পুঁই শাক একটি লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা ও ডাটি শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সাধারনত এর পাতা বেশি খাওয়া হয়ে থাকে বলে একে পুঁই শাক বলা হয়ে থাকে। শাক ভাজি করে খাওয়া হয়ে থাকে।
এটি অনেক পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ। এত অনেক ভিটামিন রয়েছে। দামে সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ার কারণে এটি সকলের কাছেই পছন্দ। পুঁই শাক সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি লাল পুঁই শাক এবং আরেকটি সবুজ পুঁই শাক।
আজ আমরা আপনাদের সাথে পুঁই শাক চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই পুঁই শাক চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন পুঁই শাক চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
মাটি ও জলবায়ুঃ
পুঁই শাক সাধারনত গ্রীষ্মকালীন ফসল। এটি গরম আবহাওয়া পছন্দ করে । উজ্জ্বল রোদ যুক্ত জমিতে পুঁই শাক ভালো জন্মে।
কম তাপমাত্রা ফসলের বৃদ্ধি হ্রাস করে থাকে। ফলে ফলন ও কম হয়ে থাকে। সাধারনত সব ধরনের মাটিতেই পুঁই শাক ভালো জন্মে।
তবে সুনিষ্কাশিত বেলে দোআঁশ বা এটেল দো আঁশ মাটি পুঁই শাক চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
বীজ নির্বাচনঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে ভালো ও রোগ মুক্ত বীজ বাছাই করতে হবে। বীজ যেন পরিপুষ্ট হয়, পরিষ্কার হয় ও চিটা মুক্ত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বীজের আকার যেন সব গুলো একই রকম হয় সেদিকে ও খেয়াল রাখতে হবে।
বীজ শোধনঃ
বীজ বপন করার আগে শোধন করে নিতে হয়। এতে বীজে রোগের আক্রমন কম হয় ও ফলন ভালো হয়।
বীজ শোধন করার জন্য ভিটাভেক্স ২০০ পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।
চারা তৈরিঃ
পুঁই শাক এর বীজ ছিটিয়ে বপন করা যায় এছাড়া সারিতে ও বপন করা যায়। সারিতে বীজ বপন করলে প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
ছিটিয়ে বীজ বপন করলে বীজ বেশি পরিমানে লাগে। বীজ বপন করার জন্য শীতকাল উপযুক্ত সময়। শীতে যখন তাপমাত্রা কম থাকে তখন বীজ বপন করা উচিত।
বর্ষাকালে পুঁই শাক এর চাষ ভালো হয়। বীজ বপন করার আগে ২৪ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর একে জমিতে বপন করতে হবে।
কোন কোন সময় বেডে ও চারা তৈরি করা হয়ে থাকে। সাধারনত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চমাস পর্যন্ত বেডে বা পলিব্যাগে বীজ বপন করা হয়ে থাকে।
চারার বয়স দুই সপ্তাহ হলে তখন সেগুলো তুলে মূল জমিতে লাগানো হয়ে থাকে।
জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ
জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে ৫-৬ টি চাষ দিতে হবে। চারা উৎপাদন করার পর ১৫-২০ দিন পার হলে চারা জমিতে লাগানো যায়।
পুঁই শাক এর চারা রোপন করার জন্য এক সারি থেকে আরেক সারি ১ মিটার এবং এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব ৫০ সেমি রাখতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ও ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে।
পুঁই শাক চাষ করতে হলে প্রতি শতকে গোবর ৬০ কেজি দিতে হবে, সরিষার খৈল দিতে হবে ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া দিতে হবে ৮০০ গ্রাম, টিএসপি দিতে হবে ৪০০ গ্রাম এবং এমওপি দিতে হবে ৪০০ গ্রাম।
ইউরিয়া ছাড়া বাকি সব সার ই জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারার বয়স ১০-১২ দিন হলে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে।
প্রথম বার ফসল তোলার পর বাকি দুই কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। গোবর সার ও টিএসপি অর্ধেক জমি তৈরি করার সময় দিতে হবে বাকি অর্ধেক দিতে হবে গর্তে চারা রোপন করার সময়।
সেচ ব্যবস্থাঃ
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে সেচ দিতে হবে। পুঁই শাক চাষে সাধারনত তেমন সেচ দিতে হয় না।
বর্ষা মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে হয় না তবে জমিতে যদি রস না থাকে তবে সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে মাটি আলগা করে দিতে হবে।
তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে গোড়া পচে যেতে পারে।
তাই প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যেতে পারে।
আগাছা দমনঃ
নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এতে ফসলের ফলন ভালো হবে। প্রয়োজনে বাউনি দিতে হবে। বাউনি দিলে ফলন বেশি হয়।
চারা যখন ১ ফুট পরিমান লম্বা হবে তখন আগা কেটে দিতে হবে। এতে গাছ ডালপাতা বেশি ছড়াবে। গাছের গোড়ায় প্রয়োজনে মাটি চেপে দিতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
পুঁই শাক গাছে পাতার বিটল ছাড়া আর কোন পোকা আক্রমন করে না। এই পোকা পাতায় ছিদ্র করে ফেলে।
গাছে রোগ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় বালাই নাশক বা ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
পুঁই শাক গাছের ডগা মাঝে মাঝে কেটে দিতে হবে। তাতে শাক খাওয়া হবে আবার গাছে নতুন ডগা ও বের হবে।
সঠিক ভাবে চাষ করতে পারলে একবার চারা লাগিয়ে ৮-১০ বার শাক সংগ্রহ করা যায়। ধারালো ছুরি দিয়ে ডগা কাটতে হবে।
ফলনঃ
সঠিক ভাবে চাষ করতে পারলে প্রতি শতকে ২০০-২৮০ কেজি পুঁই শাক পাওয়া যেতে পারে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।