প্রতিদিন ডিম খেলে এই রোগগুলি থেকে বেঁচে থাকবেন | Health Benefits of Eggs

খাবারে ভেজাল, রাসায়নিক পদার্থ তে ভরপুর খাদ্যদ্রব্য প্রতিনিয়ত অল্প অল্প খাওয়ার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সুস্থ সবল মানুষের সংখ্যা খুবই কম। বিভিন্ন রকম পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে ডিম হলো একটি অন্যতম পুষ্টিকর খাবারের উপাদান।

ডিম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তবে অনেকেই প্রতিদিন ডিম খেতে ভয় পান, যদি ওজনটা তরতরিয়ে বেড়ে যায়! কিংবা হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে, এই চিন্তা ভাবনা করে ডিমের থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন।

তবে পুষ্টিবিদদের মত অনুসারে সকালের খাবারের একটি করে ডিম খাওয়া শারীরিক বিভিন্ন রোগের সমাধান করতে পারে। তবে এটি কিন্তু নির্ভর করবে কে কিভাবে ডিম খাচ্ছেন।

অনেকেই মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়েতে ডিমের কুসুম ফেলে দিয়ে সাদা অংশটা খান। পুষ্টিবিদদের মতে দিনে একটি নয়, অন্তত দুটি ডিম কুসুম সমেত খেতে পারবেন।

Health Benefits of Eggs
Health Benefits of Eggs

আর যদি এর চেয়েও বেশি ডিম খেতে চান তাহলে সাদা অংশ খেতে পারেন। তবে হিসেবটা কি দাঁড়ালো, প্রতিদিন দুটো ডিম আপনি কুসুম এবং সাদা অংশ দুটোই একসাথে খেতে পারবেন, তাতে কোন সমস্যা নেই।

তবে জানেন কি, ডিম যত বেশি ভাজা হয় এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই ডিমের পোচ বা হাফ বয়েল খান।

চলুন জানা যাক ডিমের পুষ্টি উপাদান:-

ডিম খেতে সকলেই কম বেশি পছন্দ করেন। একটি ডিমে এনার্জি থাকে ১৪৩ ক্যালোরি আর কার্বোহাইড্রেট থাকে ০.৭২ গ্রাম মত, আবার প্রোটিন থাকে ১২.৫৬ গ্রাম, ফ্যাট থাকে ৯.৫১ গ্রাম, এছাড়াও ফসফরাস থাকে ১৯৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম থাকে ১৩৮ মিলিগ্রাম, আবার জিংকও থাকে ১.২৯ মিলিগ্রাম।

তাহলে বুঝতেই পারছেন, মাত্র একটি ডিমে এতগুলি উপাদান আপনি পেয়ে যাবেন। যা শরীরের পক্ষে বিশেষভাবে জরুরি।

ডিমে থাকা অন্যান্য প্রোটিন ভিটামিন:

ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রোটিন ও কুসুমে থাকে ভালো ফ্যাট, আয়রনভিটামিন। অন্যদিকে দেখলে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধিি, হাড় শক্ত করতে ও মেধাবী করে গড়ে তুলতে, ডিম খুবই কার্যকরী। ডিমে আছে ভিটামিন A, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে আর ডিমের কুসুমে থাকা ভিটামিন D  হাড় এর জন্য ভালো।

বিভিন্ন রকম গবেষণায় দেখা গিয়েছে অপুষ্টি, রক্তাল্পতা ও ডায়াবেটিসের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে প্রতিদিন অন্তত পক্ষে একটি করে ডিম খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যের কথা বিবেচনা করে বিজ্ঞানীরা মুরগির ডিম রাখার কথা বলছেন।

প্রতিদিন ডিম খাওয়ার ফলে সারবে যেসব রোগ:

#১) ক্লান্তি দূর করে:

ডিম খাওয়ার সাথে সাথেই শরীরে দ্রুত এনার্জি আসে। ডিমে থাকা ভিটামিন থেকেই মূলত এই এনার্জি বা শক্তি আমরা পেয়ে থাকি। এতে থাকা ভিটামিন B খাদ্যকে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করে। তাই প্রতিদিন সকালে একটি সেদ্ধ ডিম খেলে সারাদিন ক্লান্তি হীন থাকতে পারবেন আপনি।

#২) দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে:

ডিমে থাকে ভিটামিন A যা দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। তাছাড়া ডিমে থকা ক্যারোটিনয়েড আর লুটেন বয়স হয়ে গেলেও চোখের এক বড় সমস্যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে রাখে।

#৩) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:

ডিমে থাকা ভিটামিন E আমাদের শরীরের কোষ এবং ত্বকে থাকা ফ্রি রেডিকেল ধ্বংস করে। আর সেই কারণেই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও নতুন কোষ তৈরি হতে সাহায্য করে থাকে। নিয়মিত ডিম খেলে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

#৪) পেশী মজবুত করে:

প্রায়ই শোনা যায় অনেকে পেশির ব্যথায় ভোগেন। ডিমে থাকা ভিটামিন পেশি কে মজবুত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম করেন যারা তাদেরকে বিশেষজ্ঞরা ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন।

#৫) নারী স্বাস্থ্য:

মেয়েদের শরীর সুস্থ-সবল ভাবে  রাখার জন্য প্রতিনিয়ত ডিম খাওয়া প্রয়োজন। নারী স্বাস্থ্যের উন্নতি তে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ প্রোটিন দরকার হয়। যা ডিম থেকেই পাওয়া যায়। একটি ডিমে থাকে ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন।

#৬) হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়:

এই বিষয়ে একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, ডিম খেলে হার্টে রক্ত জমাট বাঁধে না। তাই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে ডিম খাওয়া জরুুরী। তার পাশাপাশি সারা শরীরেই রক্ত চলাচল সচল রাখে।

#৭) কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে:

ওজন বৃদ্ধি হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই এটা হয়তো ভুল ধারণা করে বসে থাকতে পারেন যে, ডিম খেলে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাবে এবং কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। যা একদমই ভুল ধারণা।

বরং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ডিমে থাকা ওমেগা-থ্রি এই কাজটি করতে সাহায্য করে। আবার ডিম এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত।

#৮) লিভার ও স্নায়ু ভালো রাখে:

কোলাইনের ঘাটতি হলে লিভারের নানারকম সমস্যা বা নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার হয়। ডিম এ থাকা প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ মাইক্রোগ্রাম কোলাইন লিভার ও স্নায়ুকে ভালো রাখে।

#৯) নখ ভালো রাখে:

নখ ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। নখ মজবুত করে সালফার। আর ডিম হলো এই সালফারের প্রধান উৎস। নখ সুুন্দর, সাদা ধবধবে রাখতেও সাহায্য করে সালফার। তাই নিশ্চিন্তে ডিম খান।

#১০) রক্তাল্পতা অথবা অ্যানিমিয়া দূর করে:

শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকলে অ্যানিমিয়া হয় না। আর ডিমে থাকে আয়রন, তাই নিয়মিত ডিম খেলে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দেখা দেবে না।

#১১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিম দুর্দান্ত কার্যকরী। ঘন ঘন সর্দি, কাশি, অথবা জ্বরে ভুগতে না চাইলে রোজ কিন্তু ডিম খাওয়া প্রয়োজন। ডিমে থাকা জিংক ইমুনিটি সিস্টেমকে অনেকটাই শক্তিশালী করে।

#১২) হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখে:

হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে ডিম। হাড় মজবুত করে ফসফরাস, এই উপাদানটি আবার দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে ডিম খান প্রতিদিন।

“সানডে হো ইয়া মনডে, রোজ খাও আন্ডে।” অথবা “প্রতিদিন ডিম খাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই।”

ডিমের গুরুত্ব বিবেচনা করে হাজার ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক কমিশনের কনফারেন্সে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার ডিম দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ থেকেই বুঝতে পারছেন যে ডিমের কদর কতখানি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top