রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জয়ন্তী 2023 (Rabindranath Tagore Jayanti 2023 Date Time and Significance) 2023 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জয়ন্তী ইতিহাস এবং জানুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জয়ন্তী কেন পালন করা হয়? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জয়ন্তী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জয়ন্তী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
আমাদের বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম তিথি উপলক্ষে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করা হয়। এটি একটি উৎসবও বলা যেতে পারে। আমাদের কাছে রবীন্দ্র জয়ন্তী অথবা ২৫ শে বৈশাখ বাঙালি জাতির কাছে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতিক উৎসব।
প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ২৫ তারিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এই উৎসব পালন করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সহ আরো অন্যান্য রাজ্যে এবং বাংলাদেশে ও বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে এই রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব পালন করা হয়।
তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গে এই দিনটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। স্কুল, কলেজ এবং আরো অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি কাজকর্ম সবকিছুই বন্ধ থাকে এই দিন। বলতে গেলে সম্পূর্ণ ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়েছে এই দিনটি।
রবীন্দ্র জয়ন্তীর ইতিহাস 2023:
আমরা সকলেই জানি যে, আমাদের বিশ্ব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম দিন উপলক্ষে এই রবীন্দ্র জয়ন্তী উৎসব পালন করা হয়। ঠাকুর পরিবারে ব্রহ্ম ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, এই পরিবারে মূর্তি পূজার কোনরকম প্রচলন ছিল না। কিন্তু সেই পরিবারের সন্তান মৃত্যুর পরেও বহু জায়গায় ঠাকুর রূপে পূজা পান।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
ফুলের মালা এবং ধূপের ধোঁয়ায় এখনো শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। তাকে স্মরণ করতে বাংলা সাহিত্যের দিক পরিবর্তন কেও স্মরণ করা হয়। তার লেখা গান এখনো পর্যন্ত তিনটি দেশের জাতীয় সংগীত। ভারত, বাংলাদেশ আর শ্রীলংকা।
একই সঙ্গে স্মরণ করা হয় ১৯১৩ সালে তার নোবেল জয় কে। পশ্চিমবঙ্গে এখনো পর্যন্ত অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে এই দিনটি পালন করা হয়। কথায় আছে যে, বাঙালির জীবনের সবকিছুর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে রয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ ই মে কলকাতা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্ম নেন এবং তিনি ঠাকুর পরিবারের ১৪ জন জীবিত সন্তানের মধ্যে সবথেকে ছোট ছিলেন।
এছাড়া রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসবে রবীন্দ্র সংগীত, অনুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, রবীন্দ্র নাট্যাভিনয়, রবীন্দ্র রচনা পাঠ এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গুলির সাথে সাথে।
তাছাড়া রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত ভবনগুলিতে এই দিনে বিশেষ জনসমাগম দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রধান অনুষ্ঠান গুলি আয়োজিত হয় কলকাতায় অবস্থিত কবিগুরুর জন্মস্থান জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ও রবীন্দ্র সদন এবং শান্তিনিকেতনে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন বেঁচে ছিলেন তখনও কিন্তু রবীন্দ্র জয়ন্তীর এই দিবসটি উদযাপন করা হতো। ঘটা করে এবং সাড়ম্বরে এই দিবসটি পালনের মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতি বাঙালির ভাষা ও সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির মন-মানসিকতা বিকাশে রবীন্দ্রনাথের অবদানের প্রতি ঋণ শিকার করে, তাকে শ্রদ্ধা জানাতেন।
সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রেডিও এবং টেলিভিশনে সারাদিন ধরে প্রচার চলে এই বিশেষ অনুষ্ঠানের। সকল পত্রিকাতে এই উপলক্ষে অনেক লেখা প্রকাশিত হয়।
অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে থাকে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতা, নানা ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন, বইমেলা, সংগীত ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। এছাড়া বর্তমান যুগ তো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ, ইন্টারনেটের যুগ, তাই এখন সকলেই বিভিন্ন রকম সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ২৫ শে বৈশাখের শুভেচ্ছা আদান- প্রদান করেন।
বৈশাখ মাসে দুটি তারিখ বাঙ্গালীদের কাছে খুবই মনে রাখার বিষয় এবং ঐতিহ্যপূর্ণ। সেই দুটি দিন হল, পয়লা বৈশাখ আর পঁচিশে বৈশাখ। বিশেষ করে ২৫ শে বৈশাখ এই দিনটি খুবই সম্মানের, এই দিনটি এখনো বাঙালি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে থাকেন। পাশাপাশি একটি দিন যেটা বিশেষ করে বাঙালি হয়ে ওঠার চেষ্টা করা হয়।
রবীন্দ্র জয়ন্তীর তাৎপর্য 2023:
ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তিনি চেয়েছিলেন, এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যকে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃত মডেল থেকে অনুষ্ঠিত বাংলা সাহিত্যকে নতুন গদ্য এবং শ্লোক, শৈলী, সেই সাথে কথ্য ভাষার ব্যবহার শিখিয়েছিলেন।
আধুনিক ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী শৈল্পিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় যাকে, তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথের জীবনের সাথে জড়িত কয়েকটি তথ্য সম্পর্কে জানা যাক:
- ঠাকুর পরিবার বাংলার নবজাগরণের অগ্রভাগে ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তার জীবনের প্রথম দিকে শিল্পের সংস্পর্শে আনা হয়েছিল। তিনি আট বছর বয়সে লেখালেখি শুরু করেন এবং ১৬ বছর বয়সে তার প্রথম কাজ প্রকাশ পায়।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমস্ত অর্জনের মধ্যে একটি হল শান্তিনিকেতন। তার নিজস্ব শিক্ষাগত কাঠামো তৈরি যা প্রাথমিকভাবে ব্যবহারিক ক্রিয়া-কলাপের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল।
- মহান সব লেখকদের মধ্যে তিনি শেক্সপিয়ার, রিলিজিও মেডিসিন এবং কোরিওলানাসের কাজগুলিতে গভীরভাবে আগ্রহী ছিলেন। যদিও তার পরিবার আশা করেছিল যে তিনি আইন পেশার সাথে যুক্ত হলে খুবই ভালো হয়।
- এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম অ- ইউরোপীয়, যিনি গীতাঞ্জলি নামে তার কবিতার সংকলনের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
- এরপর ৬০ বছর বয়সে তিনি পেইন্টিং শুরু করেন এবং প্রায় তার কাজ প্রদর্শনের জন্য প্রদর্শনী স্থাপন করতেন।
- তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা” লিখেছেন এবং শ্রীলংকার জাতীয় সংগীত তার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে।
- ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ ১৯১৫ সালে সাহিত্যের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মানিত করেন উপাধি দিয়ে। কিন্তু জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি সেই গুরুদেব উপাধি ছেড়ে দেন।
- আলবার্ট আইনস্টাইন তার বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে তারা ধর্ম এবং বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেছিলেন।
- এছাড়া তিনি তার নোবেল পুরস্কারের অর্থ একটি স্কুল নির্মাণ কার্যে ব্যবহার করেছিলেন।
- ২০০৪ সালে শান্তিনিকেতনে একটি চুরির ঘটনায় তার নোবেল পুরস্কারের পদকটি চুরি হয়ে যায়। একাডেমী প্রতিস্থাপন হিসেবে দুটি প্রতিলিপি অফার করেছিল, একটি সোনার তৈরি এবং অন্যটি ছিল ব্রোঞ্জ এর।
- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৭৭ সালে ছোট গল্পে তার কর্মজীবন শুরু করেন, যখন তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সী ছিলেন “ভিখারিনী” যার অর্থ ভিক্ষুক মহিলা এই ছোট গল্প দিয়ে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চার অধ্যায়, চতুরঙ্গ ও শেষের কবিতা সহ আটটি উপন্যাস লিখেছেন।
- তার ৫০ টি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “ডাকঘর”, “গীতাঞ্জলি”, “মানসী”, “গোরা” এবং “যোগযুগ” প্রভৃতি।
- ৮০ বছর বয়সে ১৯৪১ সালের ৭ ই আগস্ট তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন অমূল্য সব সম্পদ গুলি। তার কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, যা জীবনে চলার পথে প্রতিমুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন পড়ে। তার জন্ম তিথি উপলক্ষে ২৫ শে বৈশাখ তাকে শ্রদ্ধা জানাতে রবীন্দ্র জয়ন্তী উৎসব পালন করি আমরা। ফুলের মালা, ফুল, প্রদীপ, ধুপ এর মধ্যে দিয়ে তাকে স্মরণ করে থাকি। এই দিনে প্রতিটি কর্মক্ষেত্র, সরকারি ভবনে, তাকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন সকলেই।