2023 বাঙ্গি বা খরবুজা চাষের পদ্ধতি | 2023 Muskmelon Cultivation Method in Bangla

বাঙ্গি বা খরবুজা এক ধরনের শসা জাতীয় ফল। এটি অর্থকরী ফসল। স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টি গুণে ভরপুর এ ফল। একে সাধারনত খরমুজ, কাঁকুড় ও ফুটি নামে ও ডাকা হয়ে থাকে। প্রায় সব এলাকাতেই এটি জন্মে থাকে। এর চাহিদা প্রচুর। তরমুজের পরেই এর চাহিদা রয়েছে বাজারে।


কাচা অবস্থায় একে সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমানে খাদ্য আঁশ রয়েছে। যার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। বাঙ্গি বা খরবুজা একটু বেশি পরিমানে পেকে গেলে ফেটে যায়।


আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।


এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে বাঙ্গি বা খরবুজা  চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই বাঙ্গি বা খরবুজা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।

চলুন দেখে নেই বাঙ্গি বা খরবুজা চাষের বিস্তারিতঃ 

জলবায়ু ও মাটিঃ 

শুষ্ক ও উষ্ণ ধরনের জলবায়ু বাঙ্গি বা খরবুজা চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। তাই বাঙ্গি বা খরবুজা চাষের জন্য উর্বর বেলে দোআঁশ ও পলি মাটি বিশেষ উপযোগী।


সময়ঃ 

বাঙ্গি বা খরবুজা গ্রীষ্মকালীন ফল। তাই মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসে বীজ বপন করতে হয়। বৃষ্টিতে এ চারার ক্ষতি হয় তাই বর্ষার সময় এটি চাষ করা উচিত নয়।


চারা রোপণঃ 

চারা রোপন করার জন্য জমি তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে আড়াআড়ি চাষ করে নিতে হবে এবং মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে। বাঙ্গি বা খরবুজার জাত ভেদে নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বীজ বপন করা যায়।


বীজ বপনের জন্য প্রায় ৫ ফুট থেকে ৬.৬৭ ফুট দূরত্বে ১.৩৩ ফুট চওড়া করে ও গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রতি মাদায় ৪ থেকে ৫ টি করে বীজ বুনতে হবে। চারা গজানোর পর ২ থেকে ৩ টি করে রেখে বাকি চারা গুলো তুলে ফেলতে হবে।


বাঙ্গি বা খরবুজা গাছ এক ধরনের লতানো গাছ তাই গাছ বেশি ঘন ঘন রাখা উচিত না, যতটা সম্ভব পাতলা রাখতে হবে জমি। এ গাছ খুব কম সময় বাচে। একবার ফল ধরার দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত জমি থেকে বাঙ্গি বা খরবুজা তোলা যাবে।


সার ব্যবস্থাপনাঃ 

সাধারনত নদীর তীরে বালু মাটিতে বাঙ্গি বা খরবুজা চাষ করা হয়ে থাকে। তারা জন্য আলাদা সার প্রয়োগ করা হয় না। তবে ভালো ফলন পেতে চাইলে এতে কিছু সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি শতাংশে গোবর সার ৪০ কেজি, ইউরিয়া সার দিতে হবে ২৫০ গ্রাম, টিএসপি সার ৩০০ গ্রাম এবং পটাশ ২০০ গ্রাম দিতে হবে।


প্রয়োগ পদ্ধতিঃ 

জমি তৈরির সময় জমিতে অর্ধেক সার দিয়ে দিতে হবে। আর বাকি অর্ধেক সার মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। মাদায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে অর্ধেক জৈব সার ও পুরো টিএসপি সার মাদায় প্রয়োগ করতে হবে।


গাছ একটু বড় হলে ইউরিয়া সার ও পটাশ সার মাদার আশেপাশের মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে তারপর প্রয়োগ করতে হবে। সার দেওয়ার পর যদি মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা যায় তাহলে জমিতে সেচ দিতে হবে।


সেচ প্রয়োগঃ 

বাঙ্গি বা খরবুজা গাছ তাপ ও ক্ষরা সহ্য করতে পারে। কিন্তু ভালো ফলন পেতে হলে শুকনা মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে। গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। এবং গোড়া পচা রোগ দেখা দিতে পারে।


বিশেষ পরিচর্যাঃ 

ফলকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জমিতে খড় বিছিয়ে দিতে হবে। গাছে যদি অতিরিক্ত ফল ধরে তাহলে প্রতি গাছে চার থেকে পাচ টি করে ফল রেখে বাকি সব ফল ছাটাই করে দিতে হবে। জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। জমিতে জল সেচ ও জল নিষ্কাশনের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।


রোগ ও পোকা মাকড় দমন ব্যবস্থাপনাঃ 

বাঙ্গি বা খরবুজাতে সবচেয়ে বেশি হয় হোয়াইট মোল্ড রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে বাঙ্গি বা খরবুজা পচে যায়। এর জন্য প্রপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাক নাশক ব্যবহার করতে হবে। এটি জলে মিশিয়ে ১০ দিন পর্যন্ত পরপর তিন বার বিকেলের শেষে দিকে গাছে স্প্রে করে দিতে হবে।


এছাড়া ও বাঙ্গি বা খরবুজা কাঠাল পোকা , থ্রিপস পোকা, ব্লাক রট রোগ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।  বাঙ্গি বা খরবুজা গাছে ফলের মাছি নামক এক ধরনের পোকা আক্রমণ হয়ে থাকে। এ পোকা দমনের জন্য সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। 


বাঙ্গি বা খরবুজা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনাঃ 

বাঙ্গি বা খরবুজার রং হলুদ বর্ণ ধারণ করলে, বা ফল ফেটে যাওয়া শুরু হলে বা কোন জাতের বোটা বিচ্ছিন্ন হলে বুঝে নিতে হবে যে ফল তোলার সময় হয়েছে। তখন ফল তোলা শুরু করতে হবে।


ফলনঃ 

জাত অনুযায়ী শতাংশ প্রতি জমিতে ৮০-১০০ কেজি বাঙ্গি বা খরবুজা ফলন হয়ে থাকে। প্রতিটি ফলের ওজন প্রায় ১-৪ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।


ফল ফেটে যাওয়া রোধঃ 

অতি উচ্চ তাপমাত্রা ও যদি আর্দ্রতার কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে ফলের শাস ও খোসার বৃদ্ধির মধ্যে মিল থাকে না। তাই ফল ফেটে যায়। কখন ও কখন ও কোন কোন জাতের কারণে ও ফল ফেটে যায়। তাই নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে জল সেচ দিতে হবে। আর যেসব জাতের  মধ্যে ফল ফেটে যাবার সম্ভাবনা না থাকে সেসব জাত চাষাবাদ করা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top