বিবাহ পঞ্চমী 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Vivah Panchami 2024: History and Significance

বিবাহ পঞ্চমী 2024 (Vivah Panchami 2024 Date Time and Significance) 2024 বিবাহ পঞ্চমী ইতিহাস এবং জানুন বিবাহ পঞ্চমী কেন পালন করা হয়? বিবাহ পঞ্চমী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য বিবাহ পঞ্চমী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

বাঙালির প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতি নিয়ত উৎসব আনন্দের সীমা নেই। পূজা পার্বণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের উৎসব এর মধ্যে একটি বিশেষ উৎসব হল বিবাহ পঞ্চমী উৎসব। মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে পালন হয় এই বিবাহ পঞ্চমী উৎসব। এই শুভ মুহূর্তে রাম ও সীতার বিবাহ হয়েছিল।

বিবাহ পঞ্চমী ইতিহাস ও তাৎপর্য - Vivah Panchami History and Significance
2024 বিবাহ পঞ্চমী ইতিহাস ও তাৎপর্য – 2024 Vivah Panchami History and Significance

আর সেই কারণেই এই তিথিতে বিবাহ পঞ্চমী উৎসব পালিত হয়, শুধুমাত্র বাঙ্গালীদের নয়, সকল হিন্দু পরিবারে প্রতি মাসেই পালিত হয় নানা ধরনের উৎসব, বিভিন্ন পূজা থেকে শুরু করে আরো অন্যান্য উৎসব তো আছেই, তার মধ্যে একটি উৎসব হলো বিবাহ পঞ্চমী উৎসব।

গীতা জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

বিবাহ পঞ্চমী উৎসবের ইতিহাস 2024:

প্রচলিত কথা অনুসারে জানা যায় যে, রাজার জনক তার কন্যা সীতার বিবাহের জন্য স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করেছিলেন এবং সীতার বিয়ের জন্য বিভিন্ন দেশ, রাজ্য থেকে রাজারা এবং রাজ পুত্ররা উপস্থিত হয়েছিলেন এই স্বয়ংবর সভাতে। এই সভায় অংশ নিয়েছিলেন শ্রী রামচন্দ্র ও তার ছোট ভাই লক্ষণ। তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গুরু বিশ্বমিত্রও।

রাজা জনক তার কন্যা সীতাকে বিয়ে করার জন্য একটি শর্ত রেখেছিলেন, তিনি স্বয়ংবর সভায় ভগবান শিবের পিনাক ধনুক উত্তোলন করার কথা বলেন এই স্বয়ম্বর সভায় অংশগ্রহণকারী সদস্য দের। পূর্বসূরী রাজা দেবরথ শিব এর থেকে উপহার পেয়েছিলেন এই ধনুকটি। তাছাড়া এটি শিব ধনুক অথবা হরধনুক নামেও পরিচিত।

আর পূর্বপুরুষের সূত্র ধরেই এই ধনুকটি রাজা জনক পেয়েছিলেন। একে একে সকলেই ধনুক উত্তোলন করতে ব্যর্থ হলেও একমাত্র রাজা রামচন্দ্র সেই ধনুক অনায়াসে তুলে ফেলেন এবং সেটি দু’ভাগে ভাগ করে দেন।

এরপরই সীতার সঙ্গে রামের বিবাহ স্থির হয়। পুরান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সম্পন্ন হয়েছিল এই বিবাহ অনুষ্ঠান। সেই দিন থেকে পালিত হয়ে আসছে এই তিথি অথবা দিনটি বিবাহ পঞ্চমী উৎসব হিসাবে।

ভারত এবং নেপালের বিভিন্ন মন্দিরে পালিত হয় বিবাহ পঞ্চমী উৎসব। রামের জন্মভূমি অযোধ্যাতে ও ধুমধাম করে পালন করা হয় এই উৎসবটি। তাছাড়া এই উৎসবের দিনে ভক্তরা সারাদিন উপবাস করে থাকেন রামচন্দ্র এবং সীতার পূজা করে করার জন্য।

বিয়ের সমস্ত রকম বাধা এবং দাম্পত্য জীবনে অশান্তি দূর করতে ভক্তরা এই বিবাহ পঞ্চমী পূজা করে থাকেন। তাছাড়া বলা যেতে পারে যে, এই বিশেষ তিথি তে রাম ও সীতার বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেন তাদের ভক্তরা।

রাম সীতার মন্ত্র এবং অন্য বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে রাম ও সীতার বিবাহ বার্ষিকী পালন করে থাকেন ভক্তরা। অনেকে এই দিন উপবাস রাখেন, রাম ও সীতার বিশেষ পুজো করে সন্ধ্যের সময় উপবাস ভঙ্গ করে থাকেন। রাম এবং সীতার মূর্তি তে বিবাহ আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয় অনেক জায়গাতেই।

পরশুরাম জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

বিবাহ পঞ্চমী উৎসবের তাৎপর্য 2024:

হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এমনটা বিশ্বাস করেন যে, যদি কোন ব্যক্তির অথবা যদি কারো বিয়ের সমস্যা হয়, কেউ যদি দাম্পত্য জীবনের সমস্যা, অশান্তির রোশনালে পড়ে থাকেন, তাহলে এই বিবাহ পঞ্চমীর দিন উপবাস রেখে পূজা করলে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়। বিবাহ পঞ্চমীর বিশেষ তাৎপর্য আছে।

অনেকেই এই দিন বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হন অর্থাৎ বিয়ের দিন ঠিক করেন এই দিনে। অনেকেই বাড়িতে এবং মন্দিরে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায়, অনেক বাড়িতে এই দিন মিষ্টি প্রস্তুত করা হয় এবং আপনজন দের মধ্যে উপহার আদান-প্রদান করার প্রথাও  আছে অনেক জায়গায়।

অক্ষয় তৃতীয়া ইতিহাস ও তাৎপর্য

বিবাহ পঞ্চমী ব্রত পালন করার নিয়ম:

  • বিবাহ পঞ্চমীর দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে পরিষ্কার কাপড় পরে তারপর এই পূজার রীতি নিতে শুরু হয়।
  • এরপর রাম ও সীতার মূর্তিতে নতুন বস্ত্র দিতে হয়।
  • রামের মূর্তিতে হলুদ বস্ত্র এবং সীতার মূর্তিতে লাল বস্তু দেওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে।
  • বিভিন্ন ধরনের ফল, ফুল, মিষ্টান্ন অর্পণ করা হয়, রাম ও সীতার মূর্তিতে।
  • অনেক জায়গায় সম্পূর্ণ বিবাহ অনুষ্ঠান এর মত করে এই পূজা পালন করা হয়।
  • রাম ও সীতার বিবাহ সম্পন্ন করার মধ্যে দিয়ে অর্থাৎ বলা যেতে পারে যে বিবাহ পঞ্চমী, এই দিনটি রাম সীতার বিবাহ বার্ষিকীর দিন।
  • যে দিনটি রাম ও সীতার ভক্তরা খুবই নিষ্ঠা ভরে পালন করে থাকেন আবার অনেকেই এই দিন নিজেদের জীবনে সুখ-শান্তি এবং দাম্পত্য জীবন সুন্দরভাবে কাটানোর জন্য, বিবাহ পঞ্চমীর এই তিথিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকেন বিশেষ আশীর্বাদ প্রাপ্তির আশায়।

একটা বিবাহতে যেমন চারিদিক আলোকিত এবং মুখরিত হয়ে ওঠে, তেমনি এই বিবাহ পঞ্চমীর দিন রাম সীতার বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার আনন্দে অযোধ্যা নগরী সেজে ওঠে আলোক সজ্জায় এবং আরো অন্যান্য রাম মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই উৎসবটি খুবই সাড়ম্বরে।

এই উৎসব অনুসারে অনেক জায়গায় মেলা পার্বণ হয়ে থাকে। যেখানে স্থানীয় মানুষজন খুবই আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। বাচ্চা থেকে বড় সকলেই এই বিবাহ পঞ্চম উৎসবের শামিল হয়ে থাকেন। বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের খাবার, মিষ্টি এবং অন্যান্য নৈবেদ্য। যা রাম সীতাকে অর্পণ করা হয়।

আর সেগুলি পরে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়ে থাকে পরিবারের আরো অন্যান্য সদস্য দের মধ্যে এবং আশেপাশে। অনেকদিন আগে থেকেই চলে এই উৎসবের তোড়জোড়, চারিদিকে সাজানো থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা সবকিছুই হয় এই উৎসবের আগমনের জন্যই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top