2023 আম চাষের পদ্ধতি, সহজ এবং বিস্তারিত | 2023 Mango Cultivation Method in Bangla

আম একটি সুস্বাদু ফল। আমকে বলা হয় ফলের রাজা। আম পছন্দ করে না এমন কেউ নেই। গ্রীষ্মকালীন এই ফলটির চাহিদা বাজারে ব্যাপক।

কাচা অবস্থায় এর রং সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ রং হয়ে থাকে।

Mango Cultivation Method in Bangla
Mango Cultivation Method in Bangla

আজ আমরা আপনাদের সাথে আম চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই আম চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন আম চাষের বিস্তারিতঃ

 

জলবায়ু ও মাটিঃ

আম গাছ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই জন্মে। তবে মাটি গভীর হতে হবে। সাধারনত ২-৬ মিটার গভীরতা যুক্ত মাটিতে আম চাষ করা ভালো। মাটি কিছুটা অম্লীয় হতে হবে।

 

স্থান নির্বাচনঃ

জমি উচু ও সুনিষ্কাশিত হতে হবে। জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

জমি তৈরিঃ

জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমি সমতল হতে হবে। আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে।

জমিতে যদি পুরনো গাছের গোড়া, ইট, পাথর বা অন্য কোন জঞ্জাল থাকে তাহলে সরিয়ে ফেলতে হবে।

জমি খুব ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে তাহলে গাছের শিকড় বৃদ্ধিতে তা সাহায্য করে এবং গাছ মাটি থেকে সহজেই পুষ্টি শোষন করতে পারে।

 

রোপন প্রণালীঃ

চারা রোপন করার জন্য জমি সমতল করতে হবে। এই সমতল জমিতে বর্গাকার পদ্ধতিতে, আয়তাকার পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে।

যদি পাহাড়ি জমিতে চাষ করা হয় তাহলে কন্টুর পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে। চারা রোপন করার জন্য সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত চারা বাছাই করতে হবে।

 

রোপনের সময়ঃ

চারা রোপনের উপযুক্ত সময় হলো জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে আষাঢ় মাসে এবং ভাদ্র মাস থেকে আশ্বিন মাসে।

তবে জল সেচ দেয়ার সুবিধা থাকলে বছরের যে কোন সময় চারা রোপন করা যায়। শীতকালে চারা রোপন না করাই ভালো।

 

রোপন দূরত্বঃ

গাছ সাধারনত ১২ মিটার দূরত্বে লাগানো উচিত। তবে ১০ মিটার দূরত্বে ও লাগানো যায়।

গাছ যদি একটু খাটো প্রকৃতির হয় তাহলে ৬-৮ মিটার দূরত্বে ও লাগানো যায়। জাত ভেদে বিভিন্ন গাছের রোপন দূরত্ব বিভিন্ন হয়ে থাকে।

 

গর্ত তৈরিঃ

চারা রোপন করার আগে গর্ত তৈরি করে নিতে হবে। গর্ত তৈরি করার জন্য চারার জাত, জমির আকৃতি এসব খেয়াল করতে হবে।

গর্ত সাধারনত ৭৫×৭৫×৭৫ সেমি করতে হবে। গর্ত করার ১০-১৫ দিন পর এতে সার প্রয়োগ করতে হবে।

গর্তের জন্য গোবর সার ১০ কেজি, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম, জিপসাম ২৫০ গ্রাম দিয়ে মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর গর্ত ভরাট করে দিতে হবে।

 

চারা রোপনঃ

গর্ত তৈরি করার ১০-১৫ দিন পর চারা রোপন করতে হবে। চারা রোপন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে চারার গোড়া যেন সোজা থাকে।

চারা যেন বেশি পরিমান গর্তে না ঢুকে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চারার গোড়া যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

রোপন করার পর খুটি বেধে দিতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি দিয়ে কিছুটা উচু করে দিতে হবে। প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।

 

সার প্রয়োগঃ

ভালো ফলন পেতে হলে গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে।

একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে বছরে ৫০ কেজি জৈব সার, ২ কেজি ইউরিয়া, ১ কেজি টিএসপি, ৫০০ গ্রাম এমওপি, ৫০০ গ্রাম জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে।

সবগুলো সার দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে আষাঢ় মাসের দিকে।

দ্বিতীয় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাসের দিকে।

 

আগাছা দমনঃ

গাছের গোড়ায় যেন আগাছা না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমি ভালোভাবে চাষ দিতে হবে যেন আগাছা না জন্মায়।

তবে ভালোভবে চাষ দিলে আরো উপকার হয় কারন আগাছাগুলো পচে জৈব সারে পরিণত হয়। আমগাছে এক ধরনের পরগাছা উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা যায়।

এরা গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। গাছকে দুর্বল করে দেয়। এসব থেকে গাছকে রক্ষা করতে হবে।

 

সেচ ব্যবস্থাঃ

গাছে মুকুল ধরার ৩-৪ মাস আগে থেকে গাছে সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

তবে মুকুল ধরার পরে এবং ফল মটর দানার মতো থাকে অবস্থায় একবার সেচ দিতে হবে। বেসিন পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করলে ভালো।

 

ডাল ছাটাইঃ

গাছের কান্ডটি যেন সোজা ভাবে উঠতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই অপ্রয়োজনীয় ডাল পাতা ছেটে দিতে হবে।

 

গাছের মুকুল ভাঙ্গনঃ

কলম থেকে যে গাছে তৈরি হয় তাতে ৪ বছর বয়স হবার আগ পর্যন্ত মুকুল আসলে ভেঙ্গে দিতে হবে। বেশি পরিমান ফলের আকৃতি নষ্ট করে।

রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ

আম গাছে বিভিন্ন পোকার আক্রমন হতে দেখা যায়। তার মধ্যে এনথ্রাকনোজ, গ্যামোসিস, পাউডার মিলডিউ, বোটা পচা রোগ ইত্যাদি হতে পারে।

এসব পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

 

ফসল সংগ্রহঃ

ফল ধরার ৩-৫ মাসের মধ্যেই জাত ভেদে ফল পাকতে শুরু করে। ফল পাকা শুরু করলেই বাশের কোটায় থলে সদৃশ জালি লাগিয়ে আম পাড়তে হবে।

খেয়াল রাখতে হবে ফলে যেন কোন ভাবেই আঘাত না লাগে। ফল কখনোই পুরোপুরি পাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না।

অল্প পাকা শুরু হলেই গাছ থেকে ফল পাড়তে হবে।

 

ফলনঃ

উপযুক্ত পরিচর্যা ও সঠিক উপায়ে চাষ করতে পারলে জাত ভেদে একর প্রতি ২০০-২২০ মন আম পাওয়া যেতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top