লেটুস সাধারনত পাতা জাতীয় একটি সবজি। এর পাতা তরকারি হিসেবে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন ফাস্ট ফুড বা সালাদে ও এর ব্যবহার হয়ে থাকে।
এই পাতা কাচা খাওয়া যায়। লেটুস চাষের জন্য বড় জমি দরকার হয় না সব সময় বরং বাসা বাড়িতে টবে বা বাড়ির আঙিনায় লেটুস চাষ করা যায়। লেটুসে জলের পরিমান বেশি তাই মোটা মানুষের ওজন কমায়।
আজ আমরা আপনাদের সাথে লেটুস চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই লেটুস চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন। চলুন দেখে নিন লেটুস চাষের বিস্তারিত
জমি ও মাটিঃ
লেটুস চাষের জন্য উর্বর দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। দোআঁশ মাটির সাথে প্রয়োজনীয় পরিমান জৈব সার মিশানো থাকতে হবে।
তবে জৈব সারের পরিমান বেশি হলে এটেল মাটিতে ও লেটুস চাষ করা যায়।
চাষের সময়ঃ
লেটুস সাধারনত শীত প্রধান দেশের সবজি। তবে বর্তমানে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ও এর চাষ হয়ে থাকে । অক্টোবর মাস থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।
জমি তৈরিঃ
লেটুস চাষে জমি ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে। মাটি অবশ্যই উর্বর হতে হবে। মাটি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরা করে নিতেহবে।
মাটিতে যেন প্রয়োজনীয় জল থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাটি বেশি ঝুরঝরা হলে মাটিতে সমপরিমান জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
চাষের নিয়মঃ
লেটুস চাষে বীজ সরাসরি জমিতে বপন করা যায়। আবার বীজ তলায় বীজ বপন করে চারা তৈরি করে তারপর জমিতে চারা রোপন করা যায়।
চারার বয়স সাধারনত এক মাস হলে জমিতে রোপন করা যায়। লাইন অনুযায়ী চারা রোপন করতে হয়। এক লাইন থেকে আরেক লাইনের দূরত্ব হবে ১২ ইঞ্চি।
এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব হবে ৮ ইঞ্চি। লেটুসের বীজ আকারে খুব ছোট তাই বীজ বপন করার সময় বীজের সাথে ছাই মিশিয়ে নেওয়া উচিত।
চারা রোপনঃ
চারা রোপন করতে হবে বিকেল বেলা । চারা রোপন করার সময় সাবধানে রোপন করতে হবে যেন চারার শিকড় আঘাত না পায়।
রোপন করার পর চারার গোড়ায় মাটি দিয়ে হালকা ভাবে চেপে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর চারাকে রোদ ও বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ৩-৪ দিন ঢাকনি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
সকাল বিকাল নিয়মিত জল দিতে হবে। প্রয়োজনে জমিতে সেচ দিতে হবে। এবং মাঝে মাঝে চারার গোড়ার মাটি নিড়ানি দিয়ে হালকা আলগা করে দিতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। এক শতাংশ জমিতে গোবর সার দিতে হবে ২০ কেজি, খৈল দিতে হবে ৮০০ গ্রাম, ইউরিয়া দিতে হবে ৪০০ গ্রাম, টিএসপি দিতে হবে ১০০ গ্রাম, পটাশ দিতে হবে ১০০ গ্রাম।
প্রথম চাষের সময় গোবর প্রয়োগ করতে হবে। টিএসপি ও পটাশ সার দিতে হবে জমি শেষ চাষের সময়। সার প্রয়োগ করে তা ভালো ভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে দুই কিস্তিতে। চারা বয়স যখন ১০ দিন তখন একবার প্রয়োগ করতে হবে। আবার চারার বয়স ২০ দিন হলে দ্বিতীয় বার প্রয়োগ করতে হবে।
ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এবং জমিতে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগঃ
জমিতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জল জমে থাকলে তা বের করে দিতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
পাখি বা অন্য কোন পোকা যেন চারার কচি পাতা বা ডগা ইত্যাদি খেয়ে না ফেলে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমিতে সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
গাছ বড় হতে থাকলে মাঝে মাঝে চারার গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। চারা যদি খুব বেশি ঘন হয়ে যায় তাহলে তা পাতলা করে দিতে হবে। তাহলে সব গাছ সমান পরিমানে আলো বাতাস পায়।
রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ
লেটুস গাছে ছাতা রোগ দেখা দিতে পারে। এই রোগে গাছের পাতা নুয়ে পড়ে, পাতার আগা পুড়ে যায়। এই রোগ আক্রমন করলে আক্রান্ত গাছ নষ্ট করে ফেলতে হবে।
এছাড়া জাব পোকা গাছের ক্ষতি করে থাকে । এই পোকা আক্রমন করলে হাত দিয়ে তুলে পোকা মেরে ফেলতে হবে। তবে আক্রমন বেশি হলে প্রয়োজনীয় পরিমানে বালাই নাশক স্প্রে করতে হবে।
জমিতে যদি কীটনাশক স্প্রে করা হয়ে থাকে তাহলে কমপক্ষে ১৫ দিন এর পাতা সংগ্রহ করা যাবে না। যেহেতু লেটুস গাছ থেকে পাতাই খাওয়া হয়ে থাকে তাই কীটনাশক ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
জমিতে চারা রোপন করার এক মাস পরেই লেটুস পাতা খাওয়ার জন্য উপযোগী হয়ে থাকে। গাছে পাতা তোলার উপযুক্ত হলে পাতা সংগ্রহ করতে হবে।
এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ গাছ তুলে ফেলা ভালো। তবে বাসা বাড়িতে যদি চাষ করা হয় তখন গাছ থেকে প্রয়োজনীয় পাতা সংগ্রহ করা উচিত।
ফলনঃ
সঠিক ভাবে যত্ন নিতে পারলে এক শতাংশ জমি থেকে প্রায় ৪০ কেজি লেটুস পাতা সংগ্রহ করা যায়।