লেবু একটি অতি পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত ফল। লেবু আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি থাকে। বাজারে এর চাহিদা প্রচুর।
সাধারনত দুই ধরনের লেবু পাওয়া যায়। গোল লেবু ও কাগজি লেবু। এ দুই জাতের লেবু ছাড়া ও আরো বেশ কয়েক প্রজাতির লেবু পাওয়া যায়।
চলুন দেখে নেই লেবু চাষের বিস্তারিতঃ
মাটিঃ
লেবু চাষের জন্য সাধারনত দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। জমি উচু হতে হবে এবং সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
যদি মাটিতে গোবর সার বা অন্যান্য জৈব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে তাহলে যে কোন মাটিতেই লেবু চাষ করা যায়। মাটিতে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে সেজন্য মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে।
জাত নির্বাচনঃ
লেবুর জাত নির্বাচন করতে হলে সাধারনত বিচিহীন জাত নির্বাচন করা উচিত। এ রকম জাত থেকে বছরের প্রায় সব সময় ই সুন্দর ফল পাওয়া যায়।
সুন্দর ও ভালো জাত পেতে হলে ভালো কাটিং সংগ্রহ করতে হবে। মাতৃগাছ থেকে কাটিং সংগ্রহ করে তা অন্য জায়গায় লাগাতে হবে।
কাটিং এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে রোদ পড়ে, বাতাস চলাচলে সুবিধা আছে।
রোপন সময়ঃ
লেবুর চারা লাগানোর জন্য সাধারনত মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত উত্তম সময়। তবে সেচ দেওয়ার সুব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই চারা লাগানো যায়।
মাদা তৈরিঃ
লেবু চারা রোপন করার জন্য ১৫-২০ দিন আগে ২.৫×২.৫ মিটার দূরে ৬০×৬০×৬০ সেমি আকারে গর্ত তৈরি করতে হবে।
গর্তের মাটির সাথে গোবর সার ১০-১৫ কেজি, ইউরিয়া সার ২০০ গ্রাম, টিএসপি সার ২০০ গ্রাম ও এমওপি সার ২০০ গ্রাম ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে।
গর্ত ভরাট করে মাটিতে জল দিতে হবে।
রোপন পদ্ধতিঃ
লেবুর চারা রোপন করার সময় সারি করে লাগাতে হবে বা বর্গাকারে লাগাতে হবে। তাহলে বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করা সহজ হয়।
এছাড়া পাহাড়ি জমিতে ও চারা লাগানো যেতে পারে সেক্ষেত্রে আড়াআড়ি লাইন করে চারা লাগালে মাটি কম ক্ষয় হয়।
চারা বা কলম রোপনঃ
মাদা তৈরি করার পর ১৫-২০ দিন পর লেবুর চারা বা কলম লাগাতে হবে। চারা লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে চারা যেন গর্তের ঠিক মাঝখানে থাকে এবং খাড়াভাবে লাগানো হয়।
চারার চারদিকের মাটি হাত দিয়ে চেপে গাছের গোড়ায় ভালো করে বসিয়ে দিতে হবে। তারপর চারাটি খুটির সাথে বেধে দিতে হবে। প্রয়োজনে চারার গোড়ায় জল দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। ১-২ বছর বয়সী গাছের জন্য গোবর সার ১৫ কেজি, ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম এবং এমওপি দিতে হবে ২০০ গ্রাম।
৩-৫ বছর বয়সী গাছের জন্য গোবর সার ২০ কেজি, ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম, টিএসপি ৩০০ গ্রাম ও এমওপি দিতে হবে ৩০০ গ্রাম।
গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সারের পরিমান বাড়বে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
সবগুলো সার সমান তিন ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। সার গাছের গোড়া থেকে কিছু দূরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
তারপর কোদাল দিয়ে কুপিয়ে বা ভালো ভাবে মই দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রথম কিস্তি দিতে হবে বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে।
দ্বিতীয় কিস্তি দিতে হবে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তৃতীয় কিস্তি দিতে হবে মাঘ থেকে ফাল্গুন মাসে।
আগাছা পরিষ্কারঃ
লেবু গাছের চারপাশ পরিষ্কার করে রাখতে হবে যেন আগাছা না জমতে পারে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং পুষ্টি শোষণ করে নেয়।
এছাড়া আগাছা থাকলে রোগ ও পোকা মাকড় আক্রমন বেশি হয়।
ডাল ছাটাইঃ
গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত শাখা বের হলে তা ছাটাই করে দিতে হবে। গাছের ভিতরে যদি অতিরিক্ত ডাল জন্মে তাহলে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না তাই সে সব অতিরিক্ত ডাল ও কেটে দিতে হবে।
দূর্বল ও রোগাক্রান্ত ডাল কেটে দিতে হবে। ডাল ছাটাই করার উপযুক্ত সময় হলো ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
সেচ ও নিষ্কাশনঃ
শুকনা মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে হবে। ২-৩ বার সেচ দিলে ভালো হয়। লেবু গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
আবার বর্ষা মৌসুমের সময় জমিতে যেন অতিরিক্ত জল না জমে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন জল বের হয়ে যেতে পারে।
রোগ দমন ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
লেবু গাছে বিভিন্ন পোকার মধ্যে আছে ডাল ও কান্ড ছিদ্রকারী পোকা, সাইলা পোকা, মিলিবাগ ও ফল শোষক পোকা অন্যতম।
এসব পোকা আক্রমন করলে গাছের পাতা কান্ড খেয়ে ফেলে ও পাতার রস শোষন করে নেয়। রোগ ও পোকা দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
লেবু পরিপক্ক হলে তা সংগ্রহ করতে হবে। লেবুর আকার দেখে তা পরিপক্ক হয়েছে কিনা বুঝতে হবে।
ফলনঃ
সাধারনত একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে কমপক্ষে ১৪০-১৫০ টি লেবু পাওয়া যায়।
তাছাড়া ও কিছু কিছু জাত আছে তা থেকে সারা বছরই লেবু পাওয়া যায়।