করোনা প্রতিরোধ করতে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন

পুরো বিশ্ব এখন করোনা মহামারীর ভয়ে প্রকম্পিত। আমাদের সবার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয়েছে স্থবির, বন্ধ হয়েছে আমাদের স্বাভাবিক চলাফেরা। বর্তমানে যদিও বিভিন্ন সেক্টর একে একে লকডাউনমুক্ত হয়েছে, কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার ভয় কাটেনি।

করোনার ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে সবদেশে এখন ভ্যাক্সিন দেওয়ার কাজ চলছে। এর ভিতর আমাদের নিজেদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু রাখতে এবং যারা ভ্যাক্সিন নিচ্ছেন না তাদের করোনা প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে অবশ্যই কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত।

যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী তারা সহজে করোনায় আক্রান্ত হবেন না। তাদের করোনা হলেও সহজেই সেরে উঠবেন। আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস এবং খাদ্যাভ্যাস এর উপরেই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সুস্থ থাকা নির্ভর করে। আমরা যদি নিজেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি করোনার ভ্যাক্সিন না নেওয়া থাকলেও করোনা থেকে বেচে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে। যদিও সারাদেশে ব্যাপক প্রচারের ফলে আমরা অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অনেকটাই জানি। কিন্তু দীর্ঘকাল কোন নিয়মের মধ্যে থাকা আমরা কেউই পছন্দ করিনা।

কিন্তু কিছু সাধারন অভ্যাস যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। আসুন জেনে নেয়া যাক কি কি স্বাস্থ্যবিধি আমাদের মেনে চলা উচিত।

করোনা প্রতিরোধ করতে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন

 

১. প্রতিদিন ভিটামিন সি খান

করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে ভিটামিন সি যুক্ত ফল। ভিটামিন সি করোনা প্রতিরোধে সক্ষম। এজন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন ভিটামিন সি যুক্ত ফল ও সবজি। যেমন গাজর, পেয়ারা, আমলকী, লেবু, জাম্বুরা,  কমলালেবু, মাল্টা ইত্যাদি।

ফল খাওয়া অনেকেরই অপছন্দ।  কিন্তু নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সেটা বিভিন্ন উপায়ে হতে পারে। যেমন ভাতের সাথে লেবু খাওয়া বাঙালির অভ্যাস, তেমনি রিচফুডের সাথে সালাদ খান।

তাতে ভিটামিন সি যুক্ত ফলগুলো টকদই এর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। তাতে হজম ভাল হবে, সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। দুইবেলার খাবারে রাখুন সবুজ শাক সব্জি। প্রতিদিন সন্ধ্যার জলখাবারে রাখুন কোন না কোন ভিটামিন সি যুক্ত ফল।

ভিটামিন সি এর নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। এটা আপনার ত্বক সুন্দর ও মসৃন রাখতে সাহায্য করবে। বয়সের ছাপ পড়বে না সহজে। এছাড়া আমলকি ও লেবু খাবারের রুচি বাড়াবে এবং চুল সুন্দর রাখবে। আপনার এগুলো কাচা খেতে সমস্যা হলে ব্লেন্ডারে জুস করেও খেতে পারেন।

২. ভেষজ উপাদান রাখুন খাদ্য তালিকায়

করোনার ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন ভেষজ উপাদানের কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। খাদ্য তালিকায় নিয়মিত আদা,  লবংগ, তেজপাতা, এবং তুলসিপাতা রাখুন। এগুলো আপনি কুচিকুচি করে কেটে একটু লবন মিশিয়ে খেতে পারেন।

এভাবে খেতে সমস্যা হলে, আদা খেতে পারেন গুড়ের সাথে। তেজপাতা ও লবংগ চায়ের সাথে খেতে পারেন। তুলসিপাতা ও চায়ের সাথে অথবা পাটায় বেটে রশুন, ঝাল সহকারে ভর্তা আকারে খেতে পারেন। তাতে মুখের রুচি যেমন বদল হবে তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

৩. গরম খাবার খাওয়ার অভ্যাস

অধিক তাপে করোনা ভাইরাসের বিস্তার বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলুন আর গরম খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। যেমন সারাদিনে লেবু, তুলসি, তেজপাতা, বা আদা দেওয়া চা খেতে পারেন অন্তত চারবার। এ

তে শরীর যেমন চনমনে থাকবে তেমনি বিভিন্ন ভেষজ উপাদান করোনার ভাইরাস প্রতিরোধে সাহায্য করবে। খাবার কখনো ঠান্ডা বা বাসি খাবেন না। ওভেন বা উনুনে গরম করে নিন। বাসি খাবারে রোগজীবাণু বেশি থাকে।

৪. গরম জলের ভাপ নিন

আমরা যেহেতু দীর্ঘদিন কোন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনীহা প্রকাশ করে থাকি, তাই আমাদের সব কাজের কিছু বিকল্প উপকারিতা খুঁজে দেখা দরকার। ঠান্ডা লাগায় এবং করোনা থেকে মুক্তি পেতে গরম জলের ভাপ নেওয়া খুবই উপকারী। কিন্তু ঠান্ডায় গলা বসে না গেলে আমরা কেউই এটা করতে আগ্রহী হইনা।

কিন্তু আমাদের ত্বকের লোমকূপে যে ময়লা থাকে তা দূর করতে, ওপেন পোরস, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস দূর করতে গরম জলের ভাপ নেওয়া উচিত। সপ্তাহে একদিন ১০-১৫ মিনিট গরম জলের ভাপ নিন। এতে ঠান্ডা-কাশি, গলাব্যথার সাথে করোনার ভাইরাস থেকেও মুক্ত থাকবেন।

৫. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে গুরুত্ব দিন

আমরা সবাই জানি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাটা কত জরুরী, অথচ আমরা সেই বিষয়ে প্রায়ই উদাসীনতা দেখাই। যেমন বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ না ধুয়েই অনেকে ফোন চেক করা শুরু করেন, ব্যস্ততার জন্য রোজ স্নান করেন না, পোশাক প্রতিদিন পরিষ্কার করেন না, বাসা ধোয়ামোছার কাজে যে জল ব্যবহার করা হয় তাতে জীবানুনাশক ব্যবহারের কথাও আমরা ভুলে যাই।

এগুলো কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে হলে এই বিধিগুলো মেনে চলুন, সুস্থ থাকুন।

৬. মাস্ক ব্যবহার করুন

এটা আমরা সকলেই জানি, কিন্তু মেনে চলতে সবারই কষ্ট হয়। এটা মাথায় রাখুন মাস্ক শুধু করোনার ভাইরাসই দূর করেনা।এটা বাইরের ধুলাবালি থেকেও ত্বক ও শ্বাসযন্ত্রকে রক্ষা করে।

৭. স্যানিটাইজার ও টিস্যু

বাইরে যাওয়ার সময় সাথে স্যানিটাইজার রাখুন। যখন তখন হাত ধোওয়ার জল না পেলে বা হাত নোংরা হয়েছে মনে হলে এভাবে হাত পরিষ্কার করে নিন। টিস্যু রাখুন হাত-মুখ পরিষ্কার রাখতে এবং হাচি দেওয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করুন।

উপসংহার

সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই করোনাসহ যেকোন রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এগুলো আপনার অন্যান্য স্বাস্থ্যসমস্যা দূর করতেও সাহায্য করবে, পাশাপাশি করোনার মত মহামারী প্রতিরোধেও কাজে আসবে।

প্রিয় পাঠক আশা করি এই মহামারীকালীন সময়ে পোস্টটি আপনাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা অবশ্যই আপনাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top