উল্টো রথযাত্রা 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Ulta Rath Yatra 2024: History and Significance

উল্টো রথযাত্রা 2024 (Ulta Rath Yatra 2024 Date Time and Significance) 2024 উল্টো রথযাত্রার ইতিহাস এবং জানুন উল্টো রথযাত্রা কেন পালন করা হয়? উল্টো রথযাত্রার তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য উল্টো রথযাত্রার গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

হিন্দুদের কাছে বর্ষার মধ্যে এই রথযাত্রা উৎসবটি উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষে দ্বিতীয় তিথিতে আয়োজিত হয় রথযাত্রা উৎসব। রথযাত্রা হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবতা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার তিনটি সুসজ্জিত রথে চেপে পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে মাসির বাড়িতে অর্থাৎ গুন্ডিচা মন্দিরে যাত্রা করা বিষয়টিকে বোঝায়।

উল্টো রথযাত্রা ইতিহাস ও তাৎপর্য - Ulta Rath Yatra History and Significance
উল্টো রথযাত্রা 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Ulta Rath Yatra 2024 History and Significance

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে জগন্নাথ দেব হলেন জগতের অধীশ্বর, জগত হচ্ছে বিশ্ব, আর নাথ হলেন ঈশ্বর তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তি লাভ হবে। তাকে আর জীব হয়ে জন্ম নিতে হবে না। এই বিশ্বাস থেকেই রথের উপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমা রেখে রথযাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

এছাড়া সাত দিন পূর্বে রথযাত্রা উপলক্ষে জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি অর্থাৎ গুন্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সাতদিন পর এই উল্টো রথ অর্থাৎ গুন্ডিচা মন্দির থেকে লীলাচলে জগন্নাথ দেবের মন্দিরে নিয়ে আসাকে উল্টো রথ যাত্রা বলা হয়।

জগন্নাথ রথযাত্রা ইতিহাস ও তাৎপর্য

এর আগে কথিত আছে যে, সত্য যুগে রাজা ইন্দ্রদুম্ন রাজার স্ত্রী গুন্ডিচা কে শ্রীকৃষ্ণ কে সন্তান হিসেবে প্রতিবছর নয় দিন তার কাছে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই প্রতিশ্রুতি রাখার জন্যই রথের শুরুর দিন গুণ্ডিচা মন্দির থেকে নীলাচলে জগন্নাথ দেবের মন্দিরে নিয়ে আসা হয়।

এছাড়া পুরীতে এই রথযাত্রা দেখতে সারা পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। ভক্তদের ভিড় উপছে পড়ার মতো। তিন ভাই বোনের গুন্ডিচা মন্দিরে অর্থাৎ যা জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি হিসেবে বিখ্যাত, সেখানে যাওয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয় রথযাত্রা।

তার সাত দিন পর মাসির বাড়ি থেকে পোড়া পিঠে খেয়ে আবার বাড়ির পথে ফিরে আসার যে যাত্রা তাকে উল্টোরথ বলা হয়। আর এই উল্টোরথ এর মধ্যে দিয়ে অর্থাৎ তিন ভাই বোনের বাড়িতে ফিরে আসার এই যাত্রা সমাপ্ত হলে এই উৎসব অর্থাৎ রথ যাত্রা উৎসব এর সমাপ্তি ঘটে।

রথযাত্রার ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, এর শুরু হয়েছিল সত্য যুগে। তখন উড়িষ্যার নাম ছিল মালব দেশ, মালব দেশের অবন্তি নগরে ইন্দ্রদুম্ন নামে সূর্যবংশীয় বিষ্ণু ভক্ত এক রাজা ছিলেন।

তিনি ভগবান বিষ্ণুর এই জগন্নাথ রুপী মূর্তির রথযাত্রা শুরু করার আদেশ পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই রাজা ইন্দ্রদুম্ন উড়িষ্যায় অবস্থিত পুরীর এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করেন এবং তার সাথে সাথে রথযাত্রার প্রচলন করেন।

জামাই ষষ্ঠী ইতিহাস ও তাৎপর্য

তবে এই রাজার রাজত্ব না থাকলেও বংশপরম্পরায় পুরীর রাজ পরিবার আজও বিরাজমান। রাজ পরিবারের উত্তর অধিকার প্রাপ্ত রাজা উপস্থিত হয়ে দেবতা জগন্নাথ, তাঁর বড় ভাই বলরাম এবং ছোট বোন সুভদ্রা দেবীর পরপর তিনটি রথের সামনে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করার মধ্যে দিয়ে রথের সম্মুখ ভাগে সোনার ঝাড়ু দিয়ে ঝাট দেওয়ার পরই পুরীর জগন্নাথ দেবের রথের দড়িতে টান পড়ে। তারপর শুরু হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা।

পুরীর রথযাত্রায় তিনটি রথ সমুদ্র উপকূলবর্তী জগন্নাথ মন্দির থেকে প্রায় ২ মাইল দূরে গুণ্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশ্যে অর্থাৎ যেখানে জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি সেই উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এবং সাত দিন পরে উল্টো রথের মাধ্যমে আবার বাড়িতে ফিরে আসে।

তাছাড়া জানা যায় যে, পুরীর জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুসরণ করে বাংলায় রথযাত্রার সূচনা হয়। লীলাচল থেকে এই ধারাটি বাংলাদেশের নিয়ে আসেন। তারপর চৈতন্য মহাপ্রভুর ভক্তরা অর্থাৎ বৈষ্ণবরা বাংলায় পুরীর রথযাত্রা অনুকরণে বাংলায় রথ যাত্রার প্রচলন করেন।

জগন্নাথ দেবের রথের দড়িতে টান দেওয়ার কাজকে অনেকে পুণ্যের কাজ হিসেবে গণ্য করেন। তাই এই দড়ি ধরে টান দেওয়ার জন্য অনেকেই সুযোগের অপেক্ষা করেন। যারা সুযোগ পান তারা অনেকটাই ভাগ্যবান, ভগবতী বলে মনে করা হয়। আর এই সময় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। যেটা একেবারে অবশ্যম্ভাবী, রথযাত্রাতে বৃষ্টি হবেই।

তাছাড়া রথ টানা শুরু হতেই একেবারে আশ্চর্যজনকভাবে অনেক জায়গায় হঠাৎ করে মুষলধারে বৃষ্টি নামে, আর সেই বৃষ্টিতে ভিজে সনাতন ধর্মের মানুষ রথ টানার পাশাপাশি একেবারে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে রথ টেনে তারা পূর্ণ অর্জন করছে বলে মনে করেন।

এর পর রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শনার্থী দের দিকে উদ্দেশ্য করে কলা, ধানের খই এবং আরো অন্যান্য প্রসাদ ছুঁড়ে দেওয়া হয়। আর ভক্ত বৃন্দ খুবই ভক্তি সহকারে সেগুলি কুড়িয়ে থাকেন।

সাত দিন ব্যাপী রথ যাত্রার উৎসব, মেলা, অনুষ্ঠান সবকিছু মানুষের মনে বর্ষা ভারাক্রান্ত পরিবেশে আনন্দের বান বইয়ে দেয়, আর ছোট থেকে বড় এই সাত দিনব্যাপী রথযাত্রা ও উল্টোরথ এর উৎসবে মেতে ওঠেন খুশিতে। মিষ্টি, ফলমূল সবকিছুতে এই উৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই পুণ্যের একটি উৎসব। এই দিনটির জন্য সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন সকলেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top