সময়ের সাথে সাথে শহরের যান্ত্রিক পরিবেশে যখন চারদিকে পরিবেশ দূষনের হাতছানি, তখনই অনেক বাড়ির ছাদের উপরে তাকালে আমাদের চোখে পড়ে একখন্ড সবুজ বাগান। এই ছাদের উপরের বাগানের আধুনিক নাম ছাদকৃষি। ইট কাঠের শহরে যখন সবাই সবুজকে প্রায় ভুলতে বসেছি, তখন কিছু কিছু মানুষ শখের বশে নিজের বাড়ির ছাদের উপর অল্প বিস্তর করে গড়ে তোলেন ছাদ কৃষি।
ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পায় এই কৃষি। তাই এখন আর শুধু শখের জায়গায় আটকে নেই, এই ছাদ কৃষি বর্তমানে পারিবারিক চাহিদা পূরন ও বিনোদনের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এটি এখন প্রায় সকল বাড়ির ছাদেই নিজের অবস্থান করে নিচ্ছে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে আমরা ইতিপূর্বে জমি, শিক্ষা, অর্থ সহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এতে করে আপনারা এই বিষয়গুলি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে ছাদ কৃষি নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা জানার চেষ্টা করবো এই ছাদ কৃষির বিস্তারিত কিছু তথ্য।
আমরা আলোচনা করবো ছাদ কৃষি করতে কি কি প্রয়োজন হয়, ছাদে বাগান করার পদ্ধতি, ছাদে কি কি গাছ লাগানো যায়, ছাদে বাগান করার জন্য কিছু উপকারী টিপস। আসুন দেখে নিই, ছাদ কৃষির বিস্তারিত।
ছাদের আকার ও অবস্থান
ছাদ কৃষি করার জন্য ছাদের আকার একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আপনার ছাদের আকার ছোট-বড় যে কোন প্রকারই হতে পারে। তবে আপনি বাগান শুরু করার সময়ই ভেবে নিতে হবে আপনার ছাদের সাইজ কত এবং এখানে কি কি গাছ কতগুলি লাগানো যাবে। আপনার ছাদের আলোর প্রাপ্যতা ও একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
আপনার ছাদে রোদের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে আপনি কি গাছ লাগাবেন তা নির্ধারণ করতে হবে। সাধারনত যেখানে সূর্যের আলো বেশি থাকে সেখানেই বাগান করার জন্য বেশি উপযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ছাদে লাগানোর জন্য গাছ নির্বাচন
ছাদের লাগানোর জন্য মাঝারি সাইজের গাছ নির্বাচন করা উচিত। গাছ নির্বাচনের সময় দেখা উচিত এই গাছ কতদিন ফল দেবে। কয়েক বছর ফল দেয় এমন গাছই নির্বাচন করা উচিত। সুস্থ ও দ্রুত ফলন আসে এমন কলমের গাছ নির্বাচন করা উচিত। এতে করে অল্প সময়ের মাঝেই ছাদ বাগানের ফলাফল পাওয়া যাবে।
ছাদে বাগান করার পদ্ধতি
ছাদে বিভিন্ন ভাবে বাগান করা যায়। আপনি কি গাছ লাগাবেন, গাছের সাইজ কত তার উপর নির্ভর করে ঐ গাছে পাত্র, টব নির্ধারণ করতে হবে। নিচে বিভিন্ন প্রকার পাত্রের বর্ণনা করা হলো।
১) টব
২) হাফ ড্রাম
৩) চৌবাচ্চা
৪) স্থায়ী বেড
আসুন দেখে নিই বিভিন্ন পদ্ধতির বর্ণনা
টব
টব ছোট ও সহজে বহনযোগ্য বলে এর জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশি। কিন্তু এটি আকারে ছোট বলে এখানে ফলের গাছ লাগানো কঠিন। টবে সবজি, ফুল ইত্যাদির চাষ করা হয়। বড় আকারের টবে ফল গাছ লাগানো যায়।
টবে গাছ লাগানোর জন্য মাটিতে জৈব সার দিতে হয়। জৈব সারের পাশাপাশি মাটির সাথে টিএসপি মিশিয়ে ১০ দিন রেখে দিতে হয়। তারপর ঐ মাটি টবে নিয়ে গাছ লাগানো হয়।
হাফ ড্রাম
হাফড্রাম পদ্ধতিতে ফলের চাষ করা যায় বলে বর্তমানে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করছে। প্লাস্টিক ড্রাম কেটে ২ টি গাছ লাগানোর উপযোগী করা হয় বলে এটাকে হাফ ড্রাম বলা হয়ে থাকে। ফলের চাষের জন্য যতবড় ড্রাম হবে ততই উত্তম।
তাই চেষ্টা করতে হবে বড় ড্রাম ব্যবহার করতে। পানি নিষ্কাশনের জন্য হাফ ড্রামের নিচে ছিদ্র রাখতে হয় এবং ছিদ্রের উপর কয়েকটি ইটের টুকরো দিয়ে রাখতে হয়। এতে করে বাড়তি পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। মাটি তৈরি করার জন্য জৈব সার, টিএসপি মাটিতে মিশিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
চৌবাচ্চা
ছাদে ৪ টি পিলার দিয়ে সিমেন্টের সাহায্যে চৌবাচ্চা তৈরি করেও চাষ করা যায়। এতে মাছ ও গাছ একই সাথে করা যায়। এখানে মূলত মাছের সাথে সবজি চাষ করা যায়। মাছের বর্জ্য হতে গাছ পুস্টি নেয় বলে গাছের জন্য আলাদা সারের প্রয়োজন হয় না। এখানে মাছ ও উদ্ভিদ দুইটাই একসাথে করা যায় বলে এটি দেখতে অনেক দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকে।
স্থায়ী বেড পদ্ধতি
ছাদের চারপাশে ১.৫ ফুট উচু দেয়াল দিয়ে নিচে ১ ইঞ্চি পুরু ইটের সুরকি দিয়ে তার উপর মাটি দিয়ে বেড তৈরি করাকে স্থায়ী বেড পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। এখানে সবজি সহ মাঝারী সাইজের ফলের গাছ লাগানো যায়।
কি কি গাছের চাষ করা যায়
আসুন দেখে নিই ছাদকৃষিতে কি কি গাছের চাষ করা হয়।
১) আম্রোপালী
২) আম মল্লিকা
৩) আপেল কুল
৪) পেয়ারা
৫) লেবু
৬) পেপে
৭) জলপাই
৮) আমলা
৯) করমচা
১০) কলমের জলপাই
১১) ডালিম
ইত্যাদি গাছে চাষ করা হয়। তবে লক্ষ্য রাখা হয়, গাছের সাইজ যাতে ছোট হয় এবং ছোট গাছেই ফল ধরে এমন গাছ লাগাতে।
ছাদ বাগানের জন্য কিছু জরুরী বিষয়
আসুন দেখে নিই, ছাদ বাগানের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
১) বড় গাছগুলিকে ছোটগাছগুলির পিছনে রাখতে হবে, এতে করে ছোট গাছগুলি সূর্যের আলো পাবে।
২) টবে খৈল দেয়া থেকে বিরত রাখা।
৩) বছরে ১ বার মাটি বদলিয়ে দিতে হবে।
৪) জৈব সার, মিশ্র সার, হাড়ের গুড়া মিশিয়ে দিতে হবে।