2023 কলমি শাক চাষের সঠিক ও সহজ পদ্ধতি | 2023 Water Spinach Cultivation Method in Bangla

কলমি শাক একটি অতি পরিচিত শাক। এটি সাধারনত জলে জন্মে। এর কান্ড ফাকা থাকায় এটি জলে ভাসে। সাধারনত দুই ধরনের কলমি শাক দেখা যায়।

একটির ডাটা লাল আর একটির ডাটা সাদা সবুজ। এর কান্ড নরম ও রসালো হয়ে থাকে। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন।

Water Spinach Cultivation Method in Bangla
Water Spinach Cultivation Method in Bangla

আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।

আজ আমরা আপনাদের সাথে কলমি শাক চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই কলমি শাক চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।

জলবায়ু ও মাটিঃ

প্রায় সব ধরনের মাটিতেই কলমি ভালো জন্মে। এর জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু উপযোগী হয়ে থাকে।

দো আশ বা বেলে দোআঁশ মাটি যে মাটির নিচে এটেল মাটির স্তর রয়েছে সে ধরনের মাটি কলমি শাক চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

বপনের সময়ঃ

কলমি শাক সাধারনত সারা বছরই চাষ করা যেতে পারে। তবে চৈত্র মাস থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত এর বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।

জমি তৈরি ও বীজ বপনঃ

বীজ বপন করার জন্য জমি প্রথমে তৈরি করে নিতে হবে। জমি ৫-৬ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। জমি চাষ দেওয়ার সময় গভীর করে চাষ দিতে হবে।

লাইন করে বা ছিটিয়ে উভয় পদ্ধতিতেই বীজ বপন করা যেতে পারে। লাইনে বীজ বপন করলে বীজের যত্ন নিতে সুবিধা হবে।

এক লাইন থেকে আরেক লাইনের দূরত্ব হবে ২০ সেমি। এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ১৫ সেমি। এক সাথে ২ টি করে বীজ বপন করা যেতে পারে।

তবে চারা ঘন হয়ে গেলে ১টি রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। বাড়ির পাশে পতিত জমি বা আঙিনায় ও বীজ বপন করা যায়।

বীজ বপন করার আগে ১২ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রেখে  বীজ অঙ্কুরোদগম করে নিলে বীজ গজানোর হার বাড়বে।

বীজের হারঃ

সাধারনত প্রতি শতাংশে ৪০-৫০ গ্রাম হারে বীজ প্রয়োজন হতে পারে।

বীজ সংগ্রহঃ

কলমি ফুল সাধারনত শীতকালে ফুটে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় ফুল ভালো হয়। বীজ পরিপক্ক হয় ফাল্গুন মাসে।

গাছ থেকে বীজ নিয়ে তারপর রোদে শুকাতে হবে এবং তারপর বীজ আলাগা করে নিতে হবে। বায়ুরোধী পাত্রে বীজ সংরক্ষন করতে হবে।

চারা রোপনঃ

কলমি গাছের কান্ড কেটে ও রোপন করা যায়। সাধারনত শীতকালে বীজ উৎপন্ন হয়ে থাকে। বীজতলায় চারা উৎপাদন করে লাগাতে হলে ১৫-২০ দিনের চারা রোপন করা উচিত।

সার ব্যবস্থাপনাঃ

উন্নত ফলন পেতে হলে সার ব্যবহার করতে হবে। মাটিতে সার প্রয়োগের আগে মাটি পরীক্ষা করে নিতে হবে। যদি মাটি পরীক্ষা করা সম্ভব না হয় তাহলে স্বাভাবিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে।

সাধারনত এক শতাংশে ইউরিয়া ৫৬০-৬৫০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০-৪৯০ গ্রাম, এমওপি ৪০০-৪৯০ গ্রাম এবং জৈব সার দিতে হবে ৩২-৪০ কেজি।

ইউরিয়া সার অর্ধেক ছাড়া বাকি সব সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া  সার ১ম, ২য়, ৩য় বার দিতে হবে।

ফসল তোলার সময় সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। যদি অল্প জায়গায় চাষ করা হয় তাহলে শুধু গোবর সার দিলেই হবে। সার প্রয়োগের পর প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।

আগাছা দমনঃ

জমিতে যেন আগাছা না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কলমি শাক গাছ ছোট আকৃতির হয়ে থাকে। আগাছা জন্মালে তা গাছের খাবারে ভাগ বসাবে।

তাছাড়া আগাছা রোগ পোকা মাকড়ের আবাস হিসেবে কাজ করে থাকে। গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। তাই আগাছা জন্মালে সাথে সাথে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

সেচঃ

ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ প্রদান করতে হবে। শুকনা মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে সাধারনত সেচ দিতে হবে না।

তবে যদি অনাবৃষ্টি হলে তখন সেচ দিতে হবে। তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

অন্যান্য পরিচর্যাঃ

বীজ ছিটিয়ে বপন করার পর চারা বেশি ঘন হয়ে গেলে তা তুলে হালকা করে দিতে হবে। প্রতি বেডে ১৫ সেমি পর পর একটি করে চারা রাখতে হবে আর বাকি গুলো তুলে ফেলে দিতে হবে।

ফসল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পাতার আকার, আকৃতি, রঙ অন্যরকম হলে তা তুলে ফেলতে হবে।

রোগ পোকা দমনঃ

কলমি শাক গাছে রোগের আক্রমন তেমন দেখা যায় না। তবে মাঝে মাঝে কিছু পোকার আক্রমন দেখা দিতে পারে। যেমন বিটল, বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা।

এসব পোকা দেখা দিলে হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। জমি বেশি স্যাতস্যাতে হওয়া যাবে না তাহলে গোড়া পচে যেতে পারে।

রোগ আক্রমন করলে প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

সংগ্রহঃ

বীজ বপন করার ২৫-৩০ দিনের মধ্যে শাক সংগ্রহ করা যায়। প্রথম বার শাক সংগ্রহের ৮-১০ দিন পর পর পাতা তোলা যাবে। কলমি শাক লতা জাতীয় হওয়ার কারণে একই গাছ থেকে বার বার শাক সংগ্রহ করা যায়।

ফলনঃ

উন্নত ভাবে চাষ করতে পারলে এক শতাংশ জমি থেকে ১৬০-১৮০ কেজি পর্যন্ত শাক পাওয়া যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top