ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, মধ্য প্রদেশ – Omkareshwar Jyotirlinga Temple

ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির (Omkareshwar Jyotirlinga Temple): হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী প্রতিটি প্রাচীন মন্দিরের পেছনে রয়েছে আকর্ষণীয় এবং রোমাঞ্চকর ইতিহাস। যে গুলি ভক্তদের মনে আরো বেশি শ্রদ্ধা ও ভক্তি জাগিয়ে তোলে।

বিশ্বের মোট ৬৪ টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে ১২ টি প্রধান এবং অন্যতম জ্যোতির্লিঙ্গ বলে বিশ্বাস করেন শিব ভক্তগণ। আর সেভাবেই কিন্তু প্রকাশিত হয়েছিল ওংকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ।

ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, মধ্য প্রদেশ - Omkareshwar Jyotirlinga Temple
ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, মধ্য প্রদেশ – Omkareshwar Jyotirlinga Temple

এই মন্দিরটি মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর স্টেশন থেকে প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পাঁচতালা এই মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে শিবলিঙ্গ।

ওমকারেশ্বর মন্দিরের পৌরাণিক কাহিনী:

মধ্যপ্রদেশের ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা ধরনের পৌরাণিক কাহিনী। কথিত আছে যে, শ্রী রামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ইক্ষাকু বংশের রাজা মান্ধাতা ও তার দুটি সন্তান অম্বরিশ ও মুছুকুন্দ এই মন্দিরের জায়গাতেই ভগবান শিব কে সন্তুষ্ট করেছিলেন। হিন্দু পুরাণ অনুসারে জ্যোতির্লিঙ্গ হল অনন্ত এবং অখন্ড সত্য।

ভগবান শিব যেখানে অগ্নি সদস্য স্তম্ভ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিলেন সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরগুলো। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এখানকার শিবলিঙ্গ স্পর্শ করে পূজা দিতে পারেন। সারা বছর ধরেই এই মন্দিরে পুণ্যার্থীদের পুজো দিতে আসার দৃশ্য একেবারে মনোমুগ্ধকর।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এই  ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির সম্পর্কে কিছু তথ্য:

ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির এর ইতিহাস:

হিন্দু শাস্ত্র মতে বিন্ধ্যাচল পর্বতমালার রক্ষক ও সুরবৃন্দ নিজের পাপ মোচন করার জন্য মহাদেবকে প্রসন্ন করেছিলেন। তিনি বালি ও পলির মিশনে একটি শিবলিঙ্গ তৈরি করেছিলেন। তার তপস্যয় প্রসন্ন হয়ে দুটি রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।

একটি রূপ হল ওমকারেশ্বর অপর একটি রূপ হল অমরেশ্বর বা মমলেশ্বর। নদী গর্ভের পলি ঘনীভূত হয়ে এখানে দেবনাগরী “ওঁ” এই আকৃতি ধারণ করেছিল। ওমকারেশ্বর সেখানেই আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। ওংকারেশ্বর ও অমরেরশর, এখানকার মন্দিরে একটি পার্বতী ও একটি পঞ্চমুখী গণেশের মূর্তি রয়েছে।

হিন্দু পুরাণের গল্প অনুসারে পুরান মতে এই স্থানে দেব ও দানবের ভীষণ যুদ্ধ হওয়ার ফলে দানব কুলের জয় হয়। এটা ছিল দেবগনের জন্য একটি গুরুতর পরাজয়। যার ফলে তারা ভগবান শিব কে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাদের আহ্বানে সন্তুষ্ট হয়ে তিনি ওমকারেশ্বর শিবের আকার ধারণ করেন ও দানবকুলের বিনাশ করেন।

তবে ওংকারেশ্বর এর একেবারে কাছাকাছি আদি শঙ্করাচার্যের গুহা অবস্থিত। মনে করা হয় এই গুহাতেই তিনি তার গুরু গোবিন্দ পদের সাক্ষাৎ পান। এই গুহা ওমকারেশ্বর মন্দিরের নিচে পাওয়া যায় এবং সেখানে একটি আদি শঙ্করাচার্যের মূর্তি ও রয়েছে।

ওমকারেশ্বর মন্দিরের অবস্থান:

এই মন্দিরটি ভারতের মধ্য পশ্চিমে অবস্থিত মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের খান্ডুয়া জেলাতে অবস্থিত ওমকারেশ্বর। নর্মদা নদীর জলে পুষ্ট এবং পরিবহনের ফলে সৃষ্ট এটি ভারতের পবিত্র নদীগুলির মধ্যে অন্যতম, এবং বর্তমানে ভারতের বৃহত্তম বাঁধ প্রকল্পের মধ্যে একটি। ২.৬ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং নৌ পরিবহনের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত।

লোককথা অনুসারে মান্ধাতা এবং তার পুত্রের তপস্যা সম্বন্ধীয় একটি ঘটনা রয়েছে, যেখানে শ্রীরাম চন্দ্রের পূর্বসূরী তথা সূর্য বংশ ইক্ষাকু বংশের রাজা মান্দাতা ভগবান শিবের লিঙ্গ রূপে অবতরণ অবধি এই জায়গাতেই তপস্যা করেছিলেন।

কিছু বিদ্বজন মান্ধাতার পুত্রদ্বয় অম্বরিশ এবং মুচুকুন্দ এর কাহিনী বর্ণনা দিয়ে থাকেন। তারা এই জায়গাতে নিজেদের কঠোর প্রায়শ্চিত্ত ও তপস্যার মাধ্যমে ভগবান শিব কে তুষ্ট করেন। একই কারণে ওই অঞ্চলে অবস্থিত পর্বত টির নাম মান্ধাতা পর্বত।

মহাবিশ্বের ৬৪ টি মূল জ্যোতির্লিঙ্গ আছে বলে মনে করা হয়। তবে তার মধ্যে ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গ প্রধান এবং খুবই পবিত্র বলে মনে করা হয়। ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গের প্রতিটি স্থানের নাম নির্দিষ্ট দেবতার নামে উৎসর্গিত এবং প্রতিদিন একটা ভিন্ন গুণ শিবের প্রকাশকে প্রকাশিত করে।

এই সমস্ত জায়গায় আরম্ভহীন, অনন্ত গুনি শিবের প্রতিক হিসেবে স্তম্ভাকৃতি শিব লিঙ্গ রয়েছে। যা কিনা শিবের উপাসক ভক্তদের কাছে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাছাড়া শিব শম্ভু বেশিরভাগ জায়গায় মূর্তির তুলনায় লিঙ্গরূপে পুজিত হয়ে আসছেন।

সত্যির জয় সব জায়গায়, সেটা এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, ব্রহ্মা জ্যোতির্লিঙ্গের জ্যোতির শেষ খুঁজে পেয়েছিলেন বলে মিথ্যা কথা বলেছিলেন। সেই কারণে অভিশাপ প্রাপ্ত হয়ে তিনি কোন অনুষ্ঠানে স্থান পান না। আবার একই সাথে বিষ্ণু পরাজয় স্বীকার করেছিলেন যে তিনি জ্যোতির্লিঙ্গের জ্যোতির শেষ খুঁজে পাননি। তাই সেই কারণে অনন্তকাল ধরে তিনি পূজিত হয়ে আসবেন এমন টাই আশীর্বাদ পেয়েছিলেন শিবের কাছ থেকে। এ থেকে ভালোভাবেই বোঝা যায়, শিব শম্ভু অসত্যকে সরিয়ে সত্যের বিকাশ ঘটিয়েছেন।

যাই হোক না কেন, সত্য কথা, সততা, উদারতা, সমস্ত বাধা বিপদ পার করে আপনাকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। প্রতিটি পৌরাণিক ইতিহাস পৌরাণিক কাহিনী মানুষের জীবনের সাথে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত। তাই যদি আপনি একজন শিব ভক্ত হয়ে থাকেন অবশ্যই শিবের এই ঘটনা আপনার মনে প্রানে গেঁথে যাবে।

অন্যান্য জ্যোতির্লিঙ্গের মতো এই মন্দির ও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিবের উপাসক দের কাছে। তাছাড়া ওংকারেশ্বরে স্থানীয় মানুষজন প্রতিনিয়ত এই মন্দিরে পূজা-অর্চনা করে থাকেন। শিবরাত্রি উপলক্ষে এই মন্দির সেজে ওকে ফুলে ও আলোক সজ্জায়। তার সাথে সাথে দূর দূরান্তর থেকে মানুষ ছুটে আসেন এখানে শিবের পূজা দেওয়ার জন্য। তার সাথে সাথে অনেক তীর্থযাত্রীরা এই মন্দিরে অনেকদিন পর্যন্ত সময় কাটিয়ে থাকেন।

আপনি চাইলে এখানে যেতেই পারেন, কেননা আগের থেকে এখন যাতায়াত ব্যবস্থা অনেকটাই উন্নত। সেই কারণে সমুদ্রের মাঝে দ্বীপে এই ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির আপনার চোখ জুড়িয়ে দেবে। তার সাথে সাথে পূন্য অর্জন করা তো রয়েছেই। তার সাথে সাথে আপনি যদি হন একজন তীর্থযাত্রী তাহলে তো আর কথাই নেই। শিবের উপাসনার মধ্যে দিয়ে আপনার মনের শান্তি, ভক্তি বৃদ্ধি পাবে অনেক গুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top