আমরা নিজেদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গের প্রতি যতটা যত্নশীল, পায়ের যত্নে ঠিক ততটাই উদাসীন। পায়ে সবসময় আমরা হাত দিতে চাইনা, পায়ের দিকে কারো অতটা নজর যাবেনা বলেই মনে করে থাকি। আসলে এটা মোটেও ঠিক নয়।
শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় পা ধুলাবালির সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে, এবং সহজেই ময়লা জমে যায়। পায়ের নখের চারপাশে ময়লা জমে যায়, পায়ের গোড়ালি ফাটা, নখ ভেঙে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। এখনকার সময়ে একটি আলোচিত সমস্যা হচ্ছে মুখ ও হাত ফর্সা ও সুন্দর কিন্তু পা কালো এবং অসুন্দর হওয়া। মেয়েদেরকে এটা নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়।
কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে চাইলেই কিন্তু পায়ের যত্ন নেওয়া যায়, আর যত্ন নিলেই পা সুন্দর দেখাবে। তবে অনেকদিন যত্ন না নেওয়ার ফলে, এবং অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক হলে পায়ের রং ফিরতে হয়ত কিছু বেশী সময় লাগতে পারে। কিন্তু কোনকিছুতেই অবহেলা করা যাবেনা। পা ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতই সুন্দর রাখা উচিত।
সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের আজকের আয়োজন সাজানো হয়েছে কিভাবে ঘরোয়াভাবে পায়ের পরিপূর্ন যত্ন নিবেন এই বিষয়টি নিয়ে। চলুন দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
পায়ের পরিপূর্ন যত্নে কিছু দারুন টিপস
১. পা প্রতিদিন পরিষ্কার করা
পায়েই সবচেয়ে বেশী মৃতকোষ জমে, ধুলাবালি জমে। আর বাইরে থেকে আসলে তো কথাই নেই, পায়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন পা পরিষ্কার করুন। পা পরিষ্কার করতে কুসুম গরম জলে শ্যাম্পু ও লেবু মিশিয়ে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখুন।
তারপর নরম ব্রাশ দিয়ে ঘষে পায়ের ময়লা তুলে ফেলুন। যদি গরম জল না থাকে তাহলে স্বাভাবিক পানিতে শ্যাম্পু মিশিয়ে পা কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখুন, তারপর ব্রাশ বা কাপড় দিয়ে পা ঘষে ময়লা তুলে ফেলুন। এরপর পা শুকিয়ে নিয়ে পায়ে ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন।
২. পায়ের গোড়ালির যত্ন নিন
অনেকেরই পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যা রয়েছে। পায়ের গোড়ালি ফাটা একটি যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। গোড়ালি ফাটা থাকলে পায়ে ধুলাবালি জমে বেশী, পায়ে যন্ত্রণা হয়। এই গোড়ালি ফাটার সমস্যা দূর করতে পা কুসুম জলে ভিজিয়ে ঝামা দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে নিন।
এতে পায়ে জমে থাকা মরা কোষ উঠে যাবে, গোড়ালির চামড়া নরম হবে। এরপর পা মুছে নিয়ে হালকা ভেজা থাকতে গোড়ালিতে ভ্যাসলিন ও গ্লিসারিন লাগিয়ে নিন। পা নরম থাকবে এবং কিছুদিনের ভিতর পা ফাটার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
৩. উজ্জ্বলতা বাড়াতে প্যাক ব্যবহার করুন
পায়ের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কিছু ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। যেমন মসুর ডাল ও টকদইয়ের প্যাক, কলা ও মধুর প্যাক, আলুর রস ও চিনির প্যাক।
এগুলো পায়ের ত্বকের কালচেভাব ও দাগ দূর করে পায়ে উজ্জ্বলতা এনে দেবে। এছাড়া স্নানের আগে পায়ে কাচা হলুদ বাটা ও দুধ একসাথে মিশিয়ে পায়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে পায়ের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
৪. পায়ের নখের যত্ন
পায়ের নখ মোটা হয় এবং অল্পেই ভেঙে যায়। এজন্য প্রতি ১০ দিন অন্তর পেডিকিওর সেট দিয়ে বাড়িতেই নখের যত্ন নিতে হবে। প্রথমে পা কুসুম গরম জলে শ্যাম্পু, লেবু ও লবণ মিশিয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর পায়ের নখের চারপাশ ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে নিন।
এরপর পেডিকিওর সেট থেকে নখ পরিষ্কার করার টুলের সাহায্যে নখের চারপাশে কিউটিকল পরিষ্কার করে নিন। নখ ভেজা থাকতেই নেইল কাটার দিয়ে ইচ্ছামত শেপ এ নখ কেটে নিন। দেখবেন নখ আগের চেয়ে অনেক সুন্দর দেখাবে।
৫. নেইলপলিশ রিমুভ করুন নিয়মিত
অনেকেই পায়ের নখে নেইলপলিশ ব্যবহার করেন। এতে নখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, কিন্তু নখে দীর্ঘদিন নেইলপলিস দিয়ে রাখলে নখ শুষ্ক হয়ে যায়, এবং ভেঙে যায়।
তাই নখের নেইলপলিস ২-৩ দিন পরপর নেইল পলিশ রিমুভার দিয়ে রিমুভ করে নিন। এতে নখ পরিষ্কার থাকবে এবং সহজে ভেঙে ও যাবেনা।
৬. বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন
পায়ে রোদ পড়লে পায়ের চামড়া পুড়ে দাগ হয়ে যায়। তাই বাইরে যাওয়ার আগে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, এতে করে পা পুড়ে কাল হবেনা, এবং পায়ের ময়েশ্চার ঠিক থাকবে।
উপসংহার
পায়ের যত্ন নেওয়া সৌন্দর্যচর্চার অন্যতম অংশ। একটু সময় নিয়ে যত্ন নিলেই পা অন্যান্য অঙ্গের মতই সুন্দর থাকবে, আর পা ফাটা, নখে ছত্রাক জমে যাওয়া, নখ ভেঙে যাওয়া, কালো হয়ে যাওয়ার সমস্যাগুলোও আর থাকবে না। তাই নিয়মিত পায়ের যত্ন নিন, শুধু পা কালো থাকায় সমালোচনার স্বীকার হতে হবেনা তাহলে আর।
আশা করি আজকের পোস্ট থেকে সহজে পায়ের পরিপূর্ণ যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে উপকৃত হয়েছেন। এ বিষয়ে কোন মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।