুন্দর।

৮. নিয়মিত ব্রাশ করুন

চুল প্রতিদিন ১০০ বার ব্রাশ করুন। এতে রক্ত চলাচলের মাত্রা বেড়ে যাবে, চুল প্রাকৃতিক ভাবেই উজ্জ্বল ও মসৃণ দেখাবে। চুল পড়ার মাত্রাও কমে যাবে, ফাটার সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।

উপসংহার

চুল ফাটার সমস্যা হয় অযত্ন ও অপুষ্টি থেকে। একবারে সমস্যার সমাধান করা না গেলেও নিয়মিত যত্নের মাধ্যমে চুলের ফাটার সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। উপরিউক্ত নিয়ম মেনে নিয়মিত চুলের পরিচর্যা করুন। চুল সুস্থ ও সুন্দর থাকবে।  আগা ফাটার সমস্যা একেবারেই কমে যাবে।

সুপ্রিয় পাঠক আশা করি পোস্টটি চুল ফাটা প্রতিরোধ করতে আপনাকে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে কোন মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন।  আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top