হনুমান জয়ন্তী 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Hanuman Jayanti 2024: History and Significance

হনুমান জয়ন্তী 2024 (Hanuman Jayanti 2024 Date Time and Significance) 2024 হনুমান জয়ন্তীর ইতিহাস এবং জানুন হনুমান জয়ন্তী কেন পালন করা হয়? হনুমান জয়ন্তীর তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য হনুমান জয়ন্তীর গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উৎসবের শেষ নেই। একটা উৎসবের আমেজ কাটতে না কাটতেই আরেকটি উৎসবের আগমন ঘটে। তাছাড়া দেব-দেবীদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভগবান হলেন ভগবান হনুমান, আর এই হনুমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর হনুমান জয়ন্তী পালন করা হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

আমরা সকলেই জানি যে, হনুমান হলেন রামচন্দ্রের সবথেকে কাছের একজন, রামায়ণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। যাকে ভগবান শিবের একাদশ তম অবতার বলে মনে করা হয় তিনি হলেন হনুমান। চৈত্র মাসে বলতে গেলে হনুমান জয়ন্তী উৎসব পালন করা হয়।

হনুমান জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য - Hanuman Jayanti History and Significance
হনুমান জয়ন্তী 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Hanuman Jayanti 2024 History and Significance

রামায়ণে রামচন্দ্রের সাথে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য ভগবান হনুমান কতটা দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন সেটা আমাদের সকলেরই জানা। তবে এই হনুমান জয়ন্তী পালন করার মধ্যে দিয়ে পূজা, উপবাস এবং বজরংবলীর আশীর্বাদ লাভ করা যায় এবং বিভিন্ন রকম সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

রাম নবমী ইতিহাস ও তাৎপর্য

হনুমান জয়ন্তীর ইতিহাস 2024: 

হনুমান জয়ন্তীর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ অনুসারে কেশরী নামে একজন অসুর ছিলেন, সেই অসুরের কন্যার নাম ছিল অঞ্জনা এবং সেই অঞ্জনা খুবই সুন্দরী ছিলেন এবং বানর রাজাকে বিবাহ করেছিলেন। সেই বানর প্রধানের নামও ছিল কেশরী। পৌরাণিক মতে ভগবান হনুমান হলেন মাতা অঞ্জনা ও কেশরীর পুত্র। তবে আমরা তাকে বায়ু দেবতার পুত্র বা বায়ু দেবতা হিসেবেও জানি। আবার পবন পুত্র হনুমান নামেও চিনি।

এটা বিশ্বাস করা হয় যে, সপ্তাহের মঙ্গলায়ানে সূর্যোদয়ের ঠিক পরেই চৈত্র পূর্ণিমার সময় ভগবান হনুমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হনুমান রামচন্দ্র এবং সীতার একজন প্রবল ভক্ত। সেটা আমরা হনুমানের বুক চিরে বুকের মধ্যে রাম ও সীতার ছবি এমন অনেক জায়গায় দেখতে পাই।

এর মধ্যে দিয়ে বোঝা যায় যে, হনুমান কতটা রামভক্ত ছিলেন। কাহিনী অনুসারে হনুমান দেখতে বানরের মতো, লাল রঙের মূর্তিতে এই হনুমানের পেছনে রয়েছে খুবই বড় আকারের একটি লেজ এবং বাম হাতে রয়েছে বিশাল আকৃতির গদা।

সীতা নবমী ইতিহাস ও তাৎপর্য

হনুমানের বিভিন্ন নাম: 

রামচন্দ্রের সাথে অঙ্গঅঙ্গি ভাবে জড়িত এই হনুমানের নাম জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভগবান হনুমান অনেক নামে পরিচিত। যেমন ভানার ঈশ্বর, পবনসুতা, বজরংবলী, বলিবীমা, মহাবীর, অঞ্জনিসুত, অঞ্জনেয়া, মারুতি, সংকট মোচন, রুদ্র।

রামচন্দ্রের পরম ভক্ত ছিলেন এবং তিনি তার জীবন রামের সেবায় উৎসর্গ করে গিয়েছেন। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে হনুমান কখনো বিয়ে করেননি। তবে অনেক জায়গায় তার স্ত্রীর কথা উল্লেখ আছে।

হনুমান পূজার বিধি 2024: 

হনুমান জয়ন্তীর দিন একেবারে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি স্নান সেরে নতুন পরিষ্কার কাপড় পড়তে হবে। তারপর যদি কোন ভক্ত উপবাস রাখতে পারেন তাহলে রাখবেন, যদি না পারেন তাহলে কোন অসুবিধা নেই। এবং লাল কাপড় নিবেদন করে ভগবান হনুমানের পূজা করা হয়।

প্রসাদ হিসেবে তার প্রিয় মিষ্টি হল ব্যাসনের লাড্ডু এবং মতিচুরের লাড্ডু। যেগুলি নিবেদন করে আপনি হনুমানের পূজা করতে পারেন। তার সাথে সাথে হনুমান চালিশা পড়া এবং আরতি করা এগুলো তো রয়েছেই।

দুই ধরনের লাড্ডু ছাড়াও হালুয়া ও কলা হনুমানের প্রিয় খাবার হিসেবে আমরা সবাই জানি। তাছাড়া গঙ্গাজল, ফল, ফুল ও পুজোর ব্যবহৃত আরো অন্যান্য পবিত্র জিনিস দিয়ে ভগবান হনুমানের উপাসনা করা হয়।

চৈত্র নবরাত্রি ইতিহাস ও তাৎপর্য

হনুমান জয়ন্তীর তাৎপর্য 2024: 

যে কোনো উপবাস যে কোনো উৎসব কোনো না কোনো তাৎপর্য বহন করে। তেমনি এই হনুমান জয়ন্তীর দিনে পুজো ও উপবাস করলে বজরংবলীর আশীর্বাদ লাভ করা যায় এবং সমস্ত সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে ধারণা করা হয়।

বজরংবলির পূজা করলে মানুষের শারীরিক এবং আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব হয় সেটা অনেকেই মনে করেন এবং এই ভেবেই হনুমান জয়ন্তী পালনের মধ্যে দিয়ে অনেকেই তাদের মনের ইচ্ছা ভগবান হনুমানের কাছে জানিয়ে থাকেন।

এমনকি সমস্ত স্বপ্ন পূরণ করার উদ্দেশ্যে সংকট মোচন করার জন্য হনুমান জয়ন্তীতে অনেকেই নিষ্ঠা ভরে পূজা, উপবাস, ব্রত, হনুমান চল্লিশা পাঠ এই সবকিছু করে থাকেন।

বানর রাজ কেশরী ও অঞ্জনার পুত্র যেহেতু হনুমান তাই হিন্দু পুরান মতে হনুমানের মাতা অঞ্জনার তপস্যায় মহাদেব সন্তুষ্ট হয়ে বর দিয়েছিলেন, হনুমানের রূপ ধরে তিনিই জন্মগ্রহণ করবেন তার গর্ভে। আর সেই কারণে হনুমানকে শিবের অবতারও বলা হয়। আবার কেউ কেউ তাকে পবন পুত্র নামেও চেনেন।

হনুমানের ভক্তরা এই দিনটিতে কঠোর উপবাস ও ধ্যান করে থাকেন, তার জন্য বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয় প্রায় ঘরেই। হনুমান চল্লিশা জপ করার মানে হল বিশ্বাস অনুযায়ী এটা ইতিবাচক শক্তি দিয়ে সমস্ত রকম সংকটকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। এবং যারা ব্রহ্মচারী, কুস্তিগীর, এবং যারা ব্যায়াম করেন তাদের জন্য হনুমান জয়ন্তী একটি বিশেষ পূজা ও উৎসব।

কেননা পবন পুত্র হনুমানকে মহাশক্তির উৎস হিসেবে মনে করা হয়। তাছাড়া হনুমানকে শক্তি, সংকল্প, ইচ্ছা শক্তি এবং ক্ষমতার ঈশ্বর হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। আর সেই কারণে হনুমানের আশীর্বাদ প্রার্থনা করার জন্য পবিত্র আরতিও করা হয়।

গৃহ প্রাঙ্গণে লাল অথবা কমলা রঙের পতাকা স্থাপন করা হয়। যেটা হনুমানের গায়ের রং এর সাথে মেলে এবং শক্তির প্রতিক হিসেবে মনে করা হয়। শুধুমাত্র লেজের আগুন দিয়ে সমগ্র লংকাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়ার ক্ষমতা রেখেছিলেন হনুমান, আর সেই কারণে হনুমান জয়ন্তীতে এমনই অপার শক্তির উৎস কে পুজো করার মধ্যে দিয়ে শক্তি অর্জন করা যায় বলে মনে করা হয়।

যে সমস্ত মন্দিরে হনুমান জয়ন্তী বিশেষ ভাবে পালন করা হয় সেই সব স্থানীয় জায়গাতে মেলা, অনুষ্ঠান এবং পূজা পার্বণ খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয়ে আসছে অনেকদিন আগে থেকে। রামচন্দ্রের সাথে বিশেষভাবে জড়িত এবং সিতাকে রক্ষা করার জন্য, উদ্ধার করার জন্য যে পরিমাণে আত্মত্যাগ করেছেন হনুমান, তাতে তার প্রভু ভক্তি সবাইকে মুগ্ধ করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top