মোবাইল ছাড়া শিশুদের খাওয়ানোর উপায় | Ways to Feed Children Without Mobile

শিশুরা বরাবরই খাওয়া থেকে বিমুখ হয়ে থাকে। মায়েদের অতিরিক্ত টেনশন এ থাকতে হয় শিশুদের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার না পেলে শরীরে পুষ্টি অপর্যাপ্ত থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে রোগ  প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে শিশুদের শরীরে।

ইদানিং তো বাচ্চারা মোবাইল ছাড়া খেতেই চায় না। কোন কিছু তাদের সামনে দেখাতে হবে মোবাইলে, তারপরে খাবার মুখে তুলবে। এ যেন এক বড় সমস্যা

Ways to Feed Children Without Mobile
Ways to Feed Children Without Mobile

খাওয়া-দাওয়ার দিকে কোন খেয়াল নেই, খেয়াল শুধুমাত্র মোবাইলে, তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অভিনব কোনো পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। তাতে শিশুর শরীরের পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়া তে মনোযোগটা আসতে পারে।

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু অভিনব উপায় সম্পর্কে –

১) চড়ুইভাতি করা :

পিকনিক অথবা চড়ুইভাতি, হৈ-হুল্লোড়, এসব কিন্তু বাচ্চারা ভীষণ পছন্দ করে। তাই যতটা পারবেন যখন দেখবেন শিশু খাওয়ার প্রতি অনীহা দেখাচ্ছেছে, ঘরেতেই ছোট করে পিকনিক বানিয়ে ফেলুন পরিবারের কজন কে নিয়ে।

দেখবেন শিশু খাওয়া-দাওয়ার দিকে কতটা ঝুঁকছে। রান্নার সরঞ্জাম নাড়াচাড়া এবং কাঁচা হাতে রান্না কিংবা হুল্লোড় করে রান্না করার জায়গাতে তার আনন্দ সবটাই তাকে প্রভাবিত করতে পারে অনেকটাই।

মায়েরা সাথে থাকুন প্রয়োজনে, অবশ্যই মায়ের সাথে থাকলে শিশুদের আগ্রহ টা আরেকটু বেড়ে যায়। যেহেতু তারা অনেকটাই ছোট, সুবিধা অসুবিধা গুলো দেখে নেওয়া জরুরী। তারপর আনন্দের সাথে খাওয়া-দাওয়া করলে সেও কিন্তু পরিমাণমতো খাবার খেতে ইচ্ছুক হবে।

২) পছন্দের রেসিপি :

বাড়ির সবার জন্য সেই রেসিপি বানানো সম্ভব না হলেও শুধুমাত্র শিশুর জন্য আলাদা করে সেই রেসিপিটি বানানোর চেষ্টা করুন। যতটা পরিমাণ খাবার সে স্বাভাবিকভাবে খেত পছন্দের রেসিপি পেলে তার থেকে পরিমাণে একটু বেশি খেতে পারবে।

৩) খাবার প্লেটে আঁকি-বুকি :

যে প্লেটে শিশুকে খেতে দেবেন সেই প্লেটে শিশুর খাবার একটু অন্য ভাবে সাজিয়ে রাখুন। কোন ফুল পাতা অথবা কোন কার্টুনের ছবি একে দিন খাবার দিয়ে। খাবার খাওয়ানোর সময় একটা একটা অঙ্গ কিংবা অংশ তাকে দেখিয়ে তার সাথে গল্প করে সেগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে এবং তার সাথে খাওয়ানোর পরিকল্পনা করতে হবে।

শিশুকে আগ্রহী করে তুলতে হবে সেই খাবার প্লেটের দিকে। দেখবেন অন্য জগৎ ভুলে গিয়ে আপনার সাথে গল্পের তালে খাবার খেতে ব্যস্ত থাকবে।

৪) খাওয়ানোর জন্য দোলনায় বসুন :

আজকাল ব্যস্ত জীবনে সকলেরই হাতে সময় কম, কিন্তু শিশুর খাওয়া-দাওয়ার বিষয়় এ  সেটা বললে কি আর চলবে? তাকে তো পরিমাণ মতো সময় দিতে হবে, তাই না।

তাই তার খাবার নিয়ে দোলনাতে বসুন। বাচ্চারা দোলনা চড়তে ভীষণ পছন্দ করেে। তার সাথে সাথে আপনাকেও দোলনা চড়ার অভ্যাস  তৈরি করে নিতে হবে। গান শোনান, তার সাথে গল্প করুন এবং খাবার খাওয়াতে থাকুন। দেখবেন আপনার শিশু এই অভ্যাসের অভ্যস্ত হয়ে পড়লে মোবাইল ছাড়াই এই ভাবেই খাবার খেতে বেশি পছন্দ করবে।

৫) হেঁটে বেরিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন :

শিশুরা কখনোই এক জায়গায় থাকতে পছন্দ করে নাা। সেই জন্যই তো কেউ যদি বাইরে কোথাও যাওয়ার জন্য রেডী হয়়, তাহলে কিন্তু শিশুরা তাদের দিকেই বেশি আকৃষ্ট হয়়। তারা সবসময় ঘোরাঘুরি হাঁটাচলা এইসব পছন্দ করে। তাই এক জায়গায় বসিয়ে খাওয়ানো পরিকল্পনা করলে  আপনি ব্যর্থ হতে পারেন।

সেক্ষেত্রে তার সাথে বাইরে অথবা ঘরের মধ্যে অথবা বড় জায়গায় ছোটাছুটির মাধ্যমে, হাঁটাচলার মাধ্যমে, তার সঙ্গে খেলা করার মাধ্যমে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। যে খাবারই হোক না কেন, তার সাথে যদি এভাবেই খাওয়ানোর মাধ্যমে তাকে খাওয়ানো যায়়, তাহলে ক্ষতি কি? আপনিও আনন্দিত হবেন তার সাথে শিশুরও পুষ্টি বজায় থাকবে।

৬) স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস :

ছোট থেকে শিশুরা খাওয়া সম্পর্কে অতটাও বোঝেনা।তাদেরকে যেভাবে খাওয়ানোর অভ্যাস তৈরি করবেন তারা কিন্তু সেভাবে খেতে অভ্যস্ত হবে। তার সাথে যেকোনো খাবার বুঝে-শুনে তাদেরকে দেওয়া উচিত ।

স্বাস্থ্যকর খাবার এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার আলাদাভাবে রাখার চেষ্টা করুন। শিশুকে যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন ।সেক্ষেত্রে তাদের রুচিবোধ স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকেই থাকবে।

আবার যখন অস্বাস্থ্যকর খাবার খাবেই না, তাহলে তার স্বাদ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ও থাকবে না। পরবর্তীতে সেই অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি প্রবণতাও থাকবে না। দিন যাওয়ার সাথে সাথে শিশুর স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে।

৭) গল্প গানের মাধ্যমে খাওয়ান :

শিশুরা গল্প এবং গান শুনতে ভীষণ পছন্দ করেে। বিশেষ করে মায়েরা যখন তাদের অতিযত্নে স্নেহে উৎসাহের সাথে গল্প গান শুনিয়ে তার মাঝে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। তাহলে শিশুরা ভীষণ উৎসাহিত হয় এ বিষয়ে।

তারা আরো বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে বিভিন্ন রকমের গল্প এবং গান শোনার জন্য সে, তখন কিন্তুু আপনার মোবাইলের প্রয়োজন পড়বে না। শুধুমাত্র আপনাকে সচেতন এবং স্ট্রং ও সতেজ থাকাটা প্রয়োজন। এমনকি দেখবেন খাওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে শিশু ঘুমিয়ে পড়তে শুরু করেছে।

আপনার শিশুকে স্বাস্থ্যকর ও সুস্থ রাখার জন্য, শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে ভালো রাখার জন্য, যতটা সম্ভব যেকোনো উপায়ে মোবাইল থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।

কারণ এটা ছাড়া আরো অনেক ভাবে শিশুদের খাওয়ানো, ঘুমপাড়ানো যেতে পারে। না হলে মোবাইলের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেলে তারা তখন মোবাইল ছাড়া কোনো কাজই করতে ইচ্ছুক হবেনা।

পরবর্তীতে পড়াশোনার প্রতি ও অমনোযোগী হয়ে উঠবে। মেজাজ খিটখিটে, মোবাইল চাইই চাই। এই মোবাইলের আসক্তি থেকে শিশুকে যতটা সম্ভব দূরে রাখুন। আপনার শিশু থাকুক সুস্থ ও সুন্দর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top