ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, মহারাষ্ট্র – Grishneshwar Jyotirlinga Temple

ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির (Grishneshwar Jyotirlinga Temple): আমাদের ভারতবর্ষে হল বিভিন্ন দেব-দেবীদের পবিত্র স্থল। এখানে বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির এর পাশাপাশি মহাদেবের মন্দির বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া ১২ টি পবিত্র জ্যোতিরলিঙ্গ মন্দিরের মধ্যে ঘৃষ্ণেশ্বর মন্দির খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বশেষ জ্যোতির্লিঙ্গ বলে মনে করা হয়।

শিব পুরাণ গ্রন্থে উল্লেখিত রয়েছে যে ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের মধ্যে এই ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতিরলিঙ্গ মন্দির খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের দৌলতাবাদ থেকে ১১ কিলোমিটার ও আওরঙ্গবাদ থেকে ৩০  কিলোমিটার দূরে বেরুল গ্রামে এই জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরটি ইলোরা গুহার কাছে অবস্থিত।

ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, মহারাষ্ট্র - Grishneshwar Jyotirlinga Temple
ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির, মহারাষ্ট্র – Grishneshwar Jyotirlinga Temple

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে কথিত আছে যে, বেরুলের শিব ভক্ত উপজাতি প্রধান ঘৃষ্ণেশ্বরের সন্ধান পায়, এখানে গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছিলেন সেই টাকায় তারা মন্দিরটি সংস্কার করে এবং শিখর সিংহলপুরে একটি হ্রদ প্রতিষ্ঠা করেন। গৌতমি বাল ও অহল্যা বাই হোলকার ঘৃষ্ণেশ্বর মন্দির সংস্কার করেছিলেন। মন্দিরের উপরে লাল পাথরে দশ অবতারের মূর্তি খোদাই করা রয়েছে।

দরবার কক্ষটিতে ২৪ টি স্তম্ভ আছে। এই স্তম্ভ গুলিতেও সুন্দর সুন্দর চিত্র খোদাই করা আছে। দরবারের হল ঘরে নন্দিকেশ্বরের মূর্তিও আছে। মন্দিরের আধ কিলোমিটারের মধ্যেই ইলোরা গুহা অবস্থিত। মন্দিরের সুন্দর প্রাচীর ও নির্মিত করা হয়েছিল।

মন্দিরের গায়ে অলংকারনে প্রাগৈতিহাসিক মন্দির তথা স্থাপত্য শৈলের মিশ্রণ দেখা যায়। মন্দিরের রক্ষিত শিলা লিপিটি এখানকার পর্যটকদের কাছে একটি বিশেষ আকর্ষণ বলা যায়। মন্দিরটি তে লাল পাথরে সাথে কাজ করে তৈরি করা হয়েছে। এই মন্দিরে পাঁচটি চূড়া দেখা যায়। বর্তমান মন্দিরটি অষ্টাদশ শতাব্দী তে নির্মিত। এর গায়ে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ও খোদাই করা আছে।  

ঘৃষ্ণেশ্বর মন্দিরের পৌরাণিক ইতিহাস ও কাহিনী:

প্রতিটি মন্দিরের পেছনে রহস্য থাকার পাশাপাশি এই ঘৃষ্ণেশ্বর মন্দিরের পেছনেও রয়েছে এক ইতিহাস ও কাহিনী যা শুনলে অনেকের মনে ভক্তি শ্রদ্ধা আরও দ্বিগুণ পরিমনে বেড়ে যায়। শিব পুরাণ অনুসারে দক্ষিণ ভারতের দেবী পর্বতে ব্রহ্মবেত্তা সুধর্ম নামে এক ব্রাহ্মণ এবং তার স্ত্রী সুহেদা বাস করতেন। সেই ব্রাহ্মণ দম্পতির কোন সন্তান ছিল না বলে সুহেদার মনে খুবই দুঃখ ছিল।

সন্তান লাভের সব রকম চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর সুবেদা তখন ঘুষ্মার সঙ্গে তার স্বামীর বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ঘুষ্মা ছিল সুহেদার বোন। বোনের উপদেশ অনুসারে ঘুষমা ১০১ টি শিবলিঙ্গ নির্মাণ করে পুজো করেন এবং সেগুলিকে কাছাকাছি হ্রদে এক এক করে বিসর্জন দিয়ে দেয়। শিবের আশীর্বাদে ঘুশমার একটি সন্তান হয়।

এর ফলে সে আরো বেশি অহংকারী হয়ে ওঠে এবং সুহেদা তার বোনের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। হিংসার ফলে সুহেদা একদিন ঘুষমার  ছেলেকে খুন করে সেই হ্রদে ফেলে দেয়। যেখানে শিবলিঙ্গ বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল। সুহেদা ও ওঠে প্রতিদিনের মতো কাজ শুরু করে দেয়। বিছানায় রক্তের দাগ দেখে ঘুশমা কোনরকম চিন্তা করে না।

সে বলে, “যিনি আমাকে পুত্র দান করেছেন তিনিই আমার পুত্রকে রক্ষা করবেন।” এই বলে সে শিবের নাম জপ করতে থাকে। তারপর শিবলিঙ্গ বিসর্জন দিতে গিয়ে ঘুশ্মা দেখে তার পুত্র আসছে। এই ঘটনাতে ঘুষ্মা আনন্দিত অথবা দুঃখিত কোনটাই হয় নি। ঘুষ্মা তখন জানতে পারে যে, তার নিজের বোন তার পুত্রকে হত্যা করেছে।

এইসব কথা শুনে ঘুষ্মা শিবের কাছে প্রার্থনা করে যে, সুহেদা কে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য। শিব তাতে সম্মত হন এবং ঘুশমাকে আরেকটি বর চাইতে বলেন। তখন ঘুশমা বলে যে, “আপনি যদি অনন্ত কালের জন্য এখানে জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে অবস্থান করেন। তাহলে আমি খুশি হব।”

আর সেখানেই ঘুষমার অনুরোধের শিব আজও জ্যোতিরলিঙ্গ রূপে অবস্থান করেন এবং ঘুশমার নাম অনুসারে এই লিঙ্গের নাম ঘুষমেশ্বর অথবা ঘৃষ্ণেশ্বর। আর যে হ্রদে ঘুষমা শিবলিঙ্গ বিসর্জন দিতেন সেই হ্রদের নাম হয় শিবালয়।

অন্যান্য জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের মতো এখানে শিবরাত্রি উপলক্ষে খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে মহাশিবরাত্রি উৎসব পালন করা হয়। তাছাড়া শ্রাবণ মাস ভর এখানে শিবের উপাসনা করা হয়। স্থানীয় মানুষজন মন্দির টিকে বিশেষ ভাবে তত্ত্বাবধানে রেখে দিয়েছেন। তাছাড়া বহু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তগণ দের আনাগোনা লেগেই রয়েছে সারা বছর তাছাড়া পর্যটকদের ভিড় এখানে নেহাত কম নয়।

সবদিক থেকে দেখতে গেলে ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের মধ্যে সর্বশেষ এই জ্যোতিরিঙ্গ মন্দির অর্থাৎ ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরটি খুবই জনপ্রিয়। এখানকার মন্দিরের বাতাবরণ থেকে শুরু করে আশেপাশের পরিবেশ যে কোন মানুষকে মুগ্ধ করে তুলবে। তাছাড়া চারিপাশে একটা অলৌকিক শক্তির আভাস পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়।

সমস্ত পৌরাণীর কাহিনী অনুসারে একটা কথা পরিষ্কার যে দেবাদিদেব মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে পারলে তিনি ভক্তের মন কামনা পূর্ণ করে থাকেন। তার সাথে সাথে শিবের কাছে যা চাওয়া হয় সেটা খুবই অল্প দিনের মধ্যেই পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস। সেই কারণে শিবের উপাসক রা বিভিন্ন শিব মন্দিরের পাশাপাশি এমন পবিত্র জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরে পূজা দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন, যা কিনা একটি পূণ্যের কাজ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top