“তেঁতুল নাম শুনলেই জিভে জল আসেনা এমন মানুষ পাওয়া আসলেই দুষ্কর ! তেঁতুল যেমন সুস্বাদু ফল তেমনি পুষ্টি-গুনে ভরপুর একটি ফল। এতে রয়েছে অসধারণ ভেষজ গুনাগুন।
এ ফল ইউনানি, হার্বাল, আয়ুর্বেদ, হোমিও ঔষধ তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। এ ফল অনেক রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
যেমন, পাকা তেঁতুল হৃদরোগ, কলেস্টোরাল, ফ্যাট কমায়, এছাড়াও হজম শক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। আর তেঁতুলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, খনিজ লবণ, ম্যাগনেশিয়াম ও খাদ্য শক্তি।
তেঁতুল কাঁচা এবং পাকা দূভাবেই খাওয়া যায় আর ভিটামিনও পাওয়া যায়।
তবে তেঁতুল গাছ নিয়ে আমাদের সমাজে নানান ভৌতিক গল্প বিদ্যমান রয়েছে। অনেকে মনে করেন এ গাছে ভূত রয়েছে, আবার অনেকে ভাবেন তেঁতুল খেলে স্মৃতি শক্তি হ্রাস পায়।
তবে আজকের দিনের চাষ করা মজার মিষ্টি তেঁতুল গাছে কিন্তু ভূত নেই ! আছে এর অসাধারন স্বাদ আর পুষ্টিগুন।
আমরা আমাদের বাংলাভূমি ওয়েব সাইটে নিয়মিত, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এতে করে আপনারা কৃষি, শিক্ষা, অর্থনীতি আরও নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন।
আমাদের এ তথ্যগুলো আপনারা আপনাদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে উপকৃত হয়ে থাকেন ।
সেই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করছি খুব সহজেই তেঁতুল চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন । চলুন আজ তবে, জেনে নি কেমন করে তেঁতুল চাষ করবো
বীজ উৎপন্নঃ
তেঁতুল বীজ থেকে আবার গুটি কলমের মাধ্যমেও জন্মে। তবে চাষের জন্য গুটি কলমই ভাল, এতে করে ভালোমানের উন্নত ফল পাওয়া যায়, আবার গাছে ফলও তাড়াতাড়ি আসে।
বীজ থেকে ফল আসতে ৭-৮ বছর লাগে, আর কলম করা চারা থেকে ২ বছরের মধ্যেই ফল আসে।
আমাদের দেশীয় জাতের তেঁতুল থেকে গুটিকলম করা থাই বা আমাদের তামিলনাড়তে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎপাদিত টকি জাতের তেঁতুলেও ফলন তাড়াতাড়ি আসে।
মাটি ও আবহাওয়াঃ
উর্বর দোঁ-আশ বা বেলে দো-ঁআশ মাটি এ চাষের জন্য উপযুক্ত।
চারা রোপণ করার আগে গর্তে গোবর সার ৫-১০ কেজি, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাস ১০০ গ্রাম, শরিষার খৈল ২৫০ গ্রাম মিশিয়ে ১৫-২০ দিন পঁচিয়ে তারপর চারা রোপণ করতে হয়।
চারা ২০-২৫ ফিট পর পর রোপণ করতে হবে যেন গাছ ভালো আলো বাতাস পায়।
কলম করা চারা গুলো যদি টবে লাগানো হয় তবে ১৮ বাই ১৮ টব নিতে হবে, টবে রোপণ করা চারা ৭-৮ ফিটের মতো উঁচু হয় আর মাটিতে রোপণ করা চারা ১৫-২০ ফিটের মতো উঁচু হয়ে থাকে।
কাটিং পদ্ধতিতে বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব
গাছে ভালো ফলন পাওয়াার জন্য গাছ কাটিং করে দিতে হবে। কাটিং করা গাছে ডালপালা বেশি হয় তাই ফলও বেশি।
চারা কাটিং ধীরে ধীরে করতে হয়, একবারে করা যায় না। যদি গাছের পাতা ঝড়ে যায় তারপর কাটিং করলে বেশ কয়েকটি নতুন ডাল গজায়। আর ফলনও ভালো হয় ।
তবে গাছ কাটিং করতে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় যেমনঃ গাছের ডাল গোল করে না কেটে সুচাঁলো ভাবে কাটতে।
এ কথা মাথায় রেখে ডাল কাটিং করতে হবে। কাটিং করা ডালের ডগায় কপাল অক্সিক্লোরাই দিতে হবে, এতে করে গাছে কোন প্রকার রোগ বা পোঁকার আক্রমন হয় না ।
বারোমাসি ফসলঃ
আজকের উদ্ভাবিত তেঁতুল গাছ থেকে সারাবছরই ফসল পাওয়া সম্ভব। গুটি কলম করা থাই জাত বা আমদের দেশে উদ্ভাবিত টকি জাতের তেঁতুল সারাবছরই ফুলে- ফলে ভর্তি থাকে।
এ গাছে ফল পেকে গেলে আবার ফুল আসা আরম্ভ করে। আর এ জাতীয় তেঁতুলে দেশী জাতের চাইতে আকারে বড় , স্বাদে মিষ্টি আর খাদ্যাংশ বেশি থাকে।
তাই এর বাজারমূল্য ও চাহিদা অনেক। এ চাহিদা আর বাজার মূল্যের কথা বিবেচনা করে আমরা বারোমাসি তেঁতুল চাষ করতে পারি। আর আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হতে পারি।
আমরা সাধারনত জেনে এসেছি তেঁতুল টক জাতীয় ফল ! কিন্তু না ! আজ কৃষি গবেষনা পদ্ধতিতে , উন্নত জাতের চারা উদ্ভাবিত হচ্ছে , যার কারনে আমরা আজ মিষ্টি তেঁতুল পাচ্ছি ।
সার প্রয়োগ ও কীটনাশকঃ
চারা রোপণ করার ৬ মাস অব্দি আর তেমন কোন সার দিতে হয় না।
গাছ বড় হলে যখন ফল আসার সময় হবে তখন বর্ষার আগে ও পরে একবার একবার করে টিএসপ ১০০ গ্রাম, ১৫০ গ্রাম সিঙ্গেল সুপার ফসফেট, ৭০ গ্রাম পটাস দিতে হবে।
এ সার প্রয়োগের পরিমান বছরে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে , আগামী ১০ বছর অব্দি। ১০ বছর পর আর সার না দিলেও চলে।
তেঁতুল গাছ বহুবর্ষি গাছ, একটি গাছ ২০০-৩০০ বছর অব্দি ফলন দিয়ে যায়।
তেঁতুল চাষে তেমন কোন সার প্রয়োগ বা কীটনাশক স্প্রে করতে হয় না। তবে যদি ছত্রকের আক্রমন হয় তবে পরিমান মত ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
এতে তেমন কোন যত লাগেনা, তাই খুব অল্প খরচে অনেক লাভবান হওয়া যায়।
বাড়ির ছাদে টবে বা বাড়ির আঙিনায় এমন কয়েকটি তেঁতুল গাছ কিন্তু আমরা লাগাতেই পারি।
আজ আমরা তেঁতুল চাষ নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে তেঁতুলের ব্যাপক সফলতা নিয়ে আরও আলোচনা করবো।
আমাদের এ লিখাটি আপনাদের সহ আরও অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লিখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। আপনার একটি শেয়ারের মাধ্যমে, যদি কেউ অনুপ্রানিত হয়ে এ চাষে আগ্রহী হয়, আর লাভবান হয়ে আয়ের ব্যাবস্থা করতে পারে, তবেই এ লেখায় স্বার্থকতা আসবে।