করমচা (Carissa Carandas) একটি টক জাতীয় ফল। ছোট এ ফল টি খুবই জনপ্রিয়। এই গাছ টি খুব ঝোপ যুক্ত হয় এবং এতে বড় বড় কাটা থাকে।
করমচা ফুল দেখতে সাদা ও হালকা রঙের হয়ে থাকে। ফুল আকারে বড় হয় এবং খুব মিষ্টি গন্ধ থাকে। এই ফল পাকলে অনেকটা জামের মতো দেখা যায়।
ফল পাকলে এর স্বাদ কিছুটা টক- মিষ্টি থাকে। আর সবুজ অবস্থায় ফল টক হয়।
আজ আমরা আপনাদের সাথে করমচা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই করমচা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন করমচা চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
মাটি ও জলবায়ুঃ
করমচা গাছ শুষ্ক পরিবেশে ভালো হয়। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া এর চাষে বিশেষ উপযোগী। তবে এটি ছায়া যুক্ত স্থানে বা খোলা জায়গায় ও চাষ করা যায়।
করমচা চাষের জন্য বেলে দোআঁশ মাটি বিশেষ উপযুক্ত। মাটি কিছুটা ক্ষারীয় হলে করমচা চাষে সুবিধা হয়।
জমিঃ
প্রায় সব জায়গায় ই করমচা চাষ করা যায়। জমি সমতল হতে হবে এবং উচু হতে হবে। জমিতে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
তবে নিচু জমিতে ও করমচা চাষ করা যায়, সেক্ষেত্রে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
চাষের সময়ঃ
ফেব্রুয়ারি মাসে করমচা গাছে ফুল আসে আর এপ্রিল মাস থেকে মে মাসের মধ্যে ফল আসে। তবে কখনো ও কখনো আবার গাছে প্রায় সারা বছরই কম বেশি করমচা ধরতে দেখা যায়।
চারা রোপন পদ্ধতি ও গর্ত তৈরিঃ
করমচা গাছ রোপন করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল। চারা রোপন করার আগে জমিতে গর্ত তৈরি করতে হবে।
গাছ লাগানোর ১৫-২০ দিন আগে গর্ত প্রস্তুত করে নিতে হবে। গর্ত তৈরির আগে জমি ভালো করে চাষ দিয়ে নিতে হবে।
৩০ সেমি গভীর করে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্ত তৈরি করার পর গর্তে প্রয়োজনীয় সার মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর গর্তে চারা রোপন করতে হবে।
চারা রোপন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে চারার গোড়া যেন সোজা থাকে। চারা টি যেন গর্তের ঠিক মাঝখানে বসে। চারা রোপন করার পর গোড়ায় মাটি চেপে দিতে হবে।
গাছ যেন হেলে না পড়ে সে জন্য চারার সাথে খুটি পুতে দিতে হবে। প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।
বংশ বিস্তারঃ
করমচার চারা বীজ থেকে তৈরি করা যায় আবার বিভিন্ন কলম তৈরি করে ও চারা লাগানো যায়। তবে বীজ থেকে তৈরি গাছে ফল আসতে সময় বেশি লাগে।
কলম থেকে তৈরি গাছে ফল আসে দ্রুত । তাই চারা তৈরিতে কলম পদ্ধতি ব্যবহার করা উত্তম। ঠিক ভাবে যত্ন নিতে পারলে এক বছরের মাঝেই গাছে ফল আসার সম্ভাবনা থাকে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
ভালো ফলন পেতে হলে গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। করমচা চাষে সাধারনত বর্ষাকালের আগেই জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগের জন্য জমিতে কম্পোস্ট সার ১০ কেজি আর ২৫ গ্রাম সুফলা এক সাথে মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
সাধারনত গাছ বড় হয়ে গেলে সার প্রয়োগ করার দরকার হয় না ।
তবে উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে গোবর সারের সাথে ৫০ গ্রাম সুফলা মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগঃ
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ প্রয়োগ করতে হবে। চারা যখন ছোট থাকবে তখন সেচ দিতে হবে।
জমিতে সার প্রয়োগ করার পর যদি মাটি শুকনা মনে হয়ে তখন সেচ দিতে হবে। আরেক বার সেচ দিতে হবে যখন গাছে ফুল আসে তখন।
গাছ বড় হয়ে গেলে সেচ দেয়ার প্রয়োজন নেই। শুকনা মৌসুমে ১৫ দিন পর পর সেচ দিলে ফলন ভালো হয়।
তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
করমচা গাছে আলাদা কোন যত্নের দরকার পড়ে না। তবে মাঝে মাঝে কিছু ডাল ছাটাই করে দেওয়া ভালো।
গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে। গোড়ায় আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। প্রয়োজনে মাটি হালকা কুপিয়ে দিতে হবে।
রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ
করমচা গাছে খুব বেশি পোকা মাকড় আক্রমন করে না । গাছ শক্ত ও কাটা জাতীয় হওয়ার কারণে পোকা বাসা বাধে না। তাছাড়া এ গাছ থেকে এক ধরনের আঠালো রস বের হয় ।
তবে ফল ছোট থাকা অবস্থায় ফল ছিদ্রকারী এক ধরনের পোকার আক্রমন হয়ে থাকে। এই পোকা ফলের ভেতর ঢুকে শাস খেয়ে ফেলে।
গাছে রোগ ও পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক ও বালাই নাশক স্প্রে করতে হবে।
ফল সংগ্রহঃ
করমচা ফল সাধারনত বর্ষাকালে বেশি পাওয়া যায়। বীজ থেকে যে গাছ লাগানো হয়ে থাকে তাতে ফল আসতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে।
আর কলম থেকে যে গাছ লাগানো হয় তাতে পরের বছরই ফল আসে। করমচা গাছে ফল সবগুলো এক সাথে পাকে না।
ফল পরিপক্ক হলে গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
ফলনঃ
সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারলে এবং উপযুক্ত আবহাওয়া পেলে একটি পূর্ণ বয়স্ক করমচা গাছ থেকে প্রায় ৪০-৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।