আপনি নিশ্চয় শুনে থাকবেন,
“জমিতে বিনিয়োগই শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ”।
আসলেই কি তাই?
সাধারণভাবে বিবেচনা করলে আমরা দেখতে পাই জমির দাম সবসময়ই বাড়তে থাকে। কিন্তু উন্নয়নের সুযোগ কম এমন জমি কিনলে লাভবান হওয়া খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়।
তাই জমি বিনিয়োগের জন্য জমি কেনার আগে অনেক বিষয় বিবেচনা করতে হয়।
আমরা এই সাইটে আপনাদের সাথে পশ্চিমবঙ্গের জমি বিষয়ক অনেক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে থাকি।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা জমি কেনা ভালো বিনিয়োগ কিনা তা নিয়ে আলোচনা করবো। আসুন দেখে নিই, প্রচুর পরিমানে জমি কেনা কি ভালো বিনিয়োগ কিনা।
জমিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়া যা কিছুর উপর নির্ভর করে থাকে
শুধু জমি কিনলেই হবে না। জমি কেনার আগে আপনাকে দেখে নিতে হবে এই জমি কিনলে ভবিষ্যতে দাম বাড়বে কিনা।আসুন দেখে নি জমিতে বিনিয়োগের আগে কি কি দেখে নিতে হয়।
জমির মাটির অবস্থা কেমন
আপনি যে জমি কিনতে চাচ্ছেন দেখে নিতে হবে তার মাটি যথেষ্ট শক্ত কিনা। তা নাহলে আপনার ঐ জমিতে ভবিষ্যতে উচু ভবন তৈরি করতে পারবেন না।
জমির মাটি দুর্বল হলে আপনি উচু ভবন করতে চাইলে অন্য জমির চাইতে বেশি খরচ করে পাইলিং করতে হবে, যা আপনার ভবন নির্মান খরচ বাড়িয়ে দেবে। তাই জমির মাটি শক্ত কিনা সেটা জানা খুবই জরুরি।
জলের সরবরাহের ব্যবস্থা আছে কিনা
জমিতে জলের সরবরাহের ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। আপনার জমিতে জল সহজলভ্য হলে সে জমি বিনিয়োগের জন্য লাভজনক হবে, নইলে এ জমিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়া যাবে না।
তাই জলের সরবরাহের ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা দেখে নেয়া খুবই দরকারী।
আশেপাশের জমিতে কি কি স্থাপনা রয়েছে
আপনার বিনিয়োগকৃত জমির আশেপাশে কি স্থাপনা আছে তা অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
জমির পাশেই শিল্প কারখানা থাকলে জমির মূল্য অনেক বেড়ে যাবে।তাই জমির আশেপাশে কি স্থাপনা আছে তা অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়।
জমি থেকে রাস্তা কত দূরে। জমিতে কি ভারী যন্ত্রপাতি সহজেই নেয়া যাবে?
আপনার বিনিয়োগকৃত জমি রাস্তা হতে দূরে হলে যাতায়ার সমস্যা হবে তাই ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে।
সেই সাথে জমিতে ভারি যন্ত্রপাতি নেয়া যায় কিনা সেটাও বিবেচ্য বিষয়। তাই বিনিয়োগের জন্য এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে।
এই জমিতে কি সরকারের কোন পরিকল্পনা আছে?
আপনার বিনিয়োগকৃত জমিতে সরকারের কোন পরিকল্পনা থাকলে আপনি সেখানে স্থায়ী স্থাপনা বানাতে পারবে না। তাই সেখানে বিনিয়োগ করে আপনার লাভবান হবার সম্ভাবনা কম।
জমির মাটির গুনাগুন, ড্রেইনেজ সিস্টেম ইত্যাদি ঠিক আছে কিনা
আপনার বিনিয়োগকৃত জমিতে ড্রেইনেজ সিস্টেম ভালো থাকতে হবে। ভালো ড্রেইনেজ সিস্টেম না থাকলে পরবর্তীতে অন্য কোন ক্রেতা এই জমি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করবে না। তাই বিনিয়োগে লাভবান হবে সম্ভাবনা কমে যাবে।
উক্ত স্থানে গিয়ে দেখতে হবে জমির আশেপাশে কি আছে, এই এলাকা ভবিষ্যতে উন্নত হবে কিনা।
অনেকেই গুগুল ম্যাপ দেখে জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এটা একটু ভুল সিদ্ধান্ত।জমিতে নিজে গিয়ে জমির অবস্থান ভালো ভাবে বুঝতে হবে।
ধারণা করতে হবে যে, এই এলাকা ভবিষ্যতে উন্নত হবে কিনা। এলাকা উন্নত হলে স্বাভাবিকভাবেই জমির দাম বেড়ে যাবে। এবং বিনিয়োগে লাভবান হবে।
জমি কিনতে লোন করলে লোনের সুদের হার কত, কতদিনে শোধ হবে তা দেখে নিতে হবে।
জমি কেনার জন্য অনেকেই লোন করে থাকেন। সেই ঋনের সুদের হার অনেক হলে আপনি জমিতে যে টাকা লাভ করবেন তার চাইতে বেশি টাকা সুদ পরিশোধ করা লাগতে পারে।
তাই সুদের হার বেশি হলে জমিতে বিনিয়োগে লাভবান হওয়া যাবে না।
জমিতে বাড়ি বানানোর জন্য ডেভেলপারকে দিলে লাভবান হওয়া যায় কিনা
জমি কিনে বাড়ি বানানোর জন্য ডেভেলপারকে দিলে ভালো লাভবান হবার সুযোগ আছে। তাই জমি কেনার আগে দেখতে হবে সেই এলাকায় জমি ডেভেলপার নিয়ে কিনা।
ডেভেলপাররা সাধারনত উন্নত এলাকার জমিতে বাড়ি করে থাকে। তাই এলাকা উন্নত হলে জমিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হবার সুযোগ রয়েছে।
জমি উচু করে বিক্রি করলে লাভবান হওয়া যাবে কিনা
অনেক সময় নিচু জমি কম দামে কিনতে পাওয়া যায়। সেখানে উচু করে বিক্রি করলে ক্ষেত্র বিশেষে ভালো লাভবান হওয়া যায়।
তাই বেশি জমি কিনে বিনিয়োগ করা সব সময়ই যে লাভজনক হবে তা নয়। সঠিক জমি কিনতে পারলে, জমি কিনে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়া যায়৷
শুধুমাত্র জমিতে বিনিয়োগ করেই লাভবান হওয়া যাবে এ ধারণা সঠিক নয়। জমিতে বিনিয়োগের আগে উপরোক্ত অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।
আপনার ক্রয়কৃত জমি দিয়ে যদি বানিজ্যিকভাবে লাভবান হবার সম্ভাবনা থাকে তাহলেই আপনার জমিতে বিনিয়োগ লাভজনক হবে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে জমিতে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করলাম। ভবিষ্যতে এ বিষয় নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
তাই আমাদের সাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন। সেই সাথে আমাদের লেখা নিয়ে আপনার মন্তব্য আমাদের ফেসবুক পেজে জানান।