জাতীয় ঐতিহ্য নগর উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি যোজনা বা হৃদয় যোজনা (Heritage City Development and Augmentation Yojana – HRIDAY) জাতীয় ঐতিহ্য নগর উন্নয়ন ও উদ্বোধন যোজনা নামক এইচডিআরআই প্রকল্পটি গৃহায়ণ ও নগর বিষয়ক মন্ত্রণালয় কতৃক দ্বারা চালু করা হয় যা দেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও পুনরজ্জীবিত করার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
হৃদয় প্রকল্পের লক্ষ্য ঐতিহ্য সংরক্ষণ, নগর পরিকল্পনা এবং ঐতিহ্যবাহী শহরগুলির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করা। ঐতিহ্যবাহী শহরগুলিতে পর্যটক বৃদ্ধি, পরিবেশগত সুরক্ষা, জীবিকা, পরিচ্ছন্নতা এবং দ্রুত পরিষেবা সরবরাহের উপর জোর দিয়ে জাতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা এবং ঐতিহ্যবাহী শহরগুলোতে একইসাথে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করা।
দেশের ঐতিহ্যবাহী পুরানো শহরগুলি আধুনিক ও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলাই এই যোজনার মূল উদ্দেশ্য। সুপ্রিয় পাঠক আজ আমরা হৃদয় যোজনা ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। সরকারের স্মার্ট সিটি মিশনের সাথে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যের যথেষ্ট মিল রয়েছে। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
হৃদয় যোজনা ও এর উদ্দেশ্য:-
হৃদয় যোজনা কি?
ঐতিহ্যবাহী শহরগুলির উন্নয়নের জন্য ভারত সরকারের দ্বারা ২১ শে জানুয়ারী ২০১৫ এ হৃদয় যোজনা চালু করা হয়। এই প্রকল্পটি ভারতের ঐতিহ্যবাহী শহরগুলিকে তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য ধরে রাখার জন্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করবে।
এটি ঐতিহ্যবাহী শহরগুলিতে নান্দনিক সাজসজ্জা, দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপন, ও যথাযথ মেরামত ও নতুন প্রয়োজনীয় সংস্করণের জন্য তহবিল যোগান দেয়।
হৃদয় নগর উন্নয়ন প্রকল্প গৃহায়ন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রনালয় দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে এবং এটা অনেকটাই স্মার্ট সিটি মিশনের অনুরুপ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে।
হৃদয় যোজনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শহরগুলোর প্রাচীনত্ব বজায় রেখে সেখানকার সুযোগ-সুবিধা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা। যেমন জল, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক লাইন,গ্যাস,পয়-নিস্কাশন, ফুটপাত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রোড-লাইট, আলোকসজ্জা, গ্যাস, এবং অন্যান্য সুবিধার যেন কমতি না থাকে।
এছাড়াও পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও নাগরিক সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করাও এই যোজনার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে হৃদয় যোজনার চার বছর পূর্তি হয়েছে।
এই যোজনার বাজেট ছিল ৬,৮৫,৭৫৮ কোটি টাকা। প্রাথমিক বরাদ্দ ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ৪২২ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং ১৪০ কোটি টাকার প্রজেক্টের কাজ শেষ হয়েছে।
হৃদয় যোজনার আওতায় তালিকাভুক্ত শহরগুলি হল-আজমির, অমরাবতী, বাদামি, গয়া, মথুরা, পুরী, বারাণসী, ভেলানকানি, ওয়ারঙ্গল, কাঞ্চিপুরম, দ্বারকা এবং অমৃতসর।
হৃদয় যোজনার উদ্দেশ্য
দেশের ঐতিহ্যবাহী পর্যটন শহরগুলির ভগ্নদশা ও অন্যান্য অসুবিধা দূর করে অবকাঠামোগত সুবিধা এবং নাগরিক সুবিধাসমূহের উন্নয়ন ঘটিয়ে শহরগুলির সৌন্দর্যবর্ধন করা। যাতে করে এখানে পর্যটকরা আসতে আগ্রহী হয়।
আর পর্যটকরা যাতে এখানে আসার পর সব রকম সুবিধা যেমন গ্যাস, বিদ্যুৎ, জল, সিকিউরিটি, ইন্টারনেট, হোটেল, ফুটপাথ, মার্কেট, অনলাইন সুবিধা, এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধা পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
পর্যটকরা এসব জায়গাগুলোতে এসে সুবিধা পেলেই তারা বারবার আসতে চাইবে। অনেকের লেখনি এবং ফটোগ্রাফের মাধ্যমে স্থানগুলির সৌন্দর্য ও সুনাম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
এতে করে দেশের স্থাপনা, ঐতিহ্য ও পুরাতন শহরের যেমন সুনাম হবে তেমনি পর্যটক বেশী এলে তা থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব হবে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সাহায্য করবে।
হৃদয় যোজনার সুবিধা
দেশের ঐতিহ্যবাহী অধিক জনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর শ্রী-বৃদ্ধি এবং নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি উদ্দেশ্য এই প্রকল্পটি কাজ করে চলেছে। একটি শহরের নাগরিক সুবিধা আশানুরূপ না হলে সেখানে জনসংখ্যা বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি পায়না।
যেখানে দেশের পুরানো ইতিহাস ও ঐতিহ্যমন্ডিত স্থাপত্য রয়েছে সেখানে যদি পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকে তাহলে সেখানে জনবসতি গড়ে উঠবে না আর পর্যটকও যাবেনা। দেশের বৃহত্তম শহরগুলি কোন দিক দিয়ে পশ্চাদপদ হয়ে থাক তা সরকারের কাম্য নয়।
বিভিন্ন সুবিধা যেমন জলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, লিকেজ মেরামত, পয়-নিস্কাশন ও স্যানিটেশন সুবিধা, ফুটপাত তৈরি, মার্কেট, টেলিকম, হোটেল, বাজার, তথ্য ও সেবা কেন্দ্র, ট্যুরিস্ট গাইড, বইয়ের দোকান, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পের দোকান, বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্প, দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য এবং পুরাতন স্থাপত্যের মেরামত করা হলেই শহরগুলি নতুন প্রাণ ফিরে পাবে।
সেখানে ঐতিহ্য ধারণ করে একই সাথে নাগরিকেরা বসবাস করতে পারবে এবং সেই সাথে তা পর্যটকদের জন্য আরামে ভ্রমণ করার ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবেও মর্যাদা পাবে।
দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ঠিকমত সংরক্ষণ ও মেরামতের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে অনেক স্থান হতেই। এগুলো একবার নষ্ট হয়ে গেলে তার চিহ্ন আবিষ্কার করা অনেকক্ষেত্রেই অসম্ভব।
তাই যা এখনো টিকে আছে তা অবশ্যই গুরুত্ব এর সাথে সংরক্ষন করে বিশ্বের দরবারে আমাদের দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরাই হৃদয় যোজনার সুবিধা।
সেই সাথে বড় বড় শহরগুলির সৌন্দর্য, নাগরিক সেবা, জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক খাতে অবদান রাখার মাত্রা বৃদ্ধি করাও এই প্রকল্পের অন্যতম সুবিধা।
শেষ কথা
গৃহায়ন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রণালয় কতৃক হৃদয় যোজনার কাজ শুরু করা হয় দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও পুনরীজ্জবন করতে। সংরক্ষণের অভাবে আমাদের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে।
অনেক ইতিহাসই রয়ে গেছে অজানা৷ অজানা ইতিহাস জানতে ও তার সংরক্ষণ করতেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ঐতিহ্যের সংরক্ষন করা হলেই সেখানে জনসংখ্যা বা পর্যটক বাড়তে পারবে না।
সেখানে অবশ্যই অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। যে শহরে নাগরিক সুবিধার অভাব সেই শহরে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতে পারেনা এবং সেখানে পর্যটকরাও ভ্রমণের উদ্দেশ্য নিয়ে যায়না।
কারণ সেখানে গিয়ে সবকিছু ঘুরে দেখা এবং থাকার জন্য তাদের পর্যাপ্ত সুবিধা প্রয়োজন। যা একটি উন্নত ও স্মার্ট শহরে থাকা উচিত। আর এই সুবিধাগুলো সংযোজন করে উক্ত শহরগুলির সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখাই এই যোজনার মূল উদ্দেশ্য।
সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের লেখার উদ্দেশ্য থাকে ভারত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং তার অগ্রগতি সম্পর্কে আপনাদের জানানো, যাতে সেগুলো সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পারেন এবং সুবিধাসমূহ উপভোগ করতে পারেন।
কেন্দ্র সরকারের সমস্ত যোজনা | Click Here |
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত প্রকল্প | Click Here |
বাংলাভুমি হোম | Click Here |