কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, উত্তর প্রদেশ – Kashi Vishwanath Jyotirlinga Temple

কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির (Kashi Vishwanath Jyotirlinga Temple): তবে সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের মতো প্রাচীন কালে অনেকবার এই মন্দিরটির ধ্বংসপ্রাপ্ত করা হয়েছে আবার পুনঃ নির্মিতও করা হয়েছে। মন্দিরের পাশে জ্ঞান বাপি মসজিদ নামে একটি মসজিদ আছে। এবং আদি মন্দিরটি এই মসজিদের জায়গাটিতেই অবস্থিত ছিল। বহুবার ধ্বংস হওয়ার পর সেটি আসল জায়গা থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে পাশে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।

বারানসি শহরের অপর নাম হল কাশী, গঙ্গার পশ্চিম তিরে অবস্থিত উত্তরপ্রদেশের বারানসিতে অবস্থিত দেশের এই বিখ্যাত হিন্দু মন্দির হল কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির। হিন্দু মত অনুসারে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির নামে পরিচিত শিবের ১২ টি পবিত্র তম মন্দিরের মধ্যে অন্যতম। মন্দিরের প্রধান দেবতার শিব যিনি কিনা বিশ্বনাথ বা বিশ্বেশ্বর নামে পূজিত হয়ে আসছেন প্রাচীনকাল থেকে।

কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, উত্তর প্রদেশ - Kashi Vishwanath Jyotirlinga Temple
কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, উত্তর প্রদেশ – Kashi Vishwanath Jyotirlinga Temple

অতিতে অনেকবার মন্দিরটি ধ্বংস করা হয়েছিল আবার পুনঃনির্মিত করা হয়েছে। বর্তমান মন্দিরটি ১৭৮০ সালে ইন্দরের মহারানী অহল্যাবাই হোলকার তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন। তাছাড়া সাম্প্রতিক কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের করিডোরের উদ্বোধন করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এছাড়া দেখা যায় যে, মন্দির চত্বরে অনেকগুলি ছোট ছোট মন্দির ও গঠন করা হয়েছে। ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটি বিখ্যাত মন্দির বলে মনে করা হয়। ১২ টি জ্যোতিরলিঙ্গ, যেমন ধরুন ১) গুজরাটের সোমনাথ, ২) অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রী শৈলম এর মল্লিকার্জুন, ৩)  মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়নীর মহাকালেশ্বর, ৪)  মহারাষ্ট্রের ভীম শংকর, ৫)  মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর, ৬)  হিমালয়ের কেদারনাথ, ৭)  মহারাষ্ট্রের ত্রাম্বকেশ্বর, ৮)  উত্তরপ্রদেশের বারানসীর বিশ্বনাথ, ৯)  ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ, ১০)  তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম, ১১)  গুজরাটের নাগেশ্বর এবং ১২) মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদ এর ঘ্রিষ্ণেশ্বর।

কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের ইতিহাস:

এই মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে জানা যায় যে, ১৪৯০ সালে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি প্রথম খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। অনেকেই হয়তো জানেন না যে এই মন্দির বেশ কিছুসময় বৌদ্ধ দের দ্বারা পরিচালিত হত। এছাড়া মুঘল দের দ্বারা এই বিখ্যাত মন্দির বারবার লুট করা হয়েছে, পরবর্তীতে সেটা ধ্বংসও করা হয়েছে। এবং মূল মন্দির পরবর্তীতে আবার পুনঃ নির্মিত করা হয়েছে।

মুঘল সম্রাট আকবর মূল মন্দির নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীকালে আওরঙ্গজেব মন্দিরটি আবার ধ্বংস করেন। ভারত মহাদেশের উপর প্রায় ৪৯ বছর ধরে শাসন চালিয়ে গিয়েছিলেন।

এছাড়া ১৭৮০ সালে ইন্দোরের মহারানী অহল্যা বাই হোলকার সর্বশেষ পুনঃনির্মিত করেন এই কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি। তিনি মন্দিরটি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং এর জন্য যত খরচ হয় সেটাও তিনি সরবরাহ করেছিলেন। তারপরে আকবরের প্রোপুত্র আরঙ্গজেব মন্দিরটি ধ্বংস করে তার জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণ করে।

এই মন্দিরগুলি গঙ্গার তীরে বিশ্বনাথ গলি নামে একটি গলিতে অবস্থিত। প্রধান মন্দিরের এর মধ্যে একটি ৬০ সেন্টিমিটার উঁচু ও ৯০ cm পথ দিয়ে শিবলিঙ্গ টি রূপোর বেদীর উপরে স্থাপিত। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি হিন্দুদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় বহন করে। হিন্দুদের বিশ্বাস ভগবান শিব এখানে কিছুকাল অবস্থান করেছিলেন।

১৮৩৫ সালে পাঞ্জাবের শিখ সম্রাট রঞ্জিত সিংহ মন্দিরের চূড়াটি এক হাজার (১,০০০) কিলোগ্রাম সোনা দিয়ে সম্পূর্ণ মুড়ে দিয়েছেন। যেটা মন্দিরের আকর্ষণ অনেকখানি বাড়িয়ে তোলে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের তিনটি গম্বুজ সোনায় মোড়া। প্রচলিত ধারণা অনুসারে এই সোনার ছাত্রা দেখে যেকোনো ইচ্ছে পূরণ হয় বলে মনে করা হয়।

কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের তাৎপর্য:

হিন্দু ধর্মে প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারী মনে করা হয় যে, মহাদেবের ত্রিশূলের ডগায় অবস্থিত কাশী অথবা বারানসি। গঙ্গা নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত বিশ্বনাথের এই বহু প্রাচীন মন্দির হল কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির।

বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয় এই মন্দিরকে। পুরানে কথিত আছে যে স্বয়ং মহাদেব একবার ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর মধ্যে কলহ থামাতে গিয়ে একটি আলোর শিখায় স্বর্গ, মর্ত্য এবং পৃথিবীকে বিদ্ধ করেছিলেন।

সেই আলোর শিখা থেকেই এই জ্যোতিরলিঙ্গের সৃষ্টি। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির বিশ্বেশ্বর মন্দির নামেও পরিচিত। এই মন্দিরটি মহাদেবের অত্যন্ত প্রিয় বলে মনে করা হয়। এছাড়া এই মন্দিরের মাথার চূড়া সোনায় মোড়া বলে মন্দিরকে অনেকেই স্বর্ণমন্দির হিসাবে ও চেনেন।

এই মন্দিরের গুরুত্ব:

কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী সবথেকে পবিত্রতম মন্দির গুলির মধ্যে অন্যতম। এখানে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, আদি শঙ্করাচার্য, গোস্বামী তুলসীদাস, স্বামী বিবেকানন্দ, গুরু নানক, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী, বিভিন্ন ধর্ম নেতারা এই মন্দির দর্শনে এসেছিলেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে, গঙ্গাতে একটি ডুব দিয়ে এই মন্দির পরিক্রমা করে, এই মন্দির দর্শন করলে মোক্ষ লাভ হয় বলে মনে করা হয়।

কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের কাছে মনিকর্নিকা ঘাট শাক্তদের পবিত্র তীর্থস্থান অথবা অন্যতম শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিত। শৈব সাহিত্যে দক্ষযজ্ঞের যে বিবরণ পাওয়া যায় তা শক্তিপীঠের উৎস সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক কাহিনী।

যেখানে বর্ণনা করা আছে যে, সতীর দেহত্যাগের পর শিব মনিকর্নিকা ঘাট দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে এসেছিলেন। সেই কারণে এই মনিকর্নিকা ঘাট হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি বিশেষ পবিত্র স্থান।

অন্যান্য জ্যোতিরলিঙ্গ মন্দিরের মতো এই মন্দির অর্থাৎ কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতিরলিঙ্গ মন্দিরে মহা শিবরাত্রি উপলক্ষে পূজা অর্চনার আয়োজন করা হয় খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে। তাছাড়া সম্পূর্ণ শ্রাবণ মাস ধরে এখানে শিবের উপাসনা করা হয়।

দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা এবং পর্যটকরা এখানে আসেন পূজা দিতে এবং জায়গাটি ঘুরে দেখতে। তবে যাই বলুন না কেন, উৎসবের দিনগুলোতে এই মন্দির বিশেষ ভাবে সেজে ওঠে যা ভক্ত দের মন প্রাণ জুড়িয়ে দেয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top