মে দিবস 2023 (May Day 2023 Date Time and Significance) 2023 মে দিবস ইতিহাস এবং জানুন মে দিবস কেন পালন করা হয়? মে দিবস তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য মে দিবস গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
কর্মই ধর্ম, প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো কাজের সাথে যুক্ত। তবে কাজ ছাড়াও তাদের আরো অনেক বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। যেমন ধরুন পরিবার পরিজন, নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল, আর সামান্য একটু অবসর সময় কাটানো। তবে এমন একটা সময় ছিল, যখন টানা ১৬ ঘন্টা কাজ করতে হতো।
এমনটা করার ফলে তারা কোন দিকেই সময় দিতে পারছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়ে। এক এক জন শ্রমিক এক এক রকম কাজ করে বলেই না আজকের আমাদের জীবনযাত্রা এতটাই সচ্ছল, না হলে তো সবকিছুই থমকে যেত, তাই না !
আর এই মে দিবস হল সেই সব শ্রমিকদের আন্দোলন করে জেতার দিন। যেদিন তারা ১৬ ঘন্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজ করার দাবি তুলেছিলেন এবং দিনটি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করতে বলেছিলেন। সেই আন্দোলনে প্রাণ গিয়েছিল অনেক শ্রমিক ও পুলিশের। মে দিবস পালনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে সেই ইতিহাস।
উৎসব প্রবণ আমাদের দেশ, প্রতি মুহূর্ত প্রতিটি তারিখ যেন উৎসবের. এক একটি দিন তার সাথে সাথে জড়িয়ে রয়েছে এমন কিছু বিশেষ দিন, যেগুলি জনসাধারণের এবং বিশেষ ব্যক্তির সাথে জড়িত. তেমনি একটি দিন হল মে দিবস। অথবা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, প্রতিবছর মে মাসের ১ তারিখ পালিত হয় এই দিবসটি। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের বহু দেশে এই দিন জাতীয় ছুটি থাকে।
এই দিনটি শ্রমিক মানুষের অধিকার আদায় করার দিন। দিনের পর দিন লড়াই এবং বহু সংগ্রাম পেরিয়ে এই দিনটি সারা বিশ্বের শ্রমিকদের কাছে একটি গৌরবময় এবং উজ্জ্বল দিন। আর সেই কারণে এই দিনটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবেও পরিচিত।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, মে দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে:
মে দিবসের ইতিহাস 2023:
এই সময় সমস্ত শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিদিন প্রায় ১৬ ঘন্টা ধরে তাদের কাজ করতে হতো। এই সমস্যা নিয়ে ১৮৮৬ সালে মে মাসের ১ তারিখে দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার শ্রমিক দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকদের বিশাল বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের থামাতে পুলিশ সেখানে এলোপাথাটি গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন সেদিন বেশ কয়েকজন শ্রমিক এবং আহত হয়েছিলেন অনেকেই। এছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অনেককে আবার তাদের মধ্যে অনেকেরই ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
তবে এত কিছুর পরে তীব্র আন্দোলনের মুখে পড়ে শ্রমিকদের সেই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল সরকার। এরপর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে মে মাসের এক তারিখে মে দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেটা শ্রমিক দিবস হিসেবে পরিচিত।
ইতিহাস অনুসারে জানা যায় যে, শ্রমিকদের সেই দাবি অর্থাৎ দিনে আট ঘন্টা কাজ করার দাবি, একদিনে পূরণ করা হয়নি। বাস্তবে এটি কয়েক বছর সময় নিয়েছিল এবং প্রতিবাদে প্রচুর মানুষের জীবন দিতে হয়েছে, অনেক রক্ত ঝরেছে, এটি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়, পাশাপাশি জার্মানি, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সেও হয়েছিল।
মে দিবসের তাৎপর্য 2023:
যেহেতু এই দিনটি শ্রমিকদের অধিকার আদায় করার দিন, সেই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর মে মাসের এক তারিখে জাতীয় ছুটি থাকে। এছাড়া ভারতসহ অনেক দেশেই এই দিন জাতীয় ছুটি থাকে।
১৯২৩ সালের পয়লা মে ভারতে প্রথম চেন্নাইতে মে দিবস পালন করা হয়, লেবার কিসান পার্টি অফ হিন্দুস্তানের উদ্যোগে। উদ্যোক্তা ছিলেন পার্টির বলিষ্ঠ নেতা সিংগারা ভেলুর চেটটিয়ার। তার ব্যবস্থাপনা অনুসারে তখনকার মাদ্রাজের দুটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় উদযাপিত হয় শ্রমিক দিবস অর্থাৎ মে দিবস।
এরপর ১৯৪৮ সাল থেকে সরকারিভাবে ভারতের সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষদের মর্যাদা রক্ষার জন্য পয়লা মে বাধ্যতামূলক ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া এই দিনে প্রতিটি বিভাগের শ্রমিকরা সম্মানিত হয়ে থাকেন, তাদের অবদান স্বীকার করা হয়। শ্রমিকরা আন্দোলন করেছিল বলেই না আজকে ৮ ঘন্টা কাজের মেয়াদ রাখা হয়েছে, ১৬ ঘন্টার পরিবর্তে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস প্রতি বছর পয়লা মে তারিখে বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয়। এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদযাপন দিবস, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন সমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করে থাকে। বলা যেতে পারে যে, মে দিবস শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের চিন্তাভাবনায় এনেছে এক বৈপ্লবিক তাৎপর্য। মে দিবস পৃথিবী জুড়ে শ্রমিক আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ।
এই সংগ্রাম চেতনা ও চরিত্র, যা কিনা শ্রমজীবী মানুষদের ভূষণ। মে দিবস আজ আর শ্রমিকের কাজের ঘন্টা কমানোর দাবির আন্দোলন নয়, মে দিবস আজকের বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বের মেহনতী মানুষের সংগ্রামের দিন, সৌভ্রাতৃত্বের দিন। সমাজতন্ত্র কায়েম করার শপথ গ্রহণের দিন। মে দিবস এখন সমস্যা নয়, সামনে নতুন যুগের সূচনা, অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই দুর্লভ সম্পদ আজ তাদের কাছে বড়ই অমূল্য।
আবার বলা যেতে পারে, মে দিবস হল পৃথিবীর মেহনতি সমস্ত মানুষের সংকল্প গ্রহণ করার দিন। এই সংকল্প হল সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে শ্রেণী বৈষম্যের বিলোপ সাধন করা, পুঁজিবাদী দাসত্ব শৃংখল থেকে মুক্তির দৃঢ় অঙ্গীকার হল এই মে দিবস।
শ্রমিকদের এই যে আট ঘন্টার কাজের দাবী, যা বর্তমান সময়ে সমস্ত শ্রমজীবী মানুষদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। এছাড়া বাধ্যতামূলক ভাবে কাজ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এই সময়। তাদের আন্দোলন, তাদের আত্মত্যাগ সবকিছু সরকারকে বাধ্য করেছিল এই দিনটি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করতে, আর ১৬ ঘন্টার পরিবর্তে ৮ ঘন্টা কাজের সময়সীমা রাখতে।
সমস্ত পরিশ্রমী মানুষদের প্রতি সম্মান জানাতে, শ্রদ্ধা জানাতে এই দিনটি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যা আজও জনসাধারণের কাছে আন্তর্জাতিক ছুটির দিন এবং মে দিবস হিসেবে বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পরিচিত, আর সেটি পালিত হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই।