বাতবি লেবু একটি ভিটামিন সি জাতীয় ফল। এটি জনপ্রিয় একটি ফল। বাজারে এর চাহিদা ও প্রচুর। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
চলুন দেখে নেই বাতাবি লেবু চাষের বিস্তারিতঃ
মাটি ও জলবায়ুঃ
বাতাবি লেবু চাষের জন্য হালকা দোআঁশ মাটি অথবা পলি দোআঁশ যুক্ত মাটি বিশেষ উপযোগী। জমি সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
বাতাবি লেবু চাষের মাটি জৈব পদার্থ যুক্ত হতে হবে। তবে সাধারনত মধ্যম অম্লীয় মাটিতে এটি ভালো জন্মে।
জমি নির্বাচন ও জমি তৈরিঃ
সাধারনত উঁচু ও মধ্যম উঁচু জমি বাতাবি লেবু চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।
জমির মাটি সমতল করে নিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর গর্ত তৈরি করতে হবে।
বংশ বিস্তারঃ
বাতাবি লেবুর বংশ বিস্তার সাধারনত কলমের সাহায্যে হয়ে থাকে। গুটি কলম, চোখ কলম, জোড় কলম এর সাহায্যে চারা তৈরি করা হয়ে থাকে।
বাতাবি লেবুর বডি ও গ্রাফটিং এর জন্য সাধারনত ৮-১০ মাস বয়সী চারা আদিজোড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
রোপণের জন্য যে চারা বা কলম বাছাই করা হবে সেটি যেন সোজা হয় ও দ্রুত বৃদ্ধি সম্পন্ন হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রোপন পদ্ধতিঃ
বাতাবি লেবু চাষের জন্য জমি সমতল হতে হবে। এই জমিতে বর্গাকারে বা আয়তাকার পদ্ধতিতে চারা রোপণ করতে হবে।
এছাড়া পাহাড়ি জমিতে যদি চারা বা কলম রোপন করা হয় তাহলে কন্টুর পদ্ধতিতে রোপন করতে হবে।
রোপনের সময়ঃ
বাতাবি লেবুর চারা রোপন করার জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত উপযুক্ত সময়।
গর্ত তৈরিঃ
চারা বা কলম রোপন করার জন্য ১৫-২০ দিন আগে ৬×৬ মিটার দূরে ৬০×৬০×৬০ সেমি আকারের গর্ত তৈরি করে কিছুদিন খোলা অবস্থায় রাখতে হবে।
গর্তে সার প্রয়োগঃ
গর্ত তৈরি করার পর গর্তে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিটি গর্তে জৈব সার বা গোবর সার দিতে হবে ১০-১৫ কেজি, টিএসপি সার দিতে হবে ২৫০ গ্রাম, এমপি দিতে হবে ২৫০ গ্রাম।
সার গুলো মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে তারপর গর্ত ভরাট করে দিতে হবে।
গাছের বয়স অনুযায়ী সারের পরিমান ভিন্ন হবে। সার প্রয়োগ করার সময় মাটিতে রস না থাকলে জল দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
বাতাবি লেবু চাষে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। ১-২ বছর বয়সী চারার ক্ষেত্রে গোবর দিতে হবে ৭-১০ কেজি, ইউরিয়া সার ১৭৫-২২৫ গ্রাম, টিএসপি দিতে হবে ৮০-৯০ গ্রাম এবং এমওপি দিতে হবে ১৪০-১৬০ গ্রাম।
৩-৪ বছর বয়সী গাছের ক্ষেত্রে গোবর ১০-১৫ কেজি, ইউরিয়া দিতে হবে ২৭০-৩০০ গ্রাম, টিএসপি সার ১৪০-১৭০ গ্রাম এবং এমওপি দিতে হবে ৪০০-৫০০ গ্রাম। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণ বাড়বে।
আগাছা দমনঃ
গাছের গোড়ায় যেন আগাছা না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করে দিতে হবে।
আগাছা গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং গাছের পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে। চারা রোপন করার প্রথম কয়দিন গাছের গোড়ার মাটি ঝুরঝুরে রাখা উচিত।
এতে চারার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। আবার সেচ দেওয়ার পর মাটিতে জো এলে মাটি হালকা ভাবে কুপিয়ে মাটির দলা ভেঙে দিতে হবে।
তাতে মাটির জল ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর গাছ সহজে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
বাতাবি লেবু গাছে ফুল আসা ও ফল ধরার সময় জলের অভাব দেখা দিতে পারে। জলের অভাব হলে ফল ঝরে পড়ে যায়।
তাই জমিতে প্রয়োজনীয় জল সেচ দিতে হবে।চারা লাগানোর সময়, সার দেওয়ার পরে এবং শুকনা মৌসুমে ১০-১৫ দিন পর পর জল সেচ দিতে হবে।
বাতাবি লেবুর চারা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই গাছের গোড়ায় যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যেতে পারে।
পোকমাকড় দমন ও রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ
বাতাবি লেবু গাছে একটি মারাত্নক রোগ হচ্ছে গমোসিস। এটি আক্রান্ত হবার ফলে গাছ মারা যায়।
এ রোগে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত শাখা কেটে ফেলতে হবে অথবা গাছে বর্দোপেস্ট লাগাতে হবে পেস্টের মতো করে। জমি অতিরিক্ত ভেজা থাকা যাবে না।
বাতাবি লেবু গাছে এক ধরনের প্রজাপতি পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। এ পোকা পাতা খেয়ে ফেলে তাই গাছের ফলন কমে যায় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
পোকা দমনে সুমিথিয়ন ৫০ ইসি প্রতি লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
ফল সংগ্রহঃ
ফল পরিপক্ক হলে ফলের উপরিভাগ খসখসে থেকে কিছুটা পরিবর্তন হয়ে তেলতেলে ভাব হয়।
ফল কিছুটা হলুদ রঙ ধারন করে। এ অবস্থায় ফল সংগ্রহ করতে হবে।
ফলনঃ
সঠিক ভাবে চাষ করতে পারলে একটি বাতাবি লেবু গাছ থেকে প্রায় ৫০-৫৫ টি ফল সংগ্রহ করা যায়।