Sarva Shiksha Abhiyan Yojana 2023 – SSA (সর্বশিক্ষা অভিযান যোজনা 2023), সর্বশিক্ষা অভিযান যোজনা কি? এই যোজনার লাভ কি? সর্বশিক্ষা অভিযান যোজনা তে কিভাবে আবেদন করবেন? এবং এই যোজনার আরও তথ্য এখানে দেখুন।
সর্বশিক্ষা অভিযান 2023 (Sarva Shiksha Abhiyan 2023) বা এলিমেন্টারি এডুকেশন ইউনিভার্সালাইজেশন (ইউইই) সারাদেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক সাক্ষরতা অর্জনের জন্য, ২০০১ সালে প্রকল্পটি শুরু করা হয়েছিল, এটি ভারত সরকারের একটি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি।
সর্বশিক্ষা অভিযানের আইনী সমর্থন দেওয়া হয়েছিল যখন ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য নিখরচায় এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষাকে ভারতীয় সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২১ এ এর আওতায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকারকে একটি মৌলিক অধিকার হিসাবে গৃহীত করা হয়।
সর্বশিক্ষা অভিযান এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে এই সময়ে শিক্ষার মৌলিক অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা। যাতে করে ৬-১০ বছর বয়সী প্রতিটি শিশু বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা পেতে পারে৷ নিরক্ষর এবং অক্ষরজ্ঞানহীনতার অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতেই এই অভিযান শুরু করা হয়েছিল।
সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আয়োজন সাজানো হয়েছে সর্বশিক্ষা অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। সর্বশিক্ষা অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত:-
সর্বশিক্ষা অভিযান 2023:
সর্বশিক্ষা অভিযান ২০০১ সালে প্রবর্তন করা হয়েছে। সারাদেশে ৬-১০ বছরের শিশুদের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনা এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। সরকার মানব সম্পদ ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই অভিযান সফল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সর্বশিক্ষা অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকটি যে কেউ ভিজিট করতে পারেন। অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://www.education.gov.in/en/ssa)
সর্বশিক্ষা অভিযানকে ‘সকলের জন্য শিক্ষা’ আন্দোলন হিসাবে অভিহিত করা হয়। সর্বশিক্ষা আন্দোলন প্রোগ্রামের প্রবর্তক ছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী।
রাজ্য সরকারগুলির সাথে অংশীদার হয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করছে।
সর্বশিক্ষা অভিযানের কারণ ও সুবিধাসমূহ
সর্বশিক্ষা অভিযানের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ২০১০ সালের মধ্যে এর লক্ষ্যগুলি অর্জন করা, তবে যেহেতু এত বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যা আমাদের দেশের, তাই অভিযানটি বাস্তবায়ন করতে আরও অনেক সময় লাগবে, এজন্য সময়সীমাটি বাড়ানো হয়েছে। সর্বশিক্ষা অভিযানের লক্ষ্য ছিল প্রায় ১.১ মিলিয়ন পরিবারের প্রায় ১৯৩ মিলিয়ন শিশুকে শিক্ষার জন্য অবকাঠামো তৈরি করে দেওয়া এবং শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ সরবরাহ করা।
শিশুদের শিক্ষিত করতে গেলে অবশ্যই তাদের জন্য স্কুল তৈরি করতে হবে, এবং সেখানে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল উপকরণ প্রয়োজন হবে। শিশুদের অন্যান্য সুবিধা, টিফিন, ইত্যাদির ব্যবস্থাও করতে হবে। আর প্রাথমিক শিক্ষা পাওয়া ভারতের সংবিধান অনুযায়ী শিশুদের মৌলিক অধিকার। আর এই শিক্ষা তারা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গ্রহণ করতে পারবে।
ভারতীয় সংবিধানের ৮৬ তম সংশোধনী আইন সর্বশিক্ষা অভিযানকে আইনী সমর্থন দিয়েছে, এর মূল লক্ষ্য ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য শিক্ষাকে বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক করা। আমাদের মত দেশে যেখানে অনেক শিশুই অর্থের অভাবে স্কুলে ভর্তি হতে পারেনা, অথবা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, তাদেরকে স্কুলমুখী করা এই অভিযানের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
কারণ এরা এবং এদের অভিভাবকরা ভাবে যে, স্কুলে যাওয়া অর্থ টাকা ও সময় নষ্ট করা, এরচেয়ে কাজ করা লাভজনক। এ জাতীয় চিন্তাভাবনা বদলে পড়াশুনার গুরুত্ব বোঝানো এবং তাদেরকে ন্যূনতম অক্ষরজ্ঞান এবং প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনার জন্যই এই অভিযান এখনো চলমান।
নতুন শিক্ষানীতি ২০২০ এর লক্ষ্য ছিল ২ কোটি ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা। যারা বিভিন্ন কারণে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে। ২০১৯ সালের শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে ২০১৫ সালে ৬.২ কোটির অধিক শিশু স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত হয়ে গেছে।
এই শিশুদের বয়স ৬-১৮ এর মধ্যে। এদেরকে পুনরায় স্কুলে ফিরিয়ে এনে এদেরকে প্রাথমিক এবং এর বেশী শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাইলে পরবর্তী ধাপের পড়াগুনা শুরু করা হবে। সর্বশিক্ষা অভিযানের অধীনে আরও একটি এ জাতীয় প্রকল্প রয়েছে, “পড়ে ভারত এবং বাড়ে ভারত” যা নিরক্ষরতা দুরীকরণ জাতীয় কাজ বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে চলেছে।
সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্য
সবার জন্য শিক্ষা অধিকার আইন, ২০১০ পাস হওয়ার পরে, সর্বশিক্ষা অভিযান তার উদ্দেশ্যগুলি পূরণের ক্ষেত্রে একটি সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্যগুলি হচ্ছে, পাঠ্যক্রম, শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, শিক্ষার মান, শিক্ষাগত পরিকল্পনা এবং পরিচালন ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করা। যাতে করে উপযুক্ত শিক্ষকদের দ্বারা শিক্ষাপ্রদান নিশ্চিত করা যায়।
যেসব অঞ্চলে কোন বিদ্যালয় নেই, পড়াশুনার কোন সুযোগ নেই সেখানে নতুন স্কুল খোলার জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, আর যেসব অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নত নয় সেসব স্থানে অবকাঠামো শক্তিশালী করা। এসব বিদ্যালয়গুলিতে যেন বিদ্যালয়ের সমস্ত সুবিধা প্রদান করা হয় সে বিষয়টি প্রকল্পের আওতায় দেখা হয়।
দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন স্কুল নির্মাণ, বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ, টয়লেট, পানীয় জলের সুবিধা যুক্ত করা, ছাত্র-ছাত্রীদের উন্নয়ন ও বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের জন্য স্কুল ফান্ড উন্নয়ন অনুদান বজায় রাখা। বাচ্চাদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক,ও ইউনিফর্ম সরবরাহ করা।
যেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে সেখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বৃদ্ধি করা। এ জাতীয় বিদ্যালয়ে সহজে শিক্ষাপ্রদান করতে পারেন এমন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে বিদ্যমান শিক্ষকদের দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জোরদার করা হয়। আর এই সমস্ত কিছু করার জন্য যে তহবিল প্রয়োজন হয়, তা এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।
শেষ কথা
দেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যে করা হলেও স্কুলে এসে শিক্ষা নিতে সবাই আগ্রহী নয়। কারণ স্কুলে পড়তে হলে ইউনিফর্ম, বই-পুস্তক, বেতন, শিক্ষা উপকরণ ইত্যাদি অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। আর এগুলো জোগাড় করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়না বিধায় তারা স্কুল থেকে ঝরে যায়।
এ জাতীয় সকল শিক্ষার্থীদের পুনরায় শিক্ষার আওতায় আনার জন্যই এই প্রকল্প। যাতে দেশের ৬-১৪ বছর বয়সী সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়। দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা যায়। শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত,তারাই যদি অশিক্ষার অন্ধকারে থাকে তাহলে দেশের উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়।
এজন্য সর্বশিক্ষা অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, যার সঠিক বাস্তবায়ন দেশকে নিরক্ষরতা মুক্ত হতে সাহায্য করবে। আশা করি সর্বশিক্ষা অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।
সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের লেখার উদ্দেশ্য থাকে ভারত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং তার অগ্রগতি সম্পর্কে আপনাদের জানানো, যাতে সেগুলো সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পারেন এবং সুবিধাসমূহ উপভোগ করতে পারেন। আশা করি পোস্টটি ভাল লাগলে এ বিষয়ে মন্তব্য করে আমাদেরকে উৎসাহ প্রদান করবেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।
Home | Click here |
Official Website | Click here |