রামকৃষ্ণ জয়ন্তী 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Ramakrishna Jayanti 2024: History and Significance

রামকৃষ্ণ জয়ন্তী 2024 (Ramakrishna Jayanti 2024 Date Time and Significance) 2024 রামকৃষ্ণ জয়ন্তী ইতিহাস এবং জানুন রামকৃষ্ণ জয়ন্তী কেন পালন করা হয়? রামকৃষ্ণ জয়ন্তী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য রামকৃষ্ণ জয়ন্তী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব যাকে সকলেই মা কালীর উপাসক এবং স্বামী বিবেকানন্দের গুরু হিসেবে চেনেন। যিনি মহাকালির সাক্ষাৎ দর্শন পেয়েছিলেন। তার জন্ম তিথি উপলক্ষে রামকৃষ্ণ জয়ন্তী পালন করা হয়। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

রামকৃষ্ণ জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য - Ramakrishna Jayanti History and Significance
রামকৃষ্ণ জয়ন্তী 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Ramakrishna Jayanti 2024 History and Significance

মা কালীর পরম ভক্ত হিসেবে তিনি সকলের কাছে পুজিত। জীবনের প্রতি তার কোন উৎসাহ ছিল না। সেই কারণেই মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি গৃহ ত্যাগ করেছিলেন। নিজেকে ত্যাগ করে মা কালীর চরণে আত্মসমর্পণ করে দিনরাত ধ্যানে মগ্ন থাকতেন।

শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ১৮ ই ফেব্রুয়ারি ১৮৬৩ সাল অর্থাৎ তিনি পরাধীন ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার মধ্যে ছিল দয়া, উদারতা, শিক্ষা, ভালবাসা এবং জনসাধারণের জন্য সেবা করা। তার জন্ম তারিখ যাই হোক না কেন, ফাল্গুন অথবা মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে রামকৃষ্ণের আবির্ভাব দিবস হিসেবে ধরা হয় রামকৃষ্ণ জয়ন্তীকে।

পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম হল গদাধর চট্টোপাধ্যায়। পাঞ্জাবের সাধু তোতাপুরী ছিলেন তার বৈদিক গুরু। তিনি গদাধরকে পরমহংসদেব উপাধি দিয়েছিলেন।

তবে রামকৃষ্ণদেবের অন্যতম শিষ্য হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। যিনি কিনা হিন্দুত্ব আধ্যাত্মিকতা কে আধুনিকতার মোড়কে বিশ্বের দরবারে ভারতকে উপস্থাপন করেছেন। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের আশীর্বাদে জনমনে ভালোবাসা সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি করা হোক, এটাই তিনি সবসময় চাইতেন।

কালীপূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবনী 2024:

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবনী সম্পর্কে একটু জানা যাক: 

  • নাম: গদাধর চট্টোপাধ্যায়, তবে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নামে বেশি পরিচিত
  • জন্ম: ১৮ ই ফেব্রুয়ারি ১৮৩৬, কামারপুকুর, হুগলি, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত, তবে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
  • গুরু: ভৈরবী ব্রাহ্মণী, তোতাপুরী, গোবিন্দ রায়,
  • আখ্যা: পরমহংস
  • দর্শন: অদৈত্য বেদান্ত, ভক্তি, তন্ত্র,
  • বিশিষ্ট শিষ্য: স্বামী বিবেকানন্দ এবং আরো অন্যান্যরা
  • মৃত্যু: ১৬ ই আগস্ট ১৮৮৬, বয়স ছিল ৫০ বছর, কাশিপুর উদ্যানবাটি, কলকাতা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত, বর্তমান যেটা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

দীপাবলী পুজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

রামকৃষ্ণ জয়ন্তীর ইতিহাস 2024:

রানী রাসমণি প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে তিনি পুরোহিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার আরামবাগ মহাকুমায় অবস্থিত কামারপুকুর গ্রামের একটি দরিদ্র ধর্মনিষ্ঠ রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জন্ম হয়।

তখন কিন্তু কামারপুকুর শহর খুব একটা উন্নত ছিল না। এখানে ধানের ক্ষেত, লম্বা লম্বা তালগাছ, রাজকীয় বটগাছ, কয়েকটি হ্রদ এবং দুটি শ্মশান ঘাট ছিল। তিনি ছিলেন পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় এবং মা চন্দ্রমণি দেবীর চতুর্থ এবং শেষ সন্তান

কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, রামকৃষ্ণের জন্মের আগে তার পিতা-মাতার সামনে বেশ কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিলনি। চন্দ্রমনি দেবী দেখেছিলেন শিবলিঙ্গ থেকে নির্গত একটি জ্যোতি তার গর্ভে প্রবেশ করছে।

তার জন্মের আগে গয়ায় তীর্থ ভ্রমণে গিয়ে ক্ষুদিরাম গদাধর বিষ্ণু কে স্বপ্নে দেখে ছিলেন। সেই কারণে তিনি রামকৃষ্ণ যখন জন্মগ্রহণ করলেন তখন তার নাম রেখেছিলেন গদাধর।

এই কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি গদাই নামে পরিচিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীদের কাছে এবং তিনি সবার কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন। আঁকা এবং মাটির প্রতিমা তৈরি করার ক্ষেত্রে তার ছিল সহজাত দক্ষতা। তবে প্রথাগত শিক্ষায় তার কোন মনোযোগই ছিল না।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে পৌরোহিত্য:

আমরা সবাই জানি যে, শ্রীরামকৃষ্ণ মা কালীর পরম ভক্ত। ১৮৫৫ সালে কলকাতার মহিষ্য সমাজের এক ধনী জমিদার পত্নী রানী রাসমণি দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা করলে, রামকুমার নামে একজন পুরোহিত সেই মন্দিরে প্রধান পুরোহিতের পদ গ্রহণ করেন।

তখনকার ব্রাহ্মণ সমাজে নিম্নবর্নীয় বর্ণ, এক নারীর প্রতিষ্ঠিত মন্দির হওয়া সত্বেও সামান্য অনুরোধেই গদাধর সেই মন্দিরে চলে আসেন। তিনি ও তার ভাগনা হৃদয় রামকুমারের সহকারী হিসেবে প্রতিমার সাজসজ্জার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

এরপর ১৮৫৬ সালে রামকুমারের মৃত্যু হলে গদাধর অর্থাৎ রামকৃষ্ণ সেই জায়গাটি গ্রহণ করেন অর্থাৎ তিনি সেই পুরোহিতের দায়িত্বভার নিয়ে নেন। মন্দিরে উত্তর-পশ্চিম দিকে তাকে একটি ছোট ঘর দেওয়া হয়েছিল। এই ঘরেই তিনি অতিবাহিত করেন তার অবশিষ্ট জীবন।

পরবর্তীতে রানী রাসমনির জামাই মথুরামোহন বিশ্বাস, যিনি মধুরবাবু নামে বেশি পরিচিত ছিলেন, তিনিই গদাধর কে রামকৃষ্ণ নামটি দিয়েছিলেন। তাছাড়া আরো অন্যান্যদের মত অনুসারে এই নামটি তার অন্যতম গুরু তোতা পুরীর দেওয়া বলে জানা যায়।

ভাই ফোঁটা ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বিবাহ: 

তিনি যখন কালী সাধনায় অর্থাৎ কালী মায়ের পূজায় নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করে ফেলেছেন, তখন কামারপুকুরে গুজব রটে যায় যে, দক্ষিণেশ্বরে অতিরিক্ত সাধনার ফলে শ্রীরামকৃষ্ণ পাগল হয়ে গেছেন।

মা ও অন্যান্যরা রামকৃষ্ণের বিবাহ দেওয়ার জন্য চিন্তাভাবনা করতে থাকেন। তারা ভেবেছিলেন বিবাহ দেওয়ার পর সাংসারিক দায় দায়িত্ব ভার যখন কাঁধে চেপে বসবে তখন এই আধ্যাত্ম্য সাধনার মোহ কেটে যাবে।

এর ফলে তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসবেন। শ্রী রামকৃষ্ণ বিবাহ করতে আপত্তি তো করলেনই না, পরিবর্তে বলে দিলেন যে কামারপুকুরে তিন মাইল উত্তর-পশ্চিমে জয়রামবাটি গ্রামের রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে একটি কন্যার দেখা পাওয়া যাবে।

১৮৫৯ সালে পাঁচ বছর বয়সী একটি বালিকা সারদার সঙ্গে তার শাস্ত্র মতে বিবাহ সম্পন্ন হয়। শ্রীরামকৃষ্ণের বয়স তখন ছিল ২৩ বছর। বয়সের এই এতটা পার্থক্য ১৯ শতকে গ্রাম অঞ্চলে বঙ্গ সমাজে কোন অপ্রচলিত দৃষ্টান্ত ছিল না। যাইহোক ১৮৬০ সালে ডিসেম্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা দেবীকে ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসেন।

গোবর্ধন পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

রামকৃষ্ণ দেবের শেষ জীবন ও মৃত্যু: 

তিনি যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন প্রথমে তার গলা থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। ১৮৮৫ সালের আগস্ট মাসে ডাক্তারি ভাষায় এই রোগের নাম ক্লারজিমেন্স থ্রোট। রোগটা ক্যান্সার, কবিরাজি ভাষায় রোহিনী রোগ। কলকাতার শ্যামপুকুর অঞ্চলে তাকে নিয়ে আসা হয়।

অবস্থা সংকর জনক হলে ১১ ডিসেম্বর ১৮৮৫ সালে তাকে স্থানান্তরিত করা হয় কাশিপুরের একটি বিরাট বাগান বাড়িতে। ২৫ শে মার্চ ১৮৮৬ সালে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাক্তার জে এম কোটস এসেছিলেন তাকে দেখতে।

১৮৮৬ সাল ১৫ ই আগস্ট রবিবার কাশিপুরের শ্রাবণের শেষ দিনে ঠাকুর রামকৃষ্ণ ভাতের পায়েস খেতে আগ্রহ করেন, কিন্তু ওই দিনেই ঠাকুরের এই বিখ্যাত উক্তি হল, “ভিতরে এত ক্ষিদে যে, হাড়ি হাড়ি খিচুড়ি খাই, কিন্তু মহামায়া কিছুই খেতে দিচ্ছেন না”।

তার সেই যত মত, তত পথ উক্তিটি মানুষের মনে আজও আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার মতে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়াই হল আসল ধর্ম।

তো চলুন তাহলে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের ধর্ম সম্পর্কিত উদ্ধৃতি টি জানা যাক: 

“আমার ধর্ম ঠিক আর অপরের ধর্ম ভুল, এই মতামত ভালো না। ঈশ্বর এক ছাড়া দুই নয়। তাকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোকেরা ডেকে থাকে। কেউ বলে গড, কেউ বলে আল্লাহ, কেউ বলে কৃষ্ণ, কেউ বলে শিব, কেউ বলে ব্রম্ভ।

তিনি উদাহরণ হিসেবে আরো বলেন যে,

যেমন, পুকুরে জল আছে, এক ঘাটের লোক বলছে জল, আর এক ঘাটের লোক বলছে ওয়াটার, আর এক ঘাটের লোক বলছে পানি, হিন্দু বলছে জল, খ্রিস্টান বলছে ওয়াটার, মুসলমান বলছে পানি, তবে বস্তু কিন্তু একটাই।”

“যত মত, তত পথ এক একটি ধর্মের মত এক একটি পথ ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যায়। যেমন নদী নানা দিক থেকে এসে সাগরের মোহনায় মেশে, তেমনি বলা যেতে পারে।”

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের নিজের জীবনটাকে কালী মায়ের সাধনায় সমর্পিত করেছেন। সংসার ধর্ম ত্যাগ করে খুবই অল্প বয়স থেকে তিনি এই সাধনায় যুক্ত হয়েছেন। তার জন্ম তারিখ টিকে এবং জন্মতিথিকে রামকৃষ্ণ জয়ন্তী হিসেবে পালন করা হয় আজও।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top