শহীদ দিবস 2023: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Shaheed Diwas 2023: History and Significance

ভালোবাসার সাথে শেয়ার করুন

শহীদ দিবস 2023 (Shaheed Diwas 2023 Date Time and Significance) 2023 শহীদ দিবস ইতিহাস এবং জানুন শহীদ দিবস কেন পালন করা হয়? শহীদ দিবস তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য শহীদ দিবস গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

WhatsApp Channel Telegram Group

আমাদের মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য অনেক বীর সন্তান জীবনকে বলিদান দিয়েছেন। শহীদ দিবস ভারতের বেশ কয়েকটি তারিখে পালন করা হয়। কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে শহীদ দিবস পালন করা হয় না, ভারতের শহীদ দিবস হিসেবে আলাদা আলাদা ছয়টি দিবস কে ঘোষণা করা হয়েছে। যারা জাতির জন্য নিজের জীবন কে উৎসর্গ করেছেন তাদের শহীদ  হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

শহীদ দিবস ইতিহাস ও তাৎপর্য - Shaheed Diwas History and Significance
শহীদ দিবস ইতিহাস ও তাৎপর্য – Shaheed Diwas History and Significance

পাঞ্জাব সরকার ২৩ শে মার্চ একটি সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে, যা কিনা ভগত সিং, সুখদেব থাপার এবং শিবরাম রাজগুরু নামে তিন স্বাধীনতা সংগ্রামীর শহীদ দিবস। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী  এই উপলক্ষে বলেছেন পাঞ্জাবের মানুষ শহীদ ভগৎ সিংকে তার খটকার কালাম গ্রামে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন।

এছাড়া ৩০ শে জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর এই দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ভারতের মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ৩০ শে জানুয়ারি এবং ২৩ শে মার্চ নামে দুটি দিনে শহীদ দিবস উদযাপন করা হয়।

ভারতের তিনজন অসাধারন বিপ্লবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পালিত হয় শহীদ দিবস, যাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা ভগৎ সিং শিবরাম রাজগুরু এবং সুখদেব থাপার কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। সেই কারণে তাদের মৃত্যুর দিন কে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

এই তিনজন বীর সন্তান ভারতের তরুণদের অনুপ্রেরণার উৎস, খুবই অল্প বয়সে তারা এগিয়ে এসেছেন স্বাধীনতার জন্য এবং বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে। তাই এই তিন বিপ্লবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২৩ শে মার্চ এই দিনটিতে পালিত হয় শহীদ দিবস।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, শহীদ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন তারিখের ইতিহাস ও তাৎপর্য: 

৩০ শে জানুয়ারি: 

৩০ শে জানুয়ারি জাতীয় পর্যায়ে পালিত হয়ে থাকে শহীদ দিবস হিসাবে। ১৯৪৮ সালের নাথুরাম গডসে দ্বারা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর হত্যার স্মৃতি হিসেবে এই দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছে।

শহীদ দিবসে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং তিন বাহিনী প্রধান রাজঘাট স্মৃতিসৌধের সমাধিতে জড়ো হন এবং নানা ধরনের ফুল দিয়ে সজ্জিত পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সকাল ১১ টায় ভারতের শহীদ দের স্মরণ করার উদ্দেশ্যে দেশ জুড়ে দুই মিনিটে নীরবতা পালন করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা সর্ব ধর্মের প্রার্থনা করার পর শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন।

২৩ শে মার্চ: 

এই দিনটি ১৯৩১ সালে ২৩ শে মার্চ, লাহোর, (পাকিস্তান) ভগৎ সিং, সুখদেব থাপার এবং শিবরাম রাজগুরু মারা যাওয়ায় বছরকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর সেই থেকে এই দিনটিকে অর্থাৎ ২৩ শে মার্চ  একটি শহীদ দিবস হিসেবে পরিচিত।

১৯ শে মে: 

বরাক উপত্যকায় সিলেটি ভাষী বাঙালি জনসংখ্যা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। মূল ঘটনা ১৯৬১ সালের ১৯ শে মে শিলচর রেলস্টেশনে যেখানে রাজ্য পুলিশ দ্বারা ১৫ জন মানুষ শহীদ হয়, ১৯ শে মে এখন আবার ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে স্বীকৃত।

আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঙালি হওয়া সত্বেও আসাম সরকার রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে অসমীয়া ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, প্রতিবাদ হিসেবে বাংলা ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে।

১৩ ই জুলাই:

এই দিনটি ২২ জনের মৃত্যু কে স্মরণ করে জম্মু ও কাশ্মীরে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৩ ই জুলাই ১৯৩১ সাল কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং সংলগ্ন বিক্ষোভ করার সময় রাজকীয় সৈন্যদের দ্বারা মানুষ নিহত হয়েছিল, এমন শহীদদের স্মরণ করার জন্য ১৩ ই জুলাই শহীদ দিবস পালন করা হয়।

২১ শে অক্টোবর:

শহীদ দিবস হিসেবে ২১ শে অক্টোবর পুলিশ শহীদ দিবস সমগ্র দেশ জুড়ে সকল পুলিশ বিভাগ পালন করে থাকেন। ১৯৫৯ সালের এই দিনটিতে চলমান চীন, ভারত সীমান্ত বিবাদের অংশ হিসেবে লাদাখের ইন্দোর, তিব্বত সীমান্তে একটি টহলরত কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীকে চীনা বাহিনী আক্রমণ করেছিল। আর সেখান থেকে এই দিনটি পুলিশ শহীদ দিবস হিসেবে উল্লেখিত।

১৭ ই নভেম্বর: 

১৭ ই নভেম্বর এই দিনটি ও শহীদ দিবস হিসেবে পরিচিত, কেননা এই দিনে ওড়িশা পাঞ্জাবের সিংহ খ্যাত লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। তার কাছ থেকে মুক্তির জন্য একজন ভারতীয় নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, আর আন্দোলনরত অবস্থায় তিনি মারা যান।

তাছাড়া তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য হাসতে হাসতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। সেই কারণে শহীদ লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয় ১৭ ই নভেম্বর, শহীদ দিবস হিসেবে।

১৯ শে নভেম্বর:

এছাড়া ১৮২৮ সালের ১৯ শে নভেম্বর মারাঠা শাসিত রাজ্যের রাজকুমারী রানী লক্ষ্মীবাঈ এর জন্মদিন উপলক্ষে এই অঞ্চলে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তার সাথে সাথে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহতে যারা জীবন দিয়েছিলেন তাদের সম্মান জানানো হয়। যার মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই দিনটি ঝাঁসিতেও শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

দেশের বীর সন্তানরা এবং বীরাঙ্গনারা তাদের অমূল্য জীবন ভারতকে স্বাধীন করার জন্য উৎসর্গ করে গিয়েছেন। তাদের উৎস্বর্গীকৃত জীবনের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই শহীদ দিবস পালন করা হয়। তাদেরকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আমরা কিই বা করতে পারি ! সেই কারণে তাদের আত্ম বলিদান দেওয়ার দিনকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে,  তাদেরকে স্মরণ করে থাকি এবং সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়ে থাকি।


ভালোবাসার সাথে শেয়ার করুন

Leave a Comment