(Kankalitala Shakti Peeth in Bengali) কঙ্কালীতলা শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান কোন স্থানে? দেবী সতীর কোন অঙ্গ এখানে পতিত হয়েছে? কঙ্কালীতলা শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী কি? কিভাবে আরাধনা করা হয়? এই মন্দিরের তাৎপর্য কি? জানুন সবকিছু বিস্তারিত।
কঙ্কালীতলা শক্তিপীঠ ৫১ টি শক্তিপীঠের সর্বশেষ শক্তিপীঠ, এই স্থানে দেবী সতীর কঙ্কাল পতিত হয়েছিল। কঙ্কালীতলা মন্দির প্রাঙ্গনে একটি জলের কুণ্ড (জলাশয়) আছে যাহার ভেতরে দেবী সতীর কঙ্কাল রয়েছে। এই কারণে এই কুণ্ডের জলকে শান্তি জল হিসাবে মানা হয়।
সতীর দেহ অংশ গুলির মধ্যে একটি দেহ অংশ পড়েছিল এই স্থানে। তারপর সেখানে গড়ে উঠেছে একটি পবিত্র তীর্থস্থান দেবীর শক্তিপীঠ। এই শক্তি পীঠ টি বোলপুরের শান্তিনিকেতনে অবস্থিত। এমন একটি শান্তিপূর্ণ বেড়ানোর জায়গা যেখানে অনবরত সারা বছর ধরে পর্যটকদের সমাগম দেখা যায়।
এর পাশাপাশি শান্তিনিকেতনে বেড়াতে গেলে কঙ্কালীতলা মন্দিরে ঘুরে যাবেন না বা পূজা দেবেন না এমন হিন্দু ধর্মের মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। পর্যটক দের কাছে এই জায়গাটি অত্যন্ত জনপ্রিয় তো বটেই, তার পাশাপাশি এই শক্তিপীঠ স্থানীয় মানুষজনদের কাছেও অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও পবিত্র একটি তীর্থস্থান।
কঙ্কালীতলা শক্তিপীঠ:
শক্তিপীঠের নাম | কঙ্কালীতলা শক্তিপীঠ |
স্থান | কঙ্কালীতলা মন্দির, কোপাই নদীর তীরে, বোলপুর স্টেশন থেকে ১০ কি.মি. উত্তর-পূর্বে অবিস্থিত, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ভারত |
দেবীর অংশ | অস্থি বা হাড় |
শক্তির নাম | দেবগর্ভা |
কঙ্কালীতলা শক্তিপীঠের পৌরাণিক কাহিনী:
সতী দেবী পার্বতী যখন বাবার অমতে গিয়ে মহাদেব কে বিবাহ করেন, সেই সময় সতী পার্বতীর পিতা দক্ষ রাজা এই বিবাহ মেনে নিতে পারেন নি। তার ফলে বাড়িতে একটি দক্ষযজ্ঞের আয়োজন করেন মহাদেবকে অপমান করার জন্য।
কেননা সেই দক্ষ যজ্ঞে সকলের নিমন্ত্রিত থাকলেও সতী পার্বতী ও মহাদেব নিমন্ত্রিত ছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে খবর পেয়ে পার্বতী পিতৃ গৃহে গিয়ে উপস্থিত হন, তারা কেন নিমন্ত্রিত নন এমনটা জিজ্ঞাসা করতেই দক্ষ রাজা মহাদেবকে অনেক অপমান করতে শুরু করেন।
স্বামীর সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী দক্ষ যজ্ঞের জ্বলন্ত আগুনে আত্মাহুতি দেন। এই খবর পেয়ে মহাদেব একেবারে উন্মাদ পাগল হয়ে যান আর সেই স্থানে পৌঁছে দক্ষ রাজাকে হত্যা করে, দেবীর প্রাণহীন দেহ কাঁধে করে তুলে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন।
সেই তান্ডব নৃত্য করার ফলে পৃথিবীতে শুরু হয় মহাপ্রলয় সেই প্রলয় এর মধ্যে দিয়ে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়। তাই প্রলয় থামানোর জন্য একমাত্র উপায় ছিল মহাদেবকে শান্ত করা, আর মহাদেবকে শান্ত করতে গেলে দেবীর দেহকে খন্ড খন্ড করতেই হবে।
সেই কারণে বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবীর দেহকে ৫১ টি খন্ডে বিভক্ত করে ছড়িয়ে দেন। সেই দেহ অংশগুলি পৃথিবীর বুকে যে যে জায়গায় পতিত হয়েছিল সেই সেই জায়গায় গড়ে উঠেছে এক একটি সতীপীঠ অথবা শক্তিপীঠ।
কাহিনী অনুসারে দেবীর কঙ্কাল অথবা হাড় এই কঙ্কালীতলা অর্থাৎ শান্তিনিকেতনের বোলপুরে এই স্থানে পতিত হয়েছিল। সেই থেকে এই শক্তি পীঠের নাম কঙ্কালীতলা শক্তিপীঠ। যা কিনা স্থানীয় মানুষজন দের কাছে কঙ্কালিতলা মন্দির হিসাবে পরিচিত।
কঙ্কালীতলা মন্দির এর ভৌগলিক গুরুত্ব:
এই শক্তি পীঠ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অবস্থিত। বীরভূম জেলার বোলপুর থেকে ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কোপাই নদীর তীরে কঙ্কালীতলা শক্তিপীঠ টি রয়েছে। প্রাচীনকালে এই জায়গাটি কাঞ্চি নামে প্রসিদ্ধ ছিল। তন্ত্র চূড়ামণিতেও এই স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়।
পীঠ নির্ণয়তন্ত্র অনুসারে এখানে সতীর অস্থি (হাড়) পড়েছিল সেই কারণে এই পীঠ এর নাম কঙ্কালীতলা, আবার ভারতচন্দ্রের অন্যদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থ থেকে পাওয়া যায় যে, এখানে সতীর কোটিদেশ বা কোমরের অংশটি পড়েছিল। যাকে কাঁখ বলা হয়। এই পিঠ স্থান নিয়ে অনেক মতামত ও মতভেদ রয়েছে।
কঙ্কালীতলা মন্দিরের মাহাত্ম্য, দেবী ও ভৈরব:
এই শক্তি পীঠে দেবী হলেন গর্ভাদেবী অথবা দেবগর্ভা ও ভৈরব হলেন রুরু। দেবীর মন্দিরের কাছেই একটি কুণ্ড রয়েছে, যা কিনা এটির সঙ্গে বহু মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বহন করে। কুন্ডের মধ্যে কয়েকটি প্রস্তর খন্ড আছে।
যে গুলিকে সাধকরা দেবীর দেহের আরও অংশ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এই প্রস্তর খণ্ড গুলি কুড়ি বছর অন্তর কুণ্ড থেকে তোলা হয়, পরে পূজার পর সেগুলিকে আবার পুনরায় কুণ্ডের জলে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।
কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, কঙ্কালীতলার কুন্ডের সঙ্গে কাশির মনিকর্নিকা ঘাটের নাকি সরাসরি সংযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি কঙ্কালীতলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা রকম অলৌকিক ঘটনা। তাই পর্যটক দের কাছে এই জায়গাটি খুবই আকর্ষণীয়।
সেই কারণে এখানে পর্যটকদের পাশাপাশি ভক্তদের, পুন্যার্থীদের ভিড় লেগেই রয়েছে। তবে এখানে একটা কথা উল্লেখ করা খুবই জরুরী যে, কঙ্কালিতলা গুপ্ত তন্ত্রসাধনার জন্য খুবই বিখ্যাত। সাধকদের পাশাপাশি এখানে সারাবছর সাধারণ সব পর্যটকদের ভিড় তো থাকেই অনেকখানি, কেননা এই জায়গা গুলি অনেকটাই আকর্ষণীয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে কঙ্কালীতলা মন্দির একটি পবিত্র শক্তিপীঠ। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে দক্ষযজ্ঞের পর এখানে দেবীর পার্বতীর কঙ্কাল পড়েছিল। এর পাশাপাশি কঙ্কালীতলায় আরো অন্যান্য কিছু মন্দিরও আছে।
বীরভূম জেলার অন্যতম পর্যটন ক্ষেত্র শান্তিনিকেতন, রেলপথে বোলপুর শান্তিনিকেতনের পরের স্টেশন প্রান্তিক, এই প্রান্তিক স্টেশনের পাশ কাটিয়ে শান্তিনিকেতন থেকে নয় থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত কঙ্কালীতলা শক্তিপীঠ।
কঙ্কালীতলা মন্দির:
কঙ্কালীতলা, ৫১ টি সতী পীঠের মধ্যে একটি অন্যতম সতীপীঠ। কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, সতীর দেহত্যাগের পর শিব যখন সতীর দেহ নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করছিলেন সেই সময় সুদর্শন চক্র দ্বারা দেবীর দেহ খন্ড-বিখন্ড হয়। সেই সময় শিবের পিঠ থেকে দেবীর কঙ্কাল অথবা হাড় এই স্থানে পতিত হয়েছিল।
আর যে কুন্ডটি রয়েছে সেখানেই সেই হাড় পড়েছিল বলে ধারণা করা হয়। বড় রাস্তা থেকে ঢালুপথে খানিকটা এগিয়ে গেলেই কংকালী মায়ের মন্দির আপনি দেখতে পাবেন। সেই মন্দির চত্বর আড়ম্বরহীন এবং শান্ত প্রকৃতির। একটাই ঢাকা চাতাল রয়েছে অথবা নাট মন্দির আছে, তার সামনেই দেখবেন কুন্ডের এক কোণে মন্দিরটি অবস্থিত।
তবে আরো অন্যান্য সতী পীঠের থেকে এই মন্দিরটি একটু আলাদা। ছোট্ট মন্দিরে পাথরের বেদীর উপরে সতীর কালি রূপী একটি চিত্রপট রয়েছে। তবে ইদানিং সেই চিত্রপট টি একটি কাঁচ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। মন্দির সংলগ্ন যে কুন্ড টি রয়েছে সেখানে সকলে ফুল ভাসিয়ে থাকেন তাদের মনের ইচ্ছা জানিয়ে।
সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের কাছে প্রতিটি তীর্থ স্থান খুবই পবিত্র, তেমনি ৫১ টি শক্তি পীঠের মধ্যে যে কোনো শক্তি পীঠে ঘুরে আসতে পারলে জীবন ধন্য হয় বলে মনে করেন সকলেই। আর তাই কোন এক সময়ে এমন তীর্থ স্থানে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য এই সমস্ত শক্তি পীঠে পূজা অর্চনার উদ্দেশ্যে ভক্ত দের সমাগম ঘটে সারা বছর ধরে।
খুব সুন্দর তথ্য, অবশ্য ই যাবো, ধন্যবাদ আপনাদের