এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (Enforcement Directorate) আসলে কি? এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট কিভাবে কাজ করে? কিছু বেআইনি হলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট কিভাবে রেড করে? জানুন ED সম্পর্কে সবকিছু।
দেশের বিভিন্ন রকম খবরা খবর পাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের টিভি চ্যানেল, খবরের কাগজ, এর উপরে নির্ভর করে থাকি। তেমনি প্রতিনিয়ত টিভি চ্যানেলে যে খবরগুলি দেখে থাকবেন, সেখানে কোন হাইপ্রোফাইল কেস তে ই ডি (ED) এর নাম করা হয়।
এই ইডি ভারত সরকারের বিত্তিও মন্ত্রণালয় এর রাজ্য বিভাগের অধীনে বিশেষ বিত্তীয় অনুসন্ধান এজেন্সি যা কিনা ভারতের বিদেশি সম্পত্তির মামলা, ধন শোধন, আয় থেকে অধিক পরিমাণের সম্পত্তি এর অনুসন্ধান আর জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকে এই ই ডি (ED)।
তবে অনেকেই কিন্তু এই ইডি সম্পর্কে জানেন না বললেই চলে, তো চলুন তাহলে আজকের এই লেখাতে ই ডি (ED) সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানা যাক। এই ইডি আসলে কি ? এর অধিকার কি ? কিভাবে কাজ করে ?
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) আসলে কি?
সাধারণত এই ইডি হল এক প্রকারের অনুসন্ধানকারী এজেন্সি যা কিনা ভারত সরকারের বিত্তিয় মন্ত্রণালয় এর রাজস্ব বিভাগের অধীনে কাজ করে থাকে। এছাড়া বিশেষভাবে ই ডি (Directorate of Enforcement) এর কাজ হল ভারতে বিদেশের সাথে জড়িত সম্পত্তির মামলাতে আর অন্যান্য ভাবে উপার্জিত সম্পত্তি অনুসন্ধান করে থাকে।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
এদের অন্তর্গত যে অধিকারী কাজ করে থাকেন তাদের নির্বাচন আই এ এস (IAS), আইপিএস (IPS) ইত্যাদি রাঙ্ক এর আধারের উপরে নির্ণয় করা হয়। হাই প্রোফাইল মামলার ক্ষেত্রে এই ই ডি অনুসন্ধানের কাজ করে থাকে।
ই ডি এর ফুল ফর্ম হল ডিরেক্টরেট অফ ইনফোর্সমেন্ট (Directorate of Enforcement) অর্থাৎ প্রবর্তন নির্দেশালয়। এটি একটি এমন ইন্টেলিজেন্ট এজেন্সি যা আমাদের দেশে ধন সম্পত্তি সম্বন্ধিত অপরাধের উপরে নজর রাখে, আর মানি লন্ড্রিইং মামলার ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করে থাকে অথবা চেক করে থাকে।
যে কোনো ধরনের আর্থিক টানা পোড়েনের পরিস্থিতিতে ED তাদের দায়িত্ব অনুসারে সঠিকভাবে সেই মামলার অনুসন্ধান করে থাকে। আর্থিক রূপে আইন জারি করার ক্ষমতা ও ইডির কাছে রয়েছে। যে ক্ষমতার বলে যে কোন আর্থিক ঝামেলা অথবা সমস্যার সঠিক অনুসন্ধান করে আইনিভাবে তার সমাধান করতে পারে।
ED এর স্থাপনা হয়েছিল ১৯৫৬ সালে ১ মে, বর্তমান সময়ে এডি ফেরা ১৯৭৩ আর ফেমা ১৯৯৯ এর অন্তর্গত কাজ করে। এর পাঁচটি প্রধান কার্যালয় যা কিনা চেন্নাই, চন্ডিগড়, মুম্বাই, দিল্লি আর কলকাতাতে অবস্থিত।
ই ডি (ED) এর অধিকার কি?
আমরা আগেই জেনেছি যে, টাকা পয়সা বিষয়ক কোন পরিস্থিতির অনুসন্ধান ও চেক করার অধিকার রয়েছে ED এর কাছে। ভারত সরকার এর সমস্ত ধরনের আর্থিক অনুসন্ধান করার ক্ষমতা রাখে।
এছাড়াও সরকার ED কে বিদেশী মুদ্রা অধীনিয়ম অনুসারে নিয়ম লন্ডন করার ক্ষেত্রে সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করার জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। সরকার দ্বারা ই ডি এর কিছু অধিকার প্রাপ্ত আছে। যেগুলি নিচে দেওয়া হল:-
১) বিদেশে যে কোনো সম্পত্তির উপরে অ্যাকশান নিয়ে সেই বিষয়কে থামিয়ে দেওয়ার অধিকার ই ডির কাছে রয়েছে।
২) মানি লানড্রিং এর এর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, তাদের গ্রেপ্তার করা, আর সেই সম্পত্তির সঠিক অনুসন্ধান করার অধিকার ও ED এর কাছে রয়েছে।
৩) তাছাড়া টাকা পয়সার দিক থেকে দেশের মধ্যে কোন বেআইনি কার্যকলাপ হলে, তাছাড়া এই বে-আইনি কার্যকলাপের উপরে অ্যাকশান নেওয়ার অধিকার ও কিন্তু ইডি (ED) পেয়েছে।
ই ডি (ED) কিভাবে কাজ করে?
এর প্রধান কাজ হল ফেমা এর প্রাবধান এর নিয়মগুলি লংঘন করার অনুসন্ধান করে থাকে, এছাড়াও ED এর বিভিন্ন প্রধান কাজ যেখানে লেনদেন এর সম্পর্কিত মামলা, ফরেন এক্সচেঞ্জ এর সাথে জড়িত মামলা গুলির অনুসন্ধান করে থাকে, যেগুলি ই ডির প্রধান কাজ।
ED এর ১০ টি জেনারেল কার্যালয় রয়েছে যার মধ্যে প্রত্যেকটি তে একটি উপনির্দেশক আর ১১ টি উপ ক্ষেত্রীয় কার্যালয় রয়েছে।
১) উপার্জন অথবা আয় অনুসারে সম্পত্তির পরিমাণ যদি বেশি হয়ে থাকে:
যদি এইভাবে এই বিষয়টি কোন ব্যক্তি দ্বারা বাস্তবায়িত করা হয়, অর্থাৎ সেই ব্যক্তির উপার্জন অথবা আয় অনুসারে তার সম্পত্তির পরিমাণ অধিক পরিমাণে থেকে থাকে, তাহলে সেই বিষয়ের উপরে ই ডি তাদের কাজ শুরু করে দেয়। বলা যেতে পারে অনুসন্ধান করার মধ্যে দিয়ে সত্যিটা প্রমাণিত করে ছাড়ে।
২) লেনদেন:
অর্থাৎ সম্পত্তির লেনদেন এর চেক করে থাকে আর এই ইডি দ্বারা এনকোয়ারি করার পর ব্যক্তির লেনদেনের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হয়।
৩) বিদেশী সম্পত্তি কেনা:
যদি কোন ব্যক্তি বিদেশে কোন রকমের সম্পত্তি কিনে থাকেন তাহলে ED সে ক্ষেত্রেও কিন্তু তার কাজ করে থাকে।
৪) অধিক পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করে রাখা:
যদি কোন ব্যক্তি খুবই অধিক পরিমাণে বিদেশী মুদ্রা নিজের কাছে জমা করে রাখেন, তো সে ক্ষেত্রেও ইডি তাদের কার্যকলাপ জারি রাখে অনুসন্ধান করার মধ্যে দিয়ে।
৫) বিদেশি মুদ্রার অবৈধ ব্যবসা:
যদি কোন ব্যক্তি বিদেশী মুদ্রার অবৈধ ব্যবসা শুরু করে দেন, যে ক্ষেত্রে কোন রকম অনুমতি দেওয়া হয়নি, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ইডি কিন্তু চেক করতে ভোলে না।
৬) সম্পত্তি দখল করে রাখা:
ইডি এর কাছে ফেমা লংঘন করা অনুসারে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের সম্পত্তি দখল করে নেওয়ার অধিকারও কিন্তু রয়েছে।
ইডি (ED) এর গুরুত্ব কি?
ইডি এর গুরুত্ব সম্পূর্ণ দেশে খুবই জনপ্রিয়, কেননা ED তাদের অধিকারের কারণে সরকার আর্থিক বিষয়ক আইন কানুনের দায়িত্বভার তাদের উপরে দিয়ে রেখেছে। যাতে সমগ্র দেশে সম্পূর্ণ রূপে আইনি কার্যকলাপ আর নিয়ম পালন করা হয়ে থাকে।
ইডি দেশ অথবা বিদেশে যেকোনো ধরনের সম্পত্তি দ্বারা হওয়া প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য, দোষী ব্যক্তিদের উচিত শাস্তি দেওয়ার জন্য, বিশেষভাবে কাজ করে থাকে। আর এটাই হলো কারণ ভারত সরকার বিত্তীয় মন্ত্রণালয় আর রাজস্ব বিভাগ অনুসারে প্রবর্তন নির্দেশালয় কে গুরুত্বপূর্ণ আর সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে রেখেছে।
ইডি এর ক্ষেত্রীয় কার্যালয় কোথায় কোথায় আছে (Regional Office of ED)?
- কোলকাতা
- পাটনা
- গুয়াহাটি
- বেঙ্গালুরু
- চন্ডিগড়
- জয়পুর
- পঞ্জি
- মুম্বাই
- আমেদাবাদ
- জলন্ধর
- লখনৌ
- শ্রীনগর
- দিল্লি
- হায়দ্রাবাদ
ইডি (ED) কিসের অনুসন্ধান অথবা চেক করে থাকে?
আইন সবার জন্য সমান সেটা আমরা সকলেই জানি। আর সেই কারণে বিশেষভাবে টাকা-পয়সার বিষয়ে হওয়া সমস্ত ঝামেলা ও সমস্যার জন্য ED পাঁচটি বিষয়ের উপরে কাজ করে থাকে, যেগুলি হল অখন্ডতা, জবাবদিহি, প্রতিবদ্ধতা, উৎকৃষ্টতা এবং নিষ্পক্ষতা।
দেশে বে-আইনি কাজ এর উপরে ই ডি তাদের অধিকার প্রয়োগ করে থাকে। এছাড়াও আর্থিকভাবে দেশকে সুরক্ষিত রাখাও কিন্তু ED এর কাজের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মনে করা হয়।
এছাড়া সর্বশেষ বলা যায় যে, একটি দেশে ইডি ডিপার্টমেন্ট সুরক্ষা কবজ এর মত কাজ করে থাকে। যা কিনা ভারত সরকার এর বৃত্তীয় মন্ত্রণালয় এর রাজস্ব বিভাগের অধীনে কাজ করে থাকে। তাছাড়া উপার্জন অনুসারে সেই উপার্জনের হিসেব দিতে হয়, আর সেই অনুসারে কিন্তু সম্পত্তি থাকাটা আইনত বৈধ। তবে যারা উপার্জন অনুসারে সম্পত্তির পরিমাণ বেশি করে রেখেছেন তাদের জন্য ই ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাহলে বুঝতেই পারছেন যে, অবৈধভাবে টাকা-পয়সার লেনদেন, বেআইনী কার্যকলাপ এর উপরে ইতি টানার জন্য ই ডি (ED) খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তার সাথে সাথে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়াও হয়ে যায়, যার ফলে দেশ সুরক্ষিত থাকতে পারে।