সজিনা ডাটা আমাদের সবারই খুব প্রিয় একটি সবজী। এটাকে অলৌকিক উদ্ভিদও বলা হয়, এই সবজী বড় গাছে ধরে৷ সজিনা ডাটা ছাড়াও এর পাতা শাক হিসেবে রান্না করা যায়। শীতের শেষ এবং গ্রীষ্মের শুরুতে এই সবজীটি বাজারে ওঠে। সজিনার ডাটা দিয়ে ডাল অনেকেরই খুব প্রিয় খাবার।
গরমের দিনে এই সুস্বাদু সবজী খেতে যেমন ভাল লাগে, তেমনি এটা শরীরের জন্যও উপকারি। সজিনা ডাটার কিছু বিস্ময়কর উপকারিতা রয়েছে যা জানলে শুধু সবজী হিসেবে নয় এর উপকারিতার জন্যও খাওয়া উচিত বলে মনে হবে, আপনাদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় বিভিন্ন ফল ও সবজী বিষয়ে আমরা বিভিন্ন তথ্য আপনাদের জানানোর চেষ্টা করি।
আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে সজিনা ডাটার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। আশা করি পোস্টটি থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার অনেক তথ্য জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সজিনা ডাটার উপকারিতা:
১ সজিনা শরীরে পুষ্টি ও শক্তি জোগায়
সজিনা ডাটা ও শাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ও মিনারেল থাকে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দেহের রোগের প্রবণতা কমায়, শরীরে পুষ্টি ও শক্তির যোগান দেয়। শরীর কর্মক্ষম রাখে।
২. সজিনা লিভার ও কিডনি সুরক্ষিত রাখে
সজিনা ডাটাতে প্রচুর পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, এতে প্রচুর পানি ও ভিটামিন সি ও রয়েছে। এটা গরমের সময় খেলে শরীর ঠান্ডা থাকবে। লিভার ও কিডনি সুরক্ষিত থাকবে।
৩. সজিনার মূলের ছালের প্রলেপে দাদ উপশম হয়
যাদের চর্মরোগ আছে তারাই জানেন এর যন্ত্রনা কত ভয়াবহ, অনেকসময় রক্তের দূষনের কারনে চর্মরোগ দেখা দেয়, যা কোন বাহ্যিক ক্রিম বা মলম ব্যবহার করলে উপশম হয়না অথবা বারবার চর্মরোগ ফিরে আসে। কিন্তু এই সমস্যা দূর করতে সজিনা খুবই উপকারি।
সজিনাতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট, যা যেকোন চর্মরোগ উপশম করতে সাহায্য করে। দাদ একটি খুবই বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এটার হাত থেকে মুক্তি পেতে সজিনার মূলের ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে সেটা বেটে দাদে লাগালে দাদ খুব দ্রুত ভাল হয়।
৪. সজিনা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
সজিনা এমন একটি সবজী, যা কেবল রসনাবিলাস এর জন্যই খাওয়া যেতে পারে তাই ই নয়, এটা বিভিন্ন কঠিন ও যন্ত্রণ্রাদায়ক রোগ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে থাকে। সজিনাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্লুকোজ, ও পানি যা শরীরে চিনির ভারসাম্য বজায় রাখে।
শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে দেয়না ফলে ডায়াবেটিস বাড়তে পারেনা। ডায়াবেটিস একটি যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা৷ এটা থেকে বাঁচতে নিয়মিত সজিনা ডাটা খেতে পারেন।
৫.সজিনা খাবারের রুচি বৃদ্ধি করে
বাঙালী খুবই রসনাবিলাসী জাতি, তারা সবসময়ই খাদ্যে উপাদানের উপকারিতার পাশাপাশি তা যেন খেতেও ভাললাগে সেই চেষ্টা করে থাকে। এজন্য সবজী বিভিন্ন মশলা, মাছ, ডাল বা অন্যান্য উপাদানের সমন্বয়ে রান্না করা হয়, এর স্বাদ বৃদ্ধির জন্য।
এছাড়াও সজিনাতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা খাবারে রুচি বাড়ায়। এটা খুবই মুখরোচক একটি সবজী, যা বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। এর পাতা বেটে ঝাল, মরিচ, পেয়াজ দিয়ে ভর্তা করে খেতে পারেন অথবা এর ডাটা ডাল দিয়ে রান্না করে খেতে পারেন। উভয় প্রকার তরকারীই খুবই সুস্বাদু যা খাবারে রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
৬.সজিনা শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে
সজিনা যে শুধু মুখরোচক একটি সবজী তাই ই নয়, এর রয়েছে অনেক উপকারিতা যেমন এটা বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। বাড়তি ওজন আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর একটি সমস্যা। এর কারণে কাজকর্মে যেমন সমস্যা হয়, তেমনি দেখতেও বাজে লাগে। এই সমস্যা কমাতে সজিনা ডাটা খেতে পারেন। কারণ এতে ভিটামিন ও পানি রয়েছে যা ওজন বাড়তে দেয়না, কিন্তু শরীরে পুষ্টি যোগায়।
৭.সজনে খুশকি দূর করে
যাদের খুশকির সমস্যা রয়েছে কেবলমাত্র তারাই জানেন এটা কতটা বিরক্তিকর সমস্যা। কিন্তু এর সহজ সমাধান রয়েছে সজিনাতে। সজিনাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান।
এজন্য এর পাতার রস বেটে মাথায় স্নানের ৩০ মিনিট আগে যদি লাগিয়ে রাখেন, এরপর শ্যাম্পু করে ফেলেন তাহলে খুশকি যেমন দূর হবে তেমনি উকুনের সমস্যা থাকলে উকুনও দূর হয়ে যাবে। সপ্তাহে ২ বার সজিনা পাতার রস চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
৮.ক্ষতস্থান সারাতে সজিনা
প্রায়ই নানা দূর্ঘটনায় আমাদের দেহের বিভিন্ন অংশ কেটেছড়ে যায়, যারা গৃহিনী তারা সবসময়ই স্যাভলন বা এন্টিসেপটিক ব্যবহার করতে পারেন না। তাই তাদের জন্য সজিনা খুবই উপকারী এন্টিসেপটিকের কাজ করে থাকে।
সজিনার পাতাতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, ও এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় এটা যেকোন ক্ষতস্থান সারাতে ম্যাজিকের মত কাজ করে। দেহের কোন স্থান কেটে গেলে সজিনা পাতার পেস্ট লাগিয়ে দিতে পারেন, তাহলে ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।
৯. সজিনা ব্যাকটেরিয়ানাশক
আমাদের দেহেই রয়েছে ক্ষতিকারক এবং উপকারী নানা ব্যাক্টেরিয়া, উপকারী ব্যাক্টেরিয়া খাদ্যহজম, রোগের জীবাণু ধ্বংস করাসহ দেহের নানা কাজে সাহায্য করে। কিন্তু দেহের জন্য ক্ষতিকারক হচ্ছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াসমূহ, যা দেহের বিভিন্ন উপকারী উপাদানের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। আমাদের দেহের অভ্যন্তরে যেসব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া আছে, সেগুলো ধ্বংস করতে সজিনার জুড়ি নেই।
কারণ সজিনাতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যার জন্য সজিনা দেহের অভ্যন্তরে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
উপসংহার
সজিনার স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক, যা একটি পোস্টে বলে শেষ করা সম্ভব নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য, দূর্বল হজমশক্তি, যৌন দূর্বলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে চাইলে নিয়মিত সজিনা শাক ও ডাটা খেতে পারেন।
এটা আপনার শারীরিক অনেক সমস্যা দূর করবে, সাথে এটা খেতে খুবই সুস্বাদু, তাই ঔষধের মত অনিচ্ছায় খাওয়ার ঝামেলাও পোহাতে হবেনা। আশা করি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সজিনার উপকারিতা পোস্টটি আপনার সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনেক ভূমিকা রাখবে।
পোস্টটির বিষয়ে কোন তথ্য জানানোর হলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।