নাইনাতিভু শক্তিপীঠ: যেখানে সতীর ডান পায়ের নূপুর পড়েছিল, জানুন সবকিছু

(Nainativu Shakti Peeth in Bengali) নাইনাতিভু শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান কোন স্থানে? দেবী সতীর কোন অঙ্গ এখানে পতিত হয়েছে? নাইনাতিভু শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী কি? কিভাবে আরাধনা করা হয়? এই মন্দিরের তাৎপর্য কি? জানুন সবকিছু বিস্তারিত।

সতীর দেহত্যাগের পর সতীর সেই মৃতদেহ নিয়ে মহাদেবের তান্ডব নিত্য সকলেই কম বেশি জানেন। তবে এমন ঘটনায় সমস্ত পৃথিবী বাসির উপরে এক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারবে অথবা সম্পূর্ণ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড উলট-পালট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে।

Nainativu Shakti Peeth in Bengali - নাইনাতিভু শক্তিপীঠ
Nainativu Shakti Peeth in Bengali – নাইনাতিভু শক্তিপীঠ

এমনটা আশঙ্কা নিয়ে বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দ্বারা দেবীর দেহকে ৫১ টি খন্ডে বিভক্ত করেছিলেন, আর এমনই একটি খন্ড আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায় গিয়ে পতিত হয়েছিল। যেখানে একটি শক্তিপীঠ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার নাম নাইনাতিভু শক্তিপীঠ / ইন্দ্রাক্ষি শক্তিপীঠ।

নাইনাতিভু শক্তিপীঠ

শক্তিপীঠের নাম নাইনাতিভু শক্তিপীঠ
স্থান নাইনাতিভু নাগাপুসানী আম্মান মন্দির,নয়নাতিভু, জাফনা
দেশ শ্রীলঙ্কা
দেবীর অংশ ডান পায়ের নূপুর
শক্তির নাম ইন্দ্রাক্ষী

ইন্দ্রাক্ষি সতীপীঠ / নাইনাতিভু শক্তিপীঠ এর পৌরাণিক কাহিনী:

চন্ডীমঙ্গল কাব্য সহ বেশ কিছু প্রাচীন শাস্ত্রে সিংহলে অবস্থিত ইন্দ্রাক্ষি নামক এই শক্তি পিঠের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই শক্তি পিঠে দেবী ইন্দাক্ষী রূপে পূজিত হন সতী। এই শক্তিপীঠ এর সাথে জড়িত আছে দেবরাজ ইন্দ্র ও একটি পৌরাণিক কাহিনী।

পৌরাণিক মত অনুসারে জানা যায় যে, প্রাচীন সিংহলে পড়েছিল সতীর পায়ের মল, অথবা নুপুর। এখানে সতীর নাম ইন্দ্রাক্ষী আর শিব হলেন রাক্ষশেশ্বর, পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে আরো জানা যায় যে, ইন্দ্রাক্ষীর মূর্তি বানিয়ে পুজো করতেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র।

কারণ বৃত্তা সুরের সাথে যুদ্ধের সময় দেবী ইন্দ্রকে সাহায্য করেছিলেন। তার পাশাপাশি দেবতাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন আর যুদ্ধ শেষে তিনি এই জায়গায় ইন্দ্রাক্ষী রূপে সর্বদাই বিরাজমান থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তবে এখানে একটা কথা উল্লেখ করে রাখা খুবই জরুরী যে, যদিও এই শক্তিপীঠের সঠিক অবস্থান নিয়ে বিশেষজ্ঞ দের মধ্যে বেশ কিছু মতপার্থক্য রয়েছে, তবে বেশিরভাগ গবেষক ও শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ রাই মনে করেন যে, বৌদ্ধ প্রধান দেশ শ্রীলংকার এক সময় গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত জাফনাতেই আছে এই সতি পীঠ।

জাফনার নাইনা তিভুতে খুবই ধুমধাম ভাবে এই পূজা করা হয়, যেখানে দেবী ইন্দ্রাক্ষী পূজিত হয়ে থাকেন সকলের কাছে।

নাইনাতিভু শক্তিপীঠের তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য:

লংকা নামটা সবারই শোনা, বর্তমানে এটি শ্রীলঙ্কা নামে পরিচিত,  রামায়নে এই রাজ্যের নাম পাওয়া যায়, যেখানে রাক্ষসেরা থাকতো। লঙ্কায় রাক্ষসদের রাজা ছিলেন দশানন রাবণ।

বহু দিন পূর্বে শিবের ইচ্ছায় দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা এই লঙ্কা নগরী নির্মাণ করেছিলেন। একসময় এখানে তার পরিবারবর্গ নিয়ে থাকতেন, পরবর্তীতে সেটা রাবণ রাজ্যে পরিণত হয়। আর এখানেই রয়েছে ইন্দ্রাক্ষী শক্তিপীঠ অথবা নাইনাতিভু শক্তিপীঠ।

এই সতীপীঠে দেবীর নুপুর পতিত হয়েছিল, তা তো আমরা জানলাম, এই দেবীকে দেবতাদের রাজা ইন্দ্র দেবতা পূজা করেছিলেন কিন্তু কেন? পরবর্তীতে সেই ঘটনা হিসাবে জানা যায় যে, লঙ্কা নগরী নাকি দেবী চামুন্ডা, শিবের আদেশে পাহারা দিতেন, ভগবান শিব বলেছেন যখন হনুমান লঙ্কাতে আগমন করবে, তখন থেকে দেবীর প্রহরীর দায়িত্ব সমাপ্ত হবে।

শ্রী রামের দূত হয়ে হনুমান ভগবান রামের আংটি নিয়ে আসলে দেবী চামুন্ডার সাথে দেখা হয়, দেবী বলেন এবার লঙ্কার পতনের সময় এসেছে। এই বলে তিনি অদৃশ্য হয়েছিলেন।

প্রাচীন গ্রন্থে সিংহল নাম পাওয়া যায়। অনেকে সিংহল ও লঙ্কাকে এক বলে মনে করেন, কিন্তু এখানে সিংহল ও লঙ্কা কে আলাদা করে দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে সিংহলে দেবমোহিনী রূপে ভগবতী বিরাজ করেন আবার তিনিই ভদ্রকালী রূপে লঙ্কায় বিরাজ করেন।

শ্রীলংকার এই সতী পিঠে দর্শনার্থীদের আনাগোনা থাকে সারা বছর। দেবীকে ইন্দ্রাক্ষি রূপে পূজা করা হয়। স্থানীয় মানুষজনদের প্রচেষ্টায় এই শক্তিপীঠ অথবা সতী পীঠ অনেক খানি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সকলের কাছে।

মনের ইচ্ছা জানিয়ে এখানে অনেকেই তাদের স্বপ্ন পূরণ করেছেন বলে মনে করা হয়। এই ইন্দ্রাক্ষী শক্তিপীঠ অথবা নাইনাতিভূ শক্তিপীঠ ৫১ টি শক্তিপিঠের মধ্যে একটি বিশেষ সতীপীঠ অথবা শক্তিপীঠ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top