নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, গুজরাট – Nageshwar Jyotirlinga Temple

নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির (Nageshwar Jyotirlinga Temple): বিশেষ পবিত্র বারোটি জ্যোতিরিঙ্গ মন্দিরের মধ্যে নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির হল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্দির অথবা হিন্দুদের অন্যতম ধর্মীয় পীঠস্থান বলা যেতে পারে।

এই মন্দিরটি ভারতের গুজরাট রাজ্যে অবস্থিত। গুজরাটের জামনগরে অবস্থিত এই মন্দিরের শিবলিঙ্গকে সমগ্র ভারতের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম বলে বিবেচনা করা হয়।

নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, গুজরাট - Nageshwar Jyotirlinga Temple
নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, গুজরাট – Nageshwar Jyotirlinga Temple

যারা শিবের উপাসক তারা কিন্তু নাগেশ্বর মন্দিরে জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করাকে পরম পবিত্র এবং পুণ্যের কাজ বলে মনে করেন। অন্যান্য জ্যোতিলিঙ্গ মন্দিরের মতো এই নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের পিছনে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনী এবং ইতিহাস।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির এর পিছনের ইতিহাস সম্পর্কে: 

নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির এর ইতিহাস: 

শিব পুরাণ অনুসারে বর্তমান দিনে যেখানে নাগেশ্বর মন্দির অবস্থিত সেই অঞ্চলে দারুক নামে এক রাক্ষস রাজত্ব করত। এর উৎপাতে সমস্ত মানুষ পরিত্রান পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। দারুকের স্ত্রী ছিল দারুকি, দারুকি দেবী পার্বতীর একজন পরম  ভক্ত ছিল। পার্বতী দারুকির প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাদের রাজত্ব করা অরণ্যটির নাম দারুক বন নামে আখ্যা দেন। সঙ্গে এটা আশীর্বাদ করেন যে দারুকি যেখান থেকে যাবে দারুক বন ও সেই স্থান দিয়ে গমন করবে।

পরবর্তী সময়ে দেবতারা দারুকের জন্য আক্রমণ করায় দারুক তার স্ত্রীকে পার্বতীর বরদান কে প্রয়োগ করার আদেশ দেয়। আর সেই মতো দারুকি সাগর তীর দিয়ে পালিয়ে যেতে থাকলে এবং দারুক বন ও সেই জায়গা দিয়ে গমন করতে থাকে।

দারুক পুনরায় সকলের উপর অত্যাচার আরম্ভ করার জন্য ধরে ফেলে। এবার দারুক সুপ্রিয় নামে একজন লোক এবং তার সহচরদের অপহরণ করে বন্দী করে রাখে। এখানে একটা কথা বলে রাখা জরুরী যে সুপ্রিয় ছিল মহাদেবের পরম উপাসক।

সুপ্রিয় যখন বন্দী হন তখন একটুও বিচলিত না হয়ে শিবলিঙ্গ স্থাপন করে মহাদেবের উপাসনা করতে আরম্ভ করে দেন। সুপ্রিয়র প্রার্থনাতে সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব দর্শন দেন এবং দারুককে বধ করার জন্য সুপ্রিয়কে অস্ত্র প্রদান করেন। মহাদেবের এই বর দান সুপ্রিয় দারুক রাক্ষস কে বদ করতে সক্ষম হয়।

এরপর সুপ্রিয় মহাদেবকে সেই জায়গায় বিরাজমান হয়ে থাকার জন্য অনুরোধ করতে মহাদেব নিজের জ্যোতি দ্বারা জ্যোতির্লিঙ্গ স্থাপন করে নিজের ভক্তের মনের কামনা পূরণ করেন। এই নাগেশ্বর মন্দিরে মহাদেব কে নাগেশ্বর অর্থাৎ নাগ এর ঈশ্বর অর্থাৎ সাপের ঈশ্বর রূপে পূজা করা হয়। দেবী পার্বতী এই স্থানে নাগেশ্বরী রূপে বিরাজমান আছেন বলে ভক্তরা বিশ্বাস করেন আজও।

নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের অবস্থান সম্পর্কে মতবিরোধ: 

নাগেশ্বর জ্যোতিরলিঙ্গ মন্দিরের প্রকৃত অবস্থান নিয়ে ভক্তদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। কাহিনী অনুসারে দারুক আসলে কোন স্থান ছিল সেটি সঠিকভাবে জানার কোন উপায় নেই। একটি অংশ নাগেশ্বর মন্দিরের বর্তমান স্থান গুজরাটের বলে মনে করা হয়।  একাংশ দারুক মন্দিরের স্থান গুজরাট বলে মনে করা হয়।

তবে এর কোনো রকম সঠিক বর্ণনা নেই। তবে বলা যেতে পারে যে, দারুক শব্দটি আসলে দারু বা যেটা দেবদারু গাছে পরিপূর্ণ বন জঙ্গল হতে পারে। সেই হিসেবে গুজরাটে দারুক ছিল বলে কেউ কল্পনা করতে পারছেন না।

দেবদারু গাছে পরিপূর্ণ দারুকের ভিত্তিতে তারা নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের প্রকৃত অবস্থান হিমালয়ের পাদদেশে উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বলে মতামত জানিয়েছেন। মন্দিরের প্রকৃত নাম ঈশ্বর জ্যোতিরলিঙ্গ বলে একাংশ দাবী করে।

বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এই মন্দির অর্থাৎ এই নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির ঐতিহাসিক কাল থেকে ভক্তদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় স্থান হয়ে রয়েছে। আজও পর্যন্ত বহু ভক্ত এবং পর্যটকদের ভিড় এখানে চোখে পড়ার মতো।

শিব উপাসকরা নাগেশ্বর মন্দিরের জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করতে সারা জীবন অপেক্ষা করেন বলে মনে করা হয়। আর এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করতে গেলে যে সৌভাগ্যের প্রয়োজন হয় সেটাও অনেকেই মনে করেন।

চারিদিকে দেবদারু গাছের বন জঙ্গলে ঘেরা এই নাগেশ্বর মন্দির ভ্রমণ পিপাসু, রোমাঞ্চকর পরিবেশে ভ্রমণ করতে ভালোবাসা মানুষগুলোর জন্য খুবই জনপ্রিয় হতে পারে। তাছাড়া শিবরাত্রির দিন বা শিবের উপাসনা করা হয় এমন সমস্ত তিথিতে এই মন্দিরে বেশ ভালোভাবে পূজা অর্চনা করা হয়।

মহা শিবরাত্রিতে এখানে বহু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে পূজা দিয়ে থাকেন। তা ছাড়াও স্থানীয় মানুষজন ও এই দিন মন্দিরটি ভালো করে ফুল ও আলোকসজ্জায় সাজিয়ে, প্রদীপের আলোয় সাজিয়ে ভালোভাবে শিবরাত্রি উদযাপন করেন।

দিনের বেলাতেও এই বন জঙ্গলে ঘেরা নাগেশ্বর মন্দিরটি বেশ রোমাঞ্চকর লাগলেও রাতের বেলায় আরো বেশি শিহরণ জাগানো পরিবেশে পরিণত হয়। নাগেশ্বর অর্থাৎ সাপের ঈশ্বর হিসেবে মহাদেব এখানে বিরাজমান আর তাই তার উপাসনা করে সমস্ত নাগদের সন্তুষ্ট রাখেন এখানকার স্থানীয় মানুষজন।

কেননা এখানে বন জঙ্গলের ভিতর থেকে জীবনযাত্রার মধ্যে দিয়ে চলাফেরার ক্ষেত্রে কোন রকম অসুবিধা যেন না হয় সেই কারণে শিবের কাছে অনেকেই প্রার্থনা করে থাকেন নিষ্ঠা ভরে।

এছাড়া অনেক দিন আগে থেকে প্রকৃতির সাথে একেবারে মিলে মিশে গিয়েছে এই নাগেশ্বর মন্দিরটি। চারিদিকে সুন্দর সবুজ ঘেরা পরিবেশ, তার সাথে বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম এই জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরটি সমস্ত ভক্তদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতিরলিঙ্গ মন্দির। উৎসবের দিনগুলি ছাড়াও এখানে সারা বছর পর্যটকদের আসতে দেখা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top