গুড ফ্রাইডে 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Good Friday 2024: History and Significance

গুড ফ্রাইডে 2024 (Good Friday 2024 Date Time and Significance) 2024 গুড ফ্রাইডে ইতিহাস এবং জানুন গুড ফ্রাইডে কেন পালন করা হয়? গুড ফ্রাইডে তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য গুড ফ্রাইডে গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা আমাদের এই ভারতবর্ষে বসবাস করেন। তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যগত ভাবে বিভিন্ন ধরনের উৎসব অনুষ্ঠান আমাদেরকে অনেক বেশি আনন্দ প্রদান করে। তেমনি খ্রিস্টান ধর্মের গুড ফ্রাইডে উৎসবটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশ্বাস করা হয় যে, প্রভু যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দিনটি ছিল শুক্রবার, সেই অনুসারে প্রভু যিশু নিঃস্বার্থ ভাবে মানবতার জন্য তার জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।

গুড ফ্রাইডে ইতিহাস ও তাৎপর্য - Good Friday History and Significance
গুড ফ্রাইডে 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Good Friday 2024 History and Significance

আর সেই কারণে একে গুড ফ্রাইডে বলা হয়। তবে খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থ অনুসারে তার মৃত্যুর তৃতীয় দিনে যীশু আবার জীবিত হয়ে উঠেছিলেন এবং সেই দিনটি ছিল রবিবার, সেটা কে আবার ইস্টার সানডে হিসেবে সকলেই চেনেন।

প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টান ধর্মের মানুষেরা ইস্টারের আগে শুক্রবারে গুড ফ্রাইডে এই দিবসটি পালন করে থাকেন। তাছাড়া অনেকেই এই দিনটিতে উপবাস রাখেন এবং ব্রত পালন করেন। এই দিনটি খ্রিস্টানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আর এই উৎসবের অন্য নাম হলো হোলি ফ্রাইডে, অনেকে এই দিনটিকে ব্ল্যাক ফ্রাইডে বলেও চিহ্নিত করেন।

ইস্টার সানডে ইতিহাস ও তাৎপর্য

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এই গুড ফ্রাইড এর সম্পর্কিত কিছু তথ্য সম্পর্কে:

গুড ফ্রাইডে এর ইতিহাস 2024:

প্রতিটি উৎসব অনুষ্ঠানের যেমন ইতিহাস রয়েছে তেমনি এই দিনটির ইতিহাস রয়েছে খুবই উল্লেখযোগ্য। বলতে গেলে সেই দিনের কথা উল্লেখ করা হয়, যেই দিনটিতে যীশুর অন্যতম শিষ্য জুডাস এসকারিয়ত যীশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার পর যীশু খ্রীষ্ট কে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছিল। চারিদিকে তখন পাপ এবং অত্যাচারে ভরে গিয়েছিল, তখন যিশু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

2024 গুড ফ্রাইডে শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি

তিনি মানবতা এবং শান্তির বার্তা দিতে শুরু করেন সকলের মধ্যে। ঠিক তখনই ইহুদি ধর্মীয় নেতারা যীশুর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন, তারা তৎকালীন রোমান গভর্নর পিলাত কে বলেছিলেন যীশু কে সাজা দেওয়ার জন্য।

সেই হিসেবে যীশুর বিচার এবং শাস্তি দানের অনুমতি দেওয়া হয় এবং সেই অনুমতি অনুসারে যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রভু যীশুর শিষ্য জুডাস ইসকারিয়ত এর সহযোগিতায় মন্দিরের রক্ষী দল গেতশিমানি উদ্যানে যীশুকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার পুরস্কার স্বরূপ জুডাস কে ৩০ টি রুপার মুদ্রা প্রদান করা হয়েছিল।

পিলাত কে বলে রেখেছিলেন যে তিনি যাকে চুম্বন করবেন তিনিই হবেন যীশু। সেইমতো জুডাস গিয়ে যিশু খ্রীষ্ট কে হালকা চুম্বন করে তাকে চিহ্নিত করে ধরিয়ে দেন। ভালোবাসার মধ্যে দিয়েও যে কাউকে যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে, এটাই হল তার একমাত্র উদাহরণ।

সেই অনুসারে জানা যায় যে, যখন যীশু খ্রীষ্ট কে নির্যাতন করা হয়েছিল তখন তিনি প্রার্থনা করেছিলেন এবং বলেছিলেন, “হে ঈশ্বর ওদের ক্ষমা করে দিন, কারণ ওরা জানে না, যে ওরা কি করছে”। এই কথাটা প্রায় মুখে মুখেই অনেকেই জানেন।

যীশু খ্রীষ্ট প্রায় ছয় ঘন্টা ক্রুসে যন্ত্রণা ভোগ করার পর হঠাৎই সমস্ত অঞ্চলকে অন্ধকার করে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শুরু হয় ভূমিকম্প, সমাধী প্রস্তর গুলি ভেঙ্গে যায় এবং প্রধান গির্জার পর্দা ছেড়ে যায়। যিনি ক্রুশবিদ্ধ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি চিৎকার করে বলে ওঠেন, “উনি সত্যিই ঈশ্বর পুত্র ছিলেন”।

সেই মতো বিশ্বাস করা হয় যে, প্রভু যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দিনটি ছিল শুক্রবার। প্রভু নিঃস্বার্থভাবে মানবতার জন্য তার জীবন বিসর্জন দিয়ে গিয়েছেন তাই একে গুড ফ্রাইডে বলা হয়।

আরিমাথিয়ার জোসেফ যীশুর দেহ পরিষ্কার ক্ষমোবস্ত্রের মোড়ে ক্রুশ বিদ্ধকরণ ক্ষেত্রের থেকে একটু কাছাকাছি একটি বাগানে তার নিজের জন্য নির্মাণ করা প্রস্তর খদিত সমাধি মন্দিরে রেখে দিলেন। নিকদিম এলেন সোয়ামন গন্ধরাজ মেশানো অগুরু নিয়ে। ইহুদি সৎকার প্রথা অনুযায়ী সেগুলি রেখে দেওয়া হল যীশুর দেহের আচ্ছাদন কাপড়ের সাথে। একটি বড় পাথর দিয়ে তারা সেই সমাধীর মুখ বন্ধ করে দিলেন।

সূর্যাস্তের সাথে সাথেই তারা শীঘ্রই ঘরে ফিরে আসেন এবং তৃতীয় দিন রবিবার যিশু আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। তার বেঁচে ওঠা, তার পুনরুত্থানের অলৌকিক ঘটনাটি স্মরণ করার জন্যই পালিত হয় এই উৎসব। তবে পুনরুত্থান পার্বণটি একটি রবিবারে পালন করা হয়, যার নাম আমরা সকলেই জানলাম যে পূন্য রবিবার অথবা ইস্টার সানডে

গুড ফ্রাইডে ইতিহাস ও তাৎপর্য

গুড ফ্রাইডে এর তাৎপর্য 2024:

  • গুড ফ্রাইডে হল এমন একটি দিন, যে দিনে ভক্তরা যিশুখ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধকরণ ও মৃত্যুদিন হিসেবে পালন করে থাকেন।
  • আবার অনেক খ্রিস্টানরা এই দিনে উপবাস করে থাকেন এবং বিভিন্ন রকম সামাজিক সেবা কাজে অংশগ্রহণ করেন।
  • এই দিন তারা তাদের পবিত্র জায়গা চার্চ অথবা গির্জাতে যান প্রার্থনা করার জন্য।
  • প্রয়োজনীয় রীতি গুলি পালন করে থাকেন।
  • যিশুখ্রিস্টের শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই বিশেষ দিনে ভক্তরা মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলেন।
  • আবার অনেকে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণ এর উদ্দেশ্যে মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকেন ঘরে এবং গির্জায়।
  • এই দিনে বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টান গির্জাগুলিতে সামাজিক কাজের জন্য অনুদান দেওয়া হয়।
  • গুড ফ্রাইডে এর এই বিশেষ দিনে খ্রিস্টান ধর্মের অনুগামীরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ত্যাগ ও বলিদান এর কথা স্মরণ করতে গির্জায় যান প্রার্থনা করেন এবং তারা যিশু খ্রীষ্টের প্রতীক ক্রস কে চুম্বন করেন এবং ধন্যবাদ জানান।

ক্রিসমাস ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়?

বেদনাদায়ক এই দিনটিকে “গুড” ফ্রাইডে কেন বলা হয় ?

তবে এক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন অবশ্যই থেকে যায় যে, দিনটির সঙ্গে এমন বেদনাদায়ক ইতিহাস জড়িত থাকা সত্ত্বেও একে কেন গুড ফ্রাইডে বলা হয়। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এটি আসলে গডস ফ্রাইডে। অন্যদিকে অনেকেই মনে করেন যে এই ক্ষেত্রে গুড শব্দটির অর্থ হলো হোলি অথবা পবিত্র। এই দিনটি পবিত্র শুক্রবার হিসেবেও পরিচিত। সেই কারণে এদিন যীশুর শেষ ৭ টি বাক্যকে স্মরণ করা হয়ে থাকে।

তাছাড়া জানা যায় যে, পবিত্র শুক্রবারের তৃতীয় দিনে যীশু খ্রীষ্ট আবার পুনরুজ্জীবিত হন। দিনটি ছিল রবিবার, এরপর ৪০ দিন পর্যন্ত তিনি সকলকে উপদেশ দিয়ে যান। যীশুর পুনরজীবনের ঘটনাটি ইস্টার রবিবার হিসেবে পালিত হয়ে থাকে অর্থাৎ ইস্টার সানডে। এদিন সকালে প্রার্থনা করা হয়, একে আবার সানরাইজ সার্ভিসও বলা হয়।

যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন সত্যিই ঈশ্বর পুত্র এবং সত্য, জয়ের বাণী প্রচার করে পবিত্র শুক্রবারের দিনটি মানুষের পাপের ফল ভোগ করে যীশুর আত্মত্যাগ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তার মনে সকলের প্রতি অসীম ভালোবাসা ছিল। এই দিনটি যীশুর আত্ম বলিদান কে স্মরণ করার জন্য খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা খুবই ভক্তির সাথে কাটিয়ে থাকেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top