হোলিকা দহন 2023 (Holika Dahan 2023 Date Time and Significance) 2023 হোলিকা দহনের ইতিহাস এবং জানুন হোলিকা দহন কেন পালন করা হয়? হোলিকা দহনের তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য হোলিকা দহনের গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
প্রতিটি ঋতুতে কোনো না কোনো উৎসব পালন করা হয় হিন্দু ধর্ম মতে। এমনকি একটা ঋতুতে অনেক উৎসব পালন করাও হয়ে থাকে অর্থাৎ বলা যেতে পারে এমনই একটি উৎসব হলিকা দহন যা দোল পূর্ণিমার বা হোলির আগে পালন করা হয়।
রাক্ষস রাজা হিরণ্যশিপুর বোন হোলিকা এর নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে এই উৎসবের। তার সাথে সাথে পরে যে হোলি উৎসব পালন করা হয়, সেটা হল অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটিয়ে শুভ শক্তির জয়ের প্রতি হিসেবে।
হোলির আগে হোলিকা দহন বা ন্যাড়া পোড়ানো হয় যার পিছনে রয়েছে এই ইতিহাস, তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেই ইতিহাস সম্পর্কে:
হোলিকা দহনের ইতিহাস 2023:
একদিন পরেই দোলযাত্রা অর্থাৎ দোলযাত্রার আগের দিন পালন করা হয় হোলিকা দহন। বাংলায় যাকে চলতি ভাষায় বলা হয় ন্যাড়াপোড়া। এই দিনটিতে ভক্তরা নরসিংহের পূজা করেন এবং কয়েকটি পবিত্র স্তুতি বন্দনার মাধ্যমে প্রহ্লাদের মাহাত্ম্য স্মরণ করা হয়।
2023 হোলিকা দহন শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস
এক্ষেত্রে একটা চলতি প্রবাদ সকলের মুখে মুখে ঘোরে, “আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল আমাদের দোল, পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বল রে হরিবোল।” দোলের আগের দিন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হয় হলিকা দহনের উৎসব, এই অনুসারে বলা হয় যে, এই দিনটি রাক্ষস রাজার বোন হোলিকাকে দহনের প্রতি যার অর্থ হলো অশুভর বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির আগমন ঘটানো। দোলযাত্রার আগের দিন সন্ধ্যায় পূর্ণিমা তিথি চলাকালীন এই হোলিকা দহনের উৎসব উদযাপন করা হয় বিভিন্ন জায়গায়।
সত্য যুগের দৈত্য রাজ হিরণ্যকশিপু খুবই অত্যাচারী হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ব্রহ্মার তপস্যা করে ভয়ানক এই শক্তি লাভ করেছিলেন। যার ফলে তার অন্যায় অত্যাচারের মাত্রা সীমা অতিক্রম করতে শুরু করেছিল। সেই সময় কালে জন্ম নিয়েছিলেন তার পুত্র সন্তান প্রহ্লাদ।
বিষ্ণু বিদ্বেষী হিরণ্যকশিপুর পুত্র যে কিনা বিষ্ণুর উপাসক ! এই কথা কিছুতেই সহ্য করতে না পেরে রাক্ষস রাজা হিরন্যকশিপু প্রহ্লাদকে হত্যা করার চেষ্টা করেন। নাগ কক্ষে ছেলেকে বন্দী করে রাখলেন, কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদে সে সমস্ত নাগেরা একটা পালঙ্ক তৈরি করে প্রহ্লাদকে রক্ষা করতে থাকে। ফলে হিরণ্যকশিপুর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
অবশেষে উপায় না পেয়ে রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপু ডেকে পাঠালেন তার বোন হোলিকাকে। প্রজাপতি ব্রহ্মা হোলিকাকে একটি বিশেষ চাদর দিয়েছিলেন আর বলা হয়েছিল যে সেই চাদর হোলিকাকে রক্ষা করবে অর্থাৎ রক্ষাকবচ হিসাবে সেই চাদর ব্রহ্মা হোলিকাকে দিয়েছিলেন।
কথা অনুযায়ী হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে সেই চাদর গায়ে দিয়ে অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দেন এবং ভগবান বিষ্ণুর উপাসক প্রহ্লাদ এর গায়ে একটিও আঁচর লাগলো না, উল্টে পুড়ে মারা গেলেন হোলিকা। অবশেষে শ্রীকৃষ্ণ নরসিংহ অবতার রূপ ধারণ করে হিরণ্যকশিপুর হত্যা করেছিলেন।
হোলিকা দহন অর্থাৎ ন্যাড়া পোড়ার তাৎপর্য:
হোলিকার এই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় আসলে বাংলায় ন্যাড়াপোড়া নামে পরিচিত। আবার হোলিকা দহন ও বলা যেতে পারে। এর এক কথায় অর্থ হল অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তিকে আহ্বান জানানো।
তবে এই ন্যাড়া পোড়া পালনের কিছু বিশেষ পদ্ধতি আছে। গাছের শুকিয়ে যাওয়া ডালপালা দিয়ে বুড়ির বাড়ি তৈরি করে তাতে আগুন দেওয়া হয়। দোলের আগে এই ন্যাড়া পোড়া উৎসব পালন করা হয়। ফাল্গুনী শুক্ল পক্ষের চতুর্দশতম দিন যেটা দোলযাত্রা হিসাবে পরিচিত।
পুরাণ অনুসারে এই বিশেষ দিনেই ভগবান বিষ্ণু, হোলিকা দহনের মাধ্যমে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছিলেন। আর সেই দিনটি স্মরণ করে আগাছা, জঞ্জাল, পুরনো গাছ পালার শুকিয়ে যাওয়া ডালপালা এগুলি এক জায়গায় করে সেখানে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে চারিদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার সাথে সাথে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটানো হয় বলে মনে করা হয়।
পরের দিন ফাল্গুনী পূর্ণিমা তে হোলিকার মৃত্যুতে খুশি মানুষের মধ্যে যেন রংয়ের খুশি ছড়িয়ে দিয়েছিল। সেই কারণে হোলির দিন বিভিন্ন রকমের রং দিয়ে খেলার মধ্যে দিয়ে এই খুশির উৎসব পালন করা হয়। যেখানে অশুভ শক্তি হোলিকা আগুনে পুড়ে মরে যাওয়ার এই ঘটনা সবাইকে ভীষণ আনন্দিত করেছিল।
চারিদিকে গাছপালার শুকনো ডালপালা দিয়ে যেমন জড়ো করে লতাপাতা শুকনো জঞ্জাল সবকিছু এক জায়গায় করে সেখানে আগুন দিয়ে যেমন ন্যাড়া পোড়ানো হয়, তেমনি আমাদের পরিবেশ অনেক খানি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। তার পাশাপাশি তিথি, নক্ষত্র ও রীতি অনুসারে এই হোলিকা দহন সমস্ত অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে দিয়ে তার বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তিকে স্বাগত জানানো হয়।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন সমস্ত কিছু ভালো বিষয় প্রয়োজন পড়ে, আর খারাপ জিনিস গুলোকে বর্জন করতে হয়, তেমনি এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন থেকে অনেক কালিমা, বঞ্চনা, অশুভ চিন্তা ভাবনা সবকিছু দূরে সরিয়ে দিয়ে সবার ভালো করার উদ্দেশ্যে নিজেদেরকে নিয়োজিত করার প্রেরণা পাওয়া যায় বলে অনেকেই মনে করেন।
এই উৎসবের পিছনে যাই ইতিহাস থাকুক না কেন এই দিনটিতে বিশেষ করে বাচ্চারা সমস্ত গাছের ডাল পালা, লতাপাতা এগুলি জোগাড় করে বুড়ির বাড়ি তৈরি করতে ভীষণ আনন্দ অনুভব করে। সব মিলিয়ে এই উৎসব সাধারণ মানুষের জীবনে অনেকটাই আনন্দ বহন করে আনে। পরের দিন হোলি উৎসব যেখানে আবির বিভিন্ন রকমের রং দিয়ে খেলায় মত্ত হয়ে ওঠেন দেশবাসী।