রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন (Rashtriya Gokul Mission in Bengali-RGM) উচ্চমাত্রায় পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন এবং খামার পদ্ধতিতে উৎপাদিত দুধের সরবরাহ বৃদ্ধিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দুধের উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতার উন্নতির জন্য গ্রহন করা হয়েছে।
আদিবাসীরা যেসব গৃহপালিত উন্নত জাতের গবাদিপশু পালে তাদের বংশবৃদ্ধির বিকাশ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ হিসাবে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন চালু করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। এই মিশন দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় বোভাইন ব্রিডিং এবং ডেইরি শিল্প ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য জাতীয় কর্মসূচির আওতায় চালু করা হয়েছে।
সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আয়োজন সাজানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে। চলুন দেরী না করে রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন উদ্দেশ্য সমূহ
দেশীয় গরুর জাতের বিকাশ ও সংরক্ষণ করা। দেশীয় জাতের আরও উন্নত ব্রিডিং করানোর জন্য জেনেটিক বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা।
যদি দেশীয় গরুর উন্নত ব্রিডিং করানো সম্ভব হয় তাহলে উন্নত গরু আরও বেশী দুধ দেবে এবং তা থেকে ডেইরি শিল্পের উন্নতি করা সম্ভব। দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে যা মেটানোর জন্য দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।
আর কম সংখ্যক গরু থেকে বেশী দুধের যোগান এর জন্য প্রয়োজন গরুর ব্রিড উন্নতকরণ। কারণ সাধারণত দেশী গরু কম দুধ দেয়।
গন, সহিওয়াল, রাথি, দেউনি, থারপারকার, লাল সিন্ধি জাতীয় অভিজাত জাতের ননডেস্ক্রিপ্ট গবাদি পশু দেশী গবাদিপশুর ব্রিড উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করুন।
এই প্রকল্পের আওতায় উন্নত ব্রিডের শক্তিশালী ষাঁড় সরবরাহ করা হয় যাতে গবাদিপশুর ব্রিড ও উন্নত হয়।
রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশনের উদ্দেশ্য
গবাদিপশুর দেশীয় জাতের বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন গবাদি পশু উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই উন্নয়ন কেন্দ্রগুলি গোকুল গ্রাম হিসাবে পরিচিত ছিল।
কৃষকদের এই দেশীয় জাতের গবাদিপশু প্রতিপালন করতে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন পুরষ্কার প্রদান শুরু করা হয়েছে। এতে করে এ জাতীয় কাজের আগ্রহ যাতে পশুপালনকারী আদিবাসী কৃষকদের মধ্যে জেগে ওঠে।
সর্বোত্তম পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কৃষককে গোপাল রত্ন পুরষ্কার প্রদান করা হয়,গবাদিপশুর সর্বোচ্চ যত্ন নিশ্চিত করতে এ বিষয়ে আদিবাসী কৃষকরা যাতে উৎসাহিত হয় এজন্য তাদেরকে কামধেনু পুরস্কার প্রদান করা হয় ব্রিডারস সোসাইটি,এনজিও থেকে।
পুরস্কার একটি সম্মানসূচক বিষয়, এতে কৃষকরা নিজেদের জন্য ছাড়াও নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করেও গবাদিপশুর বেশী যত্ন নিয়ে থাকে। যার ফলে দুধের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পায়।
বৈজ্ঞানিক উপায়কে উৎসাহিত করা
বৈজ্ঞানিক উপায়ে পশুপালনকে উৎসাহিত করতে কামধেনু ব্রিডিং সেন্টার (কেবিসি) চালু করা হয়। যাতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পশুপালন, সংরক্ষণ, ব্রিডিং এবং দুধের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়।
এই প্রকল্পের আওতায় কৃষক এবং ব্রিডারদের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করতে একটি ই-মার্কেট পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। এর নামকরণ করা হয়েছে ই-পশু হাট,,নকুল প্রজনন বাজার।
পশু সঞ্জীবনী নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে যা গবাদিপশুর স্বাস্থ্যসুরক্ষায় স্বাস্থ্যকার্ড বিতরন করে,যাতে পশুরা অসুস্থ হলে ঠিকমত চিকিৎসা নিশ্চিত হয়।
রোগ-মুক্ত মহিলা বোভাইন ব্যবহার করে উন্নত প্রজনন প্রযুক্তির ব্যবহার করলে ভাল জাতের গবাদিপশু পাওয়া সম্ভব। এই প্রযুক্তির মধ্যে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) এবং একাধিক ওভুলেশন এমব্রায়ো ট্রান্সফার (এমওইটি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ভারতবর্ষে যে ১৪.৫% পরিবারে গবাদি পশুপালন করা হয় তারমধ্যে যার মধ্যে ৮৩% জনগোষ্ঠী আদিবাসী। রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন, যা রাজ্য বাস্তবায়নকারী সংস্থা (এসআইএ) দ্বারা বাস্তবায়িত হচ্ছে, সমন্বিত আদিবাসী গবাদি পশু কেন্দ্রগুলির উন্নয়ন ও বিকাশের উপর বেশী গুরুত্ব প্রদান করে।
গবাদি পশুগুলো যে গ্রামে পালন করা হয়, সেই কেন্দ্রগুলি গোকুল গ্রামস নামে পরিচিত।
একটি গোকুল গ্রাম যেসব লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে-
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দেশীয় গবাদি পশু পালন ও তাদের সংরক্ষণ প্রচার।
উচ্চ জেনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্ভুত বলদের সাথে ব্রিড উন্নয়নের জন্য দেশীয় জাতের ব্যবহার।
সাধারণ রিসোর্স ম্যানেজমেন্টকে উন্নত করার পাশাপাশি আধুনিক ফার্ম ম্যানেজমেন্ট অনুশীলন প্রচার ও প্রসার করা। পশুর বর্জ্যকে অর্থনৈতিক উপায়ে ব্যবহার করা।
কারণ দেশের কৃষিতে পশুর বর্জ্য খুবই কাজে লাগে। জৈবসার ব্যবহার করলে পরিবেশও ভাল থাকে এবং উৎপাদনও ভাল হয়। বেশী রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে যেসব কৃষিপণ্য উৎপাদন হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য জৈবসার ব্যবহার করাই উত্তম।
এছাড়া গবাদিপশুর মল-মূত্র অন্যান্য অনেক কাজেই ব্যবহার করা হয়। গ্রামাঞ্চলে এখনো গোবর থেকে ঘুটে প্রস্তুত করে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা অনেক জ্বালানির চাহিদা মেটায়।
শুধুমাত্র দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য নয়, গবাদিপশুর যত্ন নিলে পাশাপাশি আরও অনেক চাহিদাই পূরন হয়।
গোকুল গ্রামের ঠিকানা – Gokul Grams Locations
State | Location |
---|---|
Andhra Pradesh | Chadalwada, Prakasam |
Arunachal Pradesh | Lohit |
Bihar | Dumraon, Buxar |
Chhattisgarh (2 Gokul Grams) | Bemetra and Sarkanda (Bilaspur) |
Gujarat (3 Gokul Grams) | Dharampur, Surat and Banaskantha |
Haryana | Hissar |
Karnataka | Kurikuppe, Bellary |
Maharashtra (3 Gokul Grams) | Palghar, Pohra and Tathtawade |
Madhya Pradesh | Ratona Sagar |
Punjab | Bir Dosanji, Patiala |
Uttar Pradesh (3 Gokul Grams) | Varanasi, Mathura & Shahjahanpur |
Uttarakhand | Govardhanpura |
Telangana | Veterinary University, Hyderabad |
শেষ কথা
দেশের যেসব পরিবার গবাদিপশু বিশেষ করে গরু-মহিষ পালন করে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হচ্ছে আদিবাসী সম্প্রদায়। যারা দেশের বেশীরভাগ গবাদিপশু পালন করে।
তাদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ব্রিড করানো, পশুর যত্ন, সিমেন সংগ্রহ, উন্নত জাতের ষাঁড় বা মহিষ কাজে লাগিয়ে দেশী জাতের গাভীর জাত উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ের জ্ঞান কম।
এছাড়া এসব অঞ্চলে সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় গবাদিপশুর রোগ হলেও সহজে পশু ডাক্তার পাওয়া যায়না। এসব অসুবিধা দূর করে দেশীয় গবাদিপশুর উন্নয়ন ও দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে এই প্রকল্পটি গ্রহন করা হয়েছে।
গরু, মহিষের দুধই শুধু নয়, তাদের বর্জ্যও বিভিন্ন উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করা হয়। এই দুগ্ধ এবং বর্জ্যকে কেন্দ্র করে আরও অনেক ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে উঠছে, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করবে।
তাই এই খাতের উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন (National Gokul Mission) কাজ করে চলেছে। আশা করি রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। আরো তথ্যের জন্য সরকারি ওয়েবসাইটে দেখতে পারেন: dahd.nic.in
সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের লেখার উদ্দেশ্য থাকে ভারত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং তার অগ্রগতি সম্পর্কে আপনাদের জানানো, যাতে সেগুলো সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পারেন এবং সুবিধাসমূহ উপভোগ করতে পারেন।
কেন্দ্র সরকারের সমস্ত যোজনা | Click Here |
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত প্রকল্প | Click Here |
বাংলাভুমি হোম | Click Here |