প্রজাতন্ত্র দিবস 2023 (Republic Day in Bengali) 2023 প্রজাতন্ত্র দিবসের ইতিহাস এবং জানুন প্রজাতন্ত্র দিবস কেন পালন করা হয়? প্রজাতন্ত্র দিবসের তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
বিভিন্ন রকমের উৎসব, অনুষ্ঠান এবং ছুটির দিন গুলির মত ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবস অথবা প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হয় অনেকদিন আগে থেকে। ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি এই তারিখে ভারত শাসনের জন্য ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের পরিবর্তে ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে থাকে।
এটি ভারতের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ভারতীয় গণপরিষদ সংবিধান কার্যকরী হলে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আর সেখান থেকেই ২৬ শে জানুয়ারি এই দিনটি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে।
১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ইংরেজ শাসন থেকে স্বাধীনতা পেয়েছিল ভারত। কিন্তু সে সময় ভারতের নিজস্ব কোন স্থায়ী সংবিধান না থাকায় ব্রিটিশ সরকারের ১৯৩৫ সালের “গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট” এর সংশোধিত সংস্করণ অনুযায়ী স্বাধীন ভারত শাসিত হতো।
প্রতিটি ভারত বাসীর কাছে ২৬ শে জানুয়ারি দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতকে ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত করা কোন সহজ কাজ ছিল না। দেশের বীর সন্তান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ, বলিদান, এর ফসল হল ভারতের স্বাধীনতা।
তবে ক্রমশই ভারতে নিজস্ব সংবিধানের প্রয়োজন দেখা দিতে শুরু করে এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সংবিধান সভার ঘোষণা করা হয়। ডঃ বি আর আম্বেদকর, জহরলাল নেহেরু, ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ সরদার, বল্লভ ভাই প্যাটেল, মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে এই সংবিধান সভা তৈরি করা হয়।
2023 প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি
তারপর ১৯৪৭ সালের ২৯ শে আগস্ট আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতের স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি খসড়া কমিটি গড়ে তোলা হয়। এই বছরের ৪ ই নভেম্বর খসড়া কমিটির সংবিধান সভায় ভারতীয় সংবিধানের খসড়া জমা দেওয়া হয়।
প্রজাতন্ত্র দিবসের মহত্ত্ব ও ইতিহাসের ভিডিও:
ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- ২৬ শে জানুয়ারি সকাল ১০ঃ১৮ মিনিটে ভারতের সংবিধান কার্যকরী হয়েছিল।
- এই দিনটিতে দিল্লিতে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। ৮ কিলোমিটারের কুজকাওয়াজ শুরু হয়। রাইশিনা হিল থেকে এরপরে রাজপথ ইন্ডিয়া গেট হয়ে লালকেল্লায় এটি শেষ হয়।
- জাতীয় সংগীতের সময় ১১ টি তোপের সালামি দেওয়া হয়। জাতীয় সংগীতের শুরু থেকেই এই সেলামি দেওয়া শুরু হয় এবং ৫২ সেকেন্ডে জাতীয় সংগীত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এরও সমাপ্তি ঘটে যায়।
- ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি কুচকাওয়াজ রাজপথের পরিবর্তে তৎকালীন এরভিন স্টেডিয়াম বর্তমানে যেটা ন্যাশনাল স্টেডিয়াম, সেখানে আয়োজিত করা হয়েছিল।
- তখন এরভিন স্টেডিয়ামের চারিদিকে দেওয়া ছিল না, এবং সেখান থেকে লালকেল্লা পরিষ্কার ভাবে দেখা যেত।
- প্রতিবছর প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে বিভিন্ন রাজ্যের ট্যাব্লো অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণ করে ভারতীয় সেনা, নৌ সেনা ও বায়ুসেনা।
- প্রতিবছর প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন দেশের রাষ্ট্রপতি। প্রজাতন্ত্র দিবসের বিভিন্ন দেশের অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে।
আমাদের কাছে স্বাধীনতা দিবস যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ তেমনি প্রজাতন্ত্র দিবস টিও বিশেষ ভাবে স্মরণীয়। এটি একটি সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র তে দেশটিতে রূপান্তর হয়েছিল। সংবিধান, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
যা এই দেশের সকল নাগরিকের তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে উপভোগ করতে পারবে। এটি মেনে চলার জন্য দেশের সকল নাগরিকের জন্য কিছু মৌলিক কর্তব্য ও প্রতিষ্ঠা করে থাকে।
প্রজাতন্ত্র দিবস সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে আরউইন স্টেডিয়াম কিংস ওয়ে, রেড ফোর্ট এবং রামলীলা মাঠে প্রজাতন্ত্র দিবসে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
- এরপর ১৯৫৫ সাল থেকে রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করা হচ্ছে, স্বাধীনতার পর রাস্তাটির নামকরণ করা হয় রাজপথ, যার অর্থ রাজার পথ।
- প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট দেশের নেতাকে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
- ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সুকর্ণ প্রথম ১৯৫০ সালে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেছিলেন।
- এরপর ভারতের রাষ্ট্রপতির আসার পর কুচকাওয়াজ শুরু হয়, রাষ্ট্রপতির অশ্বারোহী দেহরক্ষীরা প্রথমে জাতীয় পতাকাকে সালাম দেয়, জাতীয় সংগীত বাজানো হয়, তারপর ২১ টি বন্ধুকে স্যালুট দেওয়া হয়।
- গুলি বর্ষণ অবশ্যই ২১ টি কামান ব্যবহার করে করা হয়নি। এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাতটি কামান দিয়ে করা হয়, যা প্রতিটিতে তিনটি রাউন্ড গুলি করা হয়, যা “২৫ পন্ডার্স” নামে পরিচিত।
২৬ শে জানুয়ারি ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় উৎসবের মধ্যে একটি। ২৬ শে জানুয়ারি সারা দেশের উৎসাহ ও শ্রদ্ধার সাথে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই সেই দিন যখন ভারতের প্রজাতন্ত্র এবং সংবিধান কার্যকর করা হয়েছিল।
এই দিনটি আমাদের দেশের গর্ব এবং সম্মানের সাথে জড়িত একটি বিশেষ দিন। এই দিনে সারাদেশে এবং বিশেষ করে স্কুল, কলেজ এবং সরকারি অফিস গুলোতে অনেক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এটি অত্যন্ত আরম্বর এবং বক্তৃতা, প্রবন্ধ রচনার সাথে উদযাপিত করা হয়ে থাকে।
তার পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয় ২৬ শে জানুয়ারি অর্থাৎ প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে। ছোট ছোট মেয়েরা এবং আরো অন্যান্যরা একই ধরনের পোশাক পরে সুন্দর সাজ সজ্জায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ সৃষ্টি করে।
স্বাধীনতা দিবসের মতো প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব ঠিক ততটাই, এই দিন ও অনেকে জাতীয় পতাকাকে সালাম জানিয়ে দেশের সংবিধান এবং প্রজাতন্ত্র দিবসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই দিনটি উদযাপিত করা হয়। যা কিনা ভারতের একটি উৎসব আর ছুটির দিনের মতোই।
অনেকে এই দিনটিতে আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। ছুটি থাকার কারণে অনেকেই পিকনিক, কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, যা কিনা খুবই আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে।