নারিকেল একটি অন্যতম অর্থকরী ও সুস্বাদু ফল। এর প্রায় সব কিছুই কাজে লাগে। এর পাতা, কান্ড, ফল, ফলের আবরণ সব কিছু গুরুত্বপূর্ণ। নারিকেল নানা রকম সুস্বাদু খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। কচি অবস্থায় এটি ডাব হিসেবে পরিচিত। ডাব অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। বিভিন্ন রোগে জল শূন্যতা রোধে এটি বিশেষ কার্যকরী।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে নারিকেল চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই নারিকেল চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
চলুন দেখে নিন নারিকেল চাষের বিস্তারিতঃ
জলবায়ু ও মাটিঃ
নারিকেল গাছের জন্য উষ্ণ আবহাওয়া বেশি উপযোগী। নারিকেল চাষের জন্য বৃষ্টিপাত খুব জরুরি। যে কোন ধরনের মাটিতে নারিকেল চাষ করা যায়। মাটি যদি শিলা, কাকড়ময় , বালুময় ও হয় তাতেও নারিকেল চাষে বিশেষ কোনো অসুবিধা নেই।
বংশবিস্তারঃ
বীজ থেকে চারা তৈরি করে নারিকেল এর বংশবিস্তার করা যায়। তবে টিস্যু কালচার করে ও এর বংশবিস্তার করা যায়। সাধারণের মাঝে বীজ থেকে চারা তৈরি করাই সহজ এবং জনপ্রিয়।
চারা উৎপাদন পদ্ধতিঃ
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
বীজ থেকে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে চারা বাছাই এর ক্ষেত্রে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ উন্নত মানের না হলে সেই চারা থেকে যে গাছ হবে আর তাতে যে ফলন হবে তাও নিম্নমানের হবে। তাই যে বীজ থেকে চারা হবে তার মাতৃ গাছের গুনাগুন আগেই জেনে নিতে হবে।
নারিকেল চারা উৎপাদন করা খুবই সহজ তাই ভাল জাতের বীজ সংগ্রহ করে প্রয়োজন মতো চারা তৈরি করে নিতে হবে। নারিকেল বীজ সংগ্রহ করে তাকে বেলে মাটিতে রেখে মাঝে মাঝে জল দিতে হবে তাহলে দেখা যাবে কিছুদিনের মধ্যেই চারা গজাবে। এ গজানো চারা গুলো ৮-৯ মাস পরে লাগানোর উপযোগী হবে।
জমি তৈরি ও চারা রোপণঃ
নারিকেল চারা রোপণ করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে জমি যেন স্যাতস্যাতে না থাকে এবং জমিতে যেন জল জমে না থাকে। তবে যদি নিচু জমিতে চারা রোপণ করতে হয় তাহলে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
সারি করে চারা লাগাতে হবে এবং সারির মাঝখানে ৩ মি চওড়া করে ৩০-৬০ সেমি গভীর নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যেতে পারে। মাটি দুই পাশে উঠিয়ে উচু করে দিতে হবে এবং সেই উচু আইলে চারা রোপণ করতে হবে।
মাদা তৈরিঃ
খাটো জাতের চারার জন্য ৬ মি × ৬ মি দূরত্ব আর একটু খাটো জাতের চারার জন্য ৬ মি ×৭ মি দূরত্বে চারা রোপন করতে হবে। চারা রোপনের আগে নির্ধারিত স্থানে গর্ত তৈরি করে নিতে হবে এবং তাতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপণঃ
চারা রোপণ করার ক্ষেত্রে চারা বাছাই করতে হবে । তারপর চারা বীজতলা থেকে সাবধানে অতি যত্ন সহকারে উঠাতে হবে। চারা উঠানোর পর এক সপ্তাহের মধ্যেই চারা রোপণ করে দিতে হবে। চারা গাছ গর্তে রোপন করার আগে খেয়াল রাখতে হবে জমি থেকে চারা যেন ২০-২৫ সেমি নিচে বসানো হয়।
খেয়াল রাখতে হবে সম্পূর্ণ নারিকেল টা মাটিতে না পুতে এর উপরের কিছু অংশ উপরে রাখতে হবে। বর্ষাকালে যেন বাইরের জল এসে গাছের গোড়ায় না জমতে পারে সেজন্য গাছের গোড়া থেকে ৪০-৫০ সেমি দূরে বৃত্তাকারে বাধ বেধে দিতে হবে। বাধের উচ্চতা ১০-১৫ সেমি উচু করে দিতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
নারিকেল গাছে সার, সেচ যদি ঠিকমত দেওয়া হয় আর যদি জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো থাকে তাহলে গাছ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ গাছে পটাশ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা বেশি থাকে তাই সে অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হয়।
চারা রোপণের তিন মাস পর চারার গোড়া থেকে ২০ সেমি দূরে চওড়া ২০ সেমি এবং গভীরতা ১০ সেমি করে সার প্রয়োগ করতে হবে। পচা গোবর সার ১০ কেজি, ইউরিয়া ১২৫ গ্রাম, টিএসপি দিতে হবে ১০০ গ্রাম এবং এমওপি সার দিতে হবে ২৫০ গ্রাম। সবগুলো সার প্রতি তিন মাস পর আরও দুই বার করে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবার সার প্রয়োগের পর প্রয়োজন মত জল দিয়ে গাছের গোড়া ভালো ভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
পরিচর্যাঃ
সঠিক ভাবে জল নিকাশ ও পরিচর্যা গ্রহণ করলে চারা রোপণ করার তিন থেকে চার বছর পর থেকেই ফুল ফল ধরা শুরু হয়। নারিকেল চারা গাছের গোড়ায় চার পাশে সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। প্রয়োজনে মালচিং দিতে হবে।
এর ফলে গাছের গোড়া ঠান্ডা থাকে, মাটিতে প্রয়োজনীয় রস থাকে । এবং একসময় সেগুলো পচে প্রয়োজনীয় জৈব সারে পরিনত হয়। মালচিং দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন গাছের কান্ড স্পর্শ না করে।
রোগবালাই দমনঃ
নারিকেল গাছের মধ্যে কুড়ি পচা, ফল পচা, ফল ঝরা, পাতায় দাগ পড়া ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে। এসব রোগ দমনে প্রতি লিটার জলে ম্যানকোজেব ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। দুই সপ্তাহ পর পর দুই থেকে তিন বার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ফলনঃ
দেশি জাতের নারিকেল গাছ থেকে প্রতি বছরে ৬০-৭০ টি নারিকেল পাওয়া যায়। আর যদি উন্নত জাত চাষ করা হয়ে থাকে তাহলে সে গাছ থেকে প্রায় ৩০০ টি পর্যন্ত নারিকেল পাওয়া সম্ভব হয়। তাই নারিকেল চাষ অত্যন্ত লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।